প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। আনন্দটা যদি হয় ফিফা বিশ্বকাপে দেশের হয়ে প্রথম গোল করার তাহলে সেই আনন্দ পরিমাপযোগ্য নয়। আলফোনসো দাভিয়েস হয়তো এমন একটি দিনেরই অপেক্ষায় ছিলেন। বিশ্বকাপে তার নামেই ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায় যুক্ত হলো। কানাডার হয়ে প্রথম গোল করা ফুটবলার যে তিনিই।
২০১৭ সালে কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার পর থেকে মাথায় একটাই চিন্তা, ফিফা বিশ্বকাপ। বায়ার্ন মিউনিখের এ উইঙ্গার কানাডা ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকা। ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপে ফিরে কানাডা নিজেদের প্রথম ম্যাচে তেমন কিছুই করতে পারেনি। নিষ্প্রভ ছিলেন দাভিয়েসও। বেলজিয়ামের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে যাওয়া ম্যাচে দাভিয়েসের পেনাল্টি মিস করার ঘটনাও ঘটেছে।
তবে রোববার মাঠে নেমেই ক্রোয়েশিয়াকে ধাক্কা দিয়ে দেয় ৮৬’র পর বিশ্বকাপে ফেরা কানাডা। দাভিয়েসের অসাধারণ গোলে ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই কানাডার লিড। ডানপ্রান্ত থেকে বুছানারের দারুণ ক্রসে ডি বক্সের ভেতরে ফাঁকায় বল পেয়ে হেড দেন দাভিয়েস। চোখের পলকেই বল ক্রোয়েশিয়ার জালে।
লুকা মদ্রিচের হাতে ক্রোয়েশিার আর্মব্যান্ড। রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট তারা। পেরিসিচ, লিভাকোভিচরা বিশ্বকাপের প্রতিটি মুহূর্তের ওজন জানেন। তাইতো হারের আগেই হারবেন না তারা। পিছিয়ে পড়েও কিভাবে জিততে হয় তা বোঝেন। সেই জানা মতোই ক্রোয়েটদের মাঠের লড়াই। শুরুর ধাক্কা সামলে নিয়ে প্রতি আক্রমণে কানাডাকে স্রেফ এলোমেলো করে দেন ক্রোয়েটরা। প্রথমার্ধে দুই গোল দেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে ফিরেও ব্যবধান দ্বিগুন করে।
৪-১ গোলে ক্রোয়েশিয়ার বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের দিনে কানাডার দেশে ফেরার রিটার্ন টিকিটও নিশ্চিত হয়ে গেছে। বেলজিয়ামের কাছে ১-০ গোলে হারের পর ক্রোয়েশিয়ার কাছে হার। শেষ ম্যাচ মরক্কোর সঙ্গে শুধুই ড্রেস রিহার্সেল।
ম্যাচে চোখ জুড়োনো গোল হয়নি তবে প্লেসিং ফুটবলের আসল সংজ্ঞা দিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলাররা। নিখুঁত পাস, ফাঁকা জায়গায় আঁটসাঁট প্লেসিং, মাঠ বড় করে ছোট বড় পাসে আক্রমণে যাওয়া, সবশেষে দারুণ ফিনিশিং। এ যেন ছক কাটা পরিকল্পনায় মাঠে নেমে সব বাস্তবায়ন।
৩৬ মিনিটে আন্দ্রেজ ক্রামারিচ দলকে সমতায় ফেরান। পেরিচিচের বাড়ানো পাসে ডি বক্সের ভেতর থেকে আলতো টোকায় বল জালে পাঠান ক্রামারিচ। মিনিট দশেক আগে ভাজা গোল করে ক্রোয়েশিয়াকে এগিয়ে দিলেও তা অফসাইডের কারণে বাতিল হয়। অবশ্য সমতায় ফেরার পর ক্রোয়েশিয়া আত্মবিশ্বাসে গতি পায়। সেই গতিতেই বিরতিতে যাওয়ার আগে মার্কো লিভাজা গোল করে দলকে লিড এনে দেন।
বিরতি থেকে ফিরে জলাটকো ডালিচের শিষ্যরা নতুন উদ্যোম ফিরে পায়। প্রথমার্ধের থেকেও এবার তারা আরও বেশি আক্রমণাত্মক, গোলের ক্ষুধা যেন আরো বেড়ে গিয়েছিল। মুহুর্মুহু আক্রমণে কানাডার রক্ষণের পরীক্ষা নেন তারা। তাতে কানাডা ভাগ্য পরীক্ষায় বেশ কায়েকবারই বেঁচে যায়। কিন্তু ক্রোয়েশিয়া দুটি গোল ঠিকই আদায় করে নেয়।
ম্যাচের ৭০ মিনিটে ক্রামারিচ দলের হয়ে তৃতীয় ও নিজের দ্বিতীয় গোল করেন। ৯৪ মিনিটে ডি বক্সের ভেতরে সহজতম গোলটি করেন মাজের। ক্রোয়েশিয়ার গোল সংখ্যা আরো বাড়তে পারত। কানাডার গোলরক্ষক মিলান বোরজান ১০ শটের ৬টিই ফিরিয়েছেন। নয়তো গোল সংখ্যা কত হতো একবার চিন্তা করেই দেখুন।
আলফোনসো দাভিয়েসের শুরুর হাসি শেষ পর্যন্ত টিকেনি। কিন্তু একমাত্র গোলটি করে ইতিহাসের অক্ষয় কালিতে নিজের নাম তুলে নিয়েছেন ২২ বছর বয়সী ফুটবলার। ২০২৬ বিশ্বকাপ আয়োজক হিসেবে সরাসরি খেলবে কানাডা। সেবার নিশ্চয়ই গ্রুপ পর্বের বাধা টপকে যেতে চাইবেন তারা।