কলাপাড়ায় অননুমোদিত নকশায় ইমারত নির্মানের হিড়িক

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরসভার অধিক্ষেত্রধীন এলাকায় অননুমোদিত নকশায় ইমারত নির্মানের হিড়িকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ইমারত নিয়ন্ত্রন সহ নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রনয়ন ও বাস্তবায়নে পৌর কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ইমারত নকশা অনুমোদন এবং ভবনের গুনগত মান নিশ্চিতকরন ছাড়াই পৌর এলাকায় যত্র তত্র ইমারত নির্মান এবং অগনিত বহুতল ভবনের নির্মান কাজ অব্যাহত থাকলেও রহস্যজনক কারনে পদক্ষেপ নিচ্ছেনা পৌরসভা। এমনকি ইমারত নির্মানের বিষয়ে পৌরসভায় লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন একাধিক নাগরিক।

জানা যায়, পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড নাচনাপাড়া এলাকার নাগরিক অব: সেনা সদস্য নাজমুল আহসান গত ১০ জানুয়ারী কলাপাড়া পৌর মেয়রের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়েরের পর সহকারী প্রকৌশলীকে লিখে দস্তখত করে দেন মেয়র। লিখিত অভিযোগে নাজমুল জানান, নাচনাপাড়ার প্রভাবশালী মন্টু তালুকদার নিয়ম বহির্ভূত ভাবে সীমানা প্রাচীর বরাবরে বহুতল ভবন নির্মান করছেন। এর আগেও মন্টু তালুকদার বহুতল ভবন নির্মান করেছেন এবং তার ১০/১১টি ভাড়াটিয়া পরিবার তাদের প্রতিদিনের বর্জ্য জ¦ানালা-দরজা দিয়ে পার্শ্ববর্তী বাড়ী-ঘরের মধ্যে ফেলায় প্রতিনিয়ত ঝগড়ার সৃষ্টি হচ্ছে। অত:পর নিরুপায় হয়ে মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নাজমুল। একই এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তা সালাহউদ্দীন আবাসন নির্মান নিয়ে পৌরসভায় অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাননি। এছাড়া মহাসড়কের পশ্চিম পার্শ্বে খাল দখল করে অননুমোদিত নকশায় ভবন নির্মান করছেন জাপা নেতা আনোয়ার। ৪নং ওয়ার্ডের সমাজ কল্যান রোডে শিল্পী বেগম টিন শেড ঘর নির্মানের অনুমতি নিয়ে একতলা ছাদ দিয়ে দোতলার কাজ করছেন। এরকম শহরের ৯টি ওয়ার্ডে অননুমোদিত নকশায় শত শত বাড়ীÑঘর নির্মান অব্যাহত থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় নানা রকম গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে নাগরিকদের মাঝে। অথচ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ইমারত নির্মান খাতে পৌরসভার আয় হয়েছে ৮, ৫১, ৫৮৮ টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেটে এ খাতে সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে ১৫ লক্ষ টাকা।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ৫০ এর ১(গ) অনুযায়ী পৌর এলাকার নাগরিকগনের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ইমারত নিয়ন্ত্রন সহ নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রনয়ন ও বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব পৌরসভার। এছাড়া একই আইনের দ্বিতীয় তফসিলের ৩৫, ৩৬ ও ৩৭ নম্বর ক্রমিকে ইমারত নির্মান, পুন:নির্মান, ইমারত সমাপন, ইমারত পরিবর্তন ইত্যাদি এবং ইমারত নিয়ন্ত্রনে পৌরসভার দায়িত্ব রয়েছে। অনুচ্ছেদ ২.১ এ ভবনের নকশা অনুমোদনে পৌরসভার মেয়র সভাপতি ও পৌরসভার প্রধান নির্বাহী, প্রকৌশলী-এলজিইডি, পরিবেশ অধিদপ্তর এর প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর প্রতিনিধি, নগর পরিকল্পনাবিদ, ইনষ্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স এর প্রতিনিধি, ইনষ্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস এর প্রতিনিধি, ইনষ্টিটিউট অব প্লানারস এর প্রতিনিধি কে সদস্য এবং নির্বাহী/সহকারী প্রকৌশলীকে সদস্য সচিব করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত কমিটি বিল্ডিং করস্ট্রাকশন আইন ১৯৫২ এবং বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড ১৯৯৩ সহ অন্যান্য প্রচলিত বিধি-বিধান অনুসরন করবে এবং ৭ তলা বা ৭৫ ফুট পর্যন্ত ভবনের নকশার অনুমোদন দিতে পারবে। ভবনের নকশার আবেদনের সাথে জমির দলিল, পর্চা, মাটির ভার বহন ক্ষমতার সনদ, নিয়োজিত প্রকৌশলীর অঙ্গীকার নামা, পানি সরবরাহ, পয়:নিস্কাশন, ড্রেনেজ পদ্ধতির সুস্পষ্ট তথ্য প্রদান করতে হবে। এলক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মো: আবদুর রউফ বিগত ২২ জুন’২০১৭ একটি পরিপত্র জারি করেছেন।

এ বিষয়ে কলাপাড়া পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, অব: সেনা সদস্য নাজমুল আহসান এর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বর্তমানে এটি পৌরসভার সিদ্ধান্তের জন্য রয়েছে।