পরিকল্পিত নগরায়নের লক্ষ্যে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের সিএন্ডবি সড়কের বুক চিরে গড়ে উঠেছিল ফোরলেন। দীর্ঘ ৪ কিলোমিটারের এ মহাসড়কটি নিয়ে সাধারণ মানুষের আকাঙ্খাও ছিল বেশ। এজন্য বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) তৎকালীন পরিষদ ব্যয় করেছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যয়বহুল সেই ফোর লেন কোন কাজেই আসছে না নগরবাসীর।
কথাছিল ফোর লেনের বর্ধিত দুই পাশের লেনে চলাচল করবে হালকা বা ছোট যানবাহন। আর মূল সড়কে চলবে ভারী বা দূরপাল্লার যান। কিন্তু কথা অনুযায়ী হচ্ছে না কাজ। মূল সড়কেই চলছে সব ধরনের যানবাহন। আর ফাঁকা থেকে যাচ্ছে বাকী দুই লেন। হালকা যানবাহন অর্থাৎ অটোরিকশা, থ্রি-হুইলার এবং রিকশা চালকরা বলছেন, দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে একেবারেই চলাচল অনুপযোগী হয়ে আছে দুটি লেন।
ভাঙাচোরা সড়কে যানবাহন চলাচলে অসস্তি, দুর্ঘটনা আর যানবাহনের ক্ষতির ভয়ে মূল সড়কই ব্যবহার করতে হচ্ছে ছোটযান চলাচলে। মহাসড়কে এসব ছোটযান চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। আর বরিশাল সিটি কর্পোরেশন বলছে, খুব দ্রুতই ফোরলেন সড়কের সমস্যা সমাধানে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন তারা।
জানাগেছে, ২০১১-১২ অর্থ বছরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের আমতলার মোড় থেকে কাশিপুর সুরভী পেট্রোলপাম্প পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়ক ফোর লেনে উন্নীত করা হয়। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছিল ২৫ কোটি টাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফোর লেনের কালু খাঁ সড়ক সংলগ্ন সিএন্ডবি ১ নম্বর পুল (দরগাবাড়ি সড়ক সংলগ্ন), সদর উপজেলা পরিষদের বিপরীতে, টিটিসির সামনের অংশ, টেক্সটাইল কলেজের সামনের অংশ, সুরভী পাম্প এলাকা এবং কলেজ রোডের সংযোগ মুখের বিভিন্ন অংশ খানাখন্দে ভরে গেছে।
একটু বৃষ্টি হলেই জমে থাকে পানি। তাছাড়া নগরীর নথুল্লাবাদ অংশে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড, পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন সড়কে বাস এবং মালবাহী ট্রাক রেখে রাস্তা আটকে রাখা হচ্ছে। এছাড়া ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের মালামাল রাস্তায় নামিয়ে ও বড় যানবাহন প্রবেশ করিয়ে রাস্তা আটকে দিচ্ছে।
আর এ নিয়ে ক্ষুব্ধ চালকরাও। ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক নোমান বলেন, সিএন্ডবি রোড ফোর লেনের সড়ক বলা ঠিকনা। দুই পাশের রাস্তার যা অবস্থা তাতে গাড়ি চালানো সম্ভব না। অনেক সময় পুলিশ মামলা দেবে এই ভয়ে সেখান থেকে বাধ্য হয়ে যেতে হয়।
রিকশা চালক কাদের মিয়া বলেন, পাশের দুই লেনে চালাতে গেলে আমাদের গাড়ির বারোটা বেজে যায়। লোহা-লক্কর সব খুলে পড়ে যায়। গাড়ি উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। যাত্রীরাও অসন্তষ হয়। তাই বাধ্য হয়েই রিক্সা নিয়ে মূল সড়কে উঠে যাই।
তবে পুলিশ দেখলে কিছু সময়ের জন্য ভাড়াচোরা রাস্তাতেই চালাই। স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষক আবদুল হক বলেন, আর কয়েকদিন পর পদ্মাসেতু চালু হবে। সেই সময়ে আমাদের এই সড়কে যানবাহনের আরো চাপ বাড়বে। তার আগেই বিকল্প ও কেটসই সড়ক প্রয়োজন। না হলে দুর্ঘটনার পাশাপাশি সড়কের অবস্থা আরও বেহাল হয়ে যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘ইতঃপূর্বে নগরীর ফোরলেন সড়কে যানবাহন চলাচলের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। ট্রাফিক বিভাগের তদারকিতে নথুল্লাবাদ থেকে কালুশাহ সড়ক পর্যন্ত সড়কের পয়েন্টে পয়েন্টে পুলিশ সদস্যদের দাঁড় করিয়ে মূল সড়কের পাশের দুই লেনে যানবাহন চলাচলে বাধ্য করা হয়।
এখনও সেই কার্যক্রম কোন কোন অংশে চলমান রয়েছে। পাশাপাশি সড়কের পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা এবং দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করেন তারা। কিন্তু এর পরেও যানবাহন চালকরা ওই সড়ক ব্যবহারে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, ‘রাস্তা খারাপ হলে সেখানে গাড়ি চলবে কিভাবে। খারাপ রাস্তায় গাড়ি না চালালে আমাদেরও বা কি করার আছে। সড়ক উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ আছে, সিটি কর্পোরেশন আছে। তারা সংস্কারের উদ্যোগ নিলে ফোরলেন যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা যাবে।
এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ বলেন, ‘নগরীর সকল সড়কের উন্নয়ন হচ্ছে। ফোরলেনের বিষয়ে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র সাথে কথা হয়েছে।
তিনি দ্রুতই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। তাই আমরা বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তহবিল থেকে রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তাছাড়া যারা ফোরলেন দখল করে যানবাহন রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।