কাজী নেওয়াজের আশা এবং ভাষা

:
: ৫ years ago

কাজী নেওয়াজঃ আশায় বুক বাধি আর ভাষায় মধুর করি মুখ। দুটোই জীবনে গুরুত্বপূর্ন। আমরা আশায় বুক বাধি স্বপ্ন দেখি সেই স্বপনকে প্রকাশ করি ভাষার মাধ্যমে। সুতরাং আশা নিয়ে লক্ষ্য পূরনে যেভাবে লড়াই করি ভাষা নিয়ে তেমন লড়াই করতে হয়না। কারন ভাষাতো জন্মের পরেই প্রকৃতিভাবে পেয়েছি। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য আশা করাটাই বেঁচে থাকার বাহন হিসেবে কাজ করে।

আশা পূরনের জন্য যুদ্ধ করতে হয়।বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। আমাদের ভাষার জন্য কোন কিছু করিনা শুধু বলাটা রপ্ত করি। এই ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ততকালীন আমলে একদল সাহসী জ্ঞানীগুনি,নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে যদি ভাষার জন্য লড়াই করতে হতো আপনি আমি স্বেচ্ছায় কি তা করতে পারতাম। একবার ভেবে দেখুন জীবন ঝুকি নিয়ে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও হাসিমুখে ভাষার জন্য লড়াই করেছেন।

পৃথিবীর ইতিহাসে তা অক্ষত দলিল।তাদের উদ্দেশে বলা যারা প্রতিনিয়ত ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস নিয়ে ঢালাও ভাবে সমালোচনা করেন। যদি সেই চেতনায় আপনি আমি ফিরে চিন্তা করি। বাংলা ভাষাকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য আমি কি করছি।আপনি কি করছেন। আশা যদি জীবনে গুরুত্বপূর্ন হয় ভাষা তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কে তা প্রমান করার জন্য ভাষা প্রয়োগ ভাষার ব্যবহার জানতে হয়।আমরা মুখে অনেকে অনেক বড়বড় বুলি ছাড়ি আসলে কেউই মূল চিন্তা করিনা।

আমরা প্রতিনিয়ত নিজের অবস্হান থেকে ভাষার রুপকে বিকৃতরূপে পরিনত করছি। ভাষার ব্যবহার বিকৃত করছি। অন্য ভাষা জানা ভালো তবে মনে রাখবেন আমি ইংলিশ জানি তাই বলে বাঙালীশ হয়ে নিজেকে স্মার্ট করার প্রয়াস হল ভুল পদ্ধতি। এটা মূর্খতার পরিচয়। উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন। তারা সবকিছুতে নিজের দেশ নিজের সংস্কৃতি নিজের ভাষাকে বেশি গুরুত্ব দেয়।এজন্য তারা উন্নত জাতি হিসেবে স্হান করে নিয়েছে। আমরা যে মধুর মিস্টি ভাষা পেয়েছি বীর ভাষা সৈনিকের আত্মত্যাগের বিনিময় তা রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব আমাদের কাধেই বর্তায়।এত সমালোচনা করেন যারা তারা কিন্তু বাংলাতে বলেন।

যদি এত অবজ্ঞা থাকে বাংলা ভাষাতে তাহলে অন্য ভাষায় কথা বলেন নয়তো নিজের ভাষাকে সম্মান করুন। আমরাও জাতি হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছি উন্নত জাতি হিসেবে নিজেদের পরিচয় বহন করবো এ প্রজন্ম মেধা বুদ্ধি শ্রম দিয়ে কাজ করছে। সেইদিন বেশি দূরে নয় আমাদের প্রজন্ম সেই ভাষা সৈনিকের স্বপ্ন কে ধারন করে বাংলা ভাষার সম্মান কে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর একটি কথা প্রতি বছর ২১ ই ফেব্রুয়ারি দিনটি উৎযাপন করা থেকে যেনো প্রতিবছর একটি করে লক্ষ্য পূরন হয়। এখন তো আমাদের দাড়ানোর সময় তাই উত্তরসূরিরা কিছু করুন যা থেকে এ প্রজন্ম তার ধারাবিহকতা রক্ষা করবে। যদি দিবস পালন করতে পারি তাহলে সেই দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে এ প্রজন্ম কাজ করতে পারবে।

এ প্রজন্মই যেহেতু আগামির বাংলাদেশ। সেজন্য এ প্রজন্মকে সেই শিক্ষায় শিক্ষীত করার দায়িত্ব দেশ পরিচালনাকারী সকলের নেয়া উচিত। এটা কোন নিয়ম বা আইন করে হয়না। প্রজন্মের রক্তে সেই লক্ষ্য পূরনের স্বপ্নের বীজ বুনে দিন। এক এক বছর একেকটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিন। এ বছর মাদক মুক্ত সমাজ গড়বো। পরের বছর দূর্নীতি মুক্ত করবো।এভাবে যদি ভাষা দিবস কে সম্মানীত করা হয় আমি নিশ্চিত দেশে চলমান ত্রাস দূর হবে। যে বই পড়ি যাদের লেখা পড়ে শিক্ষীত হই তাদের সম্মান তাদের আদর্শ কি আমরা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করি? করিনা। সমাজে বা রাস্ট্রে যার টাকা আছে সেই বাস্তব জীবনে দেশে এখন সম্মানীত।সে কিভাবে টাকা অর্জন করলো তা দেখার বিষয় নয়।

এমন সমাজে মানবিক মানুষের( যে মানুষের মধ্য মানবীয় গুন থাকে) মূল্য থাকেনা।এজন্য আমরা নানান চলমান সমস্যা নানান অপরাধের সামনে বেঁচে থেকেও কিছু করতে পারিনা। চকবাজারের মত হৃদয় স্পর্শি ঘটনা দেখেও যদি শিক্ষা না হয় তবে আমরা ডাস্টবিনের মধ্যই বাকি জীবন পার করবো। শুধু মুখের ভাষায় দেশ সেবা করছি গোপনে দেশের বারোটা বাজাচ্ছি এমন ভূয়া নীতি নিয়ে দেশের উন্নয়নের কথা ভাবা যায়না। নীতি ঠিক রাখতে হবে দিনশেষে ভাবুন সকালে মাইকে সুন্দর করে ঘোষনা আসতে পারে আপনি বা আমি ইহলোক ত্যাগ করেছি। তখন মৃত্যুর পর লেখা থাকবেনা আপনি কে।আপনার সম্পদ সঙ্গে যাবেনা। হয় ভাল কিছু করুন নয়তো জাতি অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। সেখানে আপনার বংশধরও কিন্তু বাস করবে।নতুনদের সৎ আদর্শবান সুশিক্ষায় শিক্ষীত করে গড়ে তুলুন।

নীতিটাকে আদর্শ কে ভাষায় সঠিক ভাবে প্রকাশ করাতে হবে। তাহলে মানবীয় গুনের জয় হবে। সুরেলা কন্ঠেই পরবর্তী প্রজন্ম সকলকে স্মরনীয় করে রাখবে। সুতরাং আশায় বুক বাধি যেনো বাংলা ভাষায় গর্ব করে বলতে আমি বীর বাঙ্গালী। বাংলা আমার পৃথিবীর সেরা ভাষা।বাঙালী পৃথিবীর সেরা জাতি।

লেখকঃ কাজী নেওয়াজ