কাজী নেওয়াজঃ মূর্ছনা এর ঘুমঘুম ভাব কেটে গেল।ঘরের বারান্দার বাশের খুটির সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে।জেগে থাকে প্রতিরাতে। প্রকৃতির সাথে নিবীড় সম্পর্কের তৈরি হয়। শেষদিনগুলো নাকি প্রকৃতির সাথেই থাকতে হবে। মূর্ছনা এবার আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসছে।
সারা পৃথিবীর পুরুষ জাতির চোখ যখন নারীর দেহের সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে।সেই সৌন্দর্যময় ফুল ফোটর আগেই যদি অঙ্কুরিত না করে ছিড়ে ফেলে।তাহলে সেই লালসার দৃস্টিতে ফুল তার সুভাস হারায় আর নারীর মযার্দা ধুলায় মিশিয়ে ঐ কামুক নিজেকে কাপুরুষ প্রমান করে।
সে পুরুষ জাত কি ভুলে যায় মূর্ছনা কারো মেয়ে কারো বোন। কারো বউ হবে? কি অদ্ভুত নিয়ম! সারারাত জোড় করে পাষন্ড নির্যাতন করল। সারা শরীর জুড়ে যে ঘেন্না জন্মালো তারপরও কেলেঙ্কিনী হলো সেই নারী। ছি! মূর্ছনা বিড়ি টানে বিড়বিড় করে কথা কয়। নিজের স্বাধীনতা খোজে। কত বছর হয়ে গেল! সেই রাতের কথা মনে উঠলে নিজেরে আর ঠিক রাখতে পারেনা।
আজ থেকে আটচল্লিশ বছর আগে ভরা যৌবন নিয়ে অপেক্ষায় ছিলো একজনার সাথে ঘর বাধবে।কিন্তু পাশের বাড়ির রশিদ মাতুববর তার সর্বনাশ করে দিল। যুদ্ধ গেল দেশ স্বাধীন হল।কিন্তু মূর্ছনা পরাধীন হয়ে গেল।মূর্ছনা অর্ধ শিক্ষীত মেয়ে।একা থাকার সাহস দেখিয়ে বাপ ভাইকে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করল। সেই পছন্দের প্রিয় মানুষটিকেও যুদ্ধে যেতে বল্ল।
বাপ ভাই গ্রাম থেকে পালিয়ে গেল যুদ্ধে করার জন্য।চাচা চাচির সাথে থাকতো।মূর্ছনা মিলিটারির ভয়ে গ্রাম থেকে পালিয়ে চলে যাবে ঠিক তখনই রশিদের শেয়াল চালাকির কাছে ধরা পড়ে নিজেই পাপিস্ট হয়ে কলঙ্কিনী হয়ে যায়।সেইদিনের কলঙ্ক নিয়া জীবনের এতগুলো বছর পার করল।সেই ভয়ার্ত দিনটি তার জীবনে আসবে তা কোনদিন ভাবেনি।রশিদ তাকে নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে যাবার কথা বলে যে সারাজীবনের মত নিঃস করে ফেলবে তাকে তা বুজতে পারেনি। ঘরে বউ আছে সন্তান আছে তার।এমন নেক্কারজনক কাজ করল যে কারনে সারাজীবন চাপা কস্ট নিয়ে মূর্ছনার বেঁচে থাকতে হল।ঘটনাটি কাউকে বলেনি।দুএকজন জানলেও রসিদের পক্ষেই সাফাই গায়।বাপ ভাই যুদ্ধ থেকে আর ফিরে এলোনা।
পছন্দের প্রিয় মানুষটিও এলোনা।এরপর মূর্ছনার মাথায় গন্ডগোল দেখা দিল। পাগল বেশে থাকতো।মাথা ঠিক হলে কখনো ঝি এর কাজ করতো। এখন বয়স হইছে দেহ চলেনা। বাপের ভিটাতেই থাকে।শেষ রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে আকাশের যে রুপ ছিলো তেমনই আছে। মাইনষের রুপ বদলায় সেই রুপে যদি কারো দৃস্টি পড়ে তাইলে সারাজীবন ভোগা লাগে। যেমন আমি। অন্ধকারে জোছনার আলোয় নিজের হাতখানা বাড়িয়ে দিল প্রকৃতির কাছে। মনে মনে বলে “নে খা”। প্রকৃতির উষ্ণ হাওয়ায় সুখ অনুভব করলো। রশিদ মারা গেছে। আজ রাতে তাকে দাফন করলো।এত বছর পর মূর্ছনা আজ তার নিজেকে প্রশ্ন করল মানুষের স্বাধীনতা ফিরা পাইছে? নাকি আরো রশিদের দল আছে। থাকলেই বা কি এতবছর মনের ভিতর যে চাপা কস্ট নিয়া বেঁচে আছে সেই ক্ষত কি আর দূর হইবে হবে না। কার কাছে বলবে মূর্ছনার মত কলি থাকতেই যেনো কোন নারীর সর্বনাশ না হয়। রসিদের কবরের কাছে গিয়া দাড়ায় সে। অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকে। কিরে রশিদ ঘুমাও ক্যান ওঠ। দেখ কি সুন্দর পৃথিবী। ঐ শয়তান ওঠ। আইজ তোর রক্ত খামু হারামজাদা ওঠ।
তোর ঘরে তোর মেয়ে কান্দে, বউ কান্দে। আমার কান্দন দেখে কে। তুই দোযগের আগুনে জ্বইলা মর।মূর্ছনার চোখে জল নেই। পাথরের মত দাড়িয়ে থেকে বিড়ি ধরিয়ে টানতে টানতে নিজের ঘরের উঠানে এসে দাড়ায়। চাঁদের দিকে তাকিয়ে হাসে। কি সুন্দর চাঁদ। মূর্ছনার মনে আজ অতি আনন্দ খিলখিল করে হাসে।আজ রাতে চারদিকে জোনাকির আলো চান্দের আলোয় বাহিরেই থাকবে সে। চাঁদের ও নাকি কলঙ্ক আছে তাহলে মূর্ছনা কি কলঙ্কিনী।