রোববার কলকাতার বিবেকানন্দ যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে (সল্ট লেক স্টেডিয়াম) যখন জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছিল ব্রাজিল তখন হাসি ফুটেছিল গুয়াহাটির মানুষের। নেইমারদের উত্তরসূরিদের ম্যাচ তারা দেখতে পাবে নিজ শহরের ইন্দিরা গান্ধী অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে বসে; কিন্তু কে জানতো, ২৪ ঘন্টার মধ্যে গুয়াহাটিবাসির স্বপ্ন উবে গিয়ে আবার হাসাবে কলকতার ফুটবল প্রেমীদের? গুয়াহাটি যে ব্রাজিল-ইংল্যান্ডের ম্যচটি ধরেই রাখতে পারলো না!
অতি বৃষ্টিতে ইন্দিরা গান্ধী অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামের মাঠ খেলার অনুপোযী হয়ে পড়ায় ফিফা জরুরি ভিত্তিতে ব্রাজিল-ইংল্যান্ড সেমিফাইনাল সরিয়ে নেয় গুয়াহাটি থেকে। তাতেই ভাগ্য খুলে যায় কলকাতার। ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ফাইনালের ভেন্যু বিবেকানন্দ যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গন বুকে ধারণ করতে পারছে বাড়তি আরও একটি ম্যাচ। যে ম্যাচটি হতে পারে এ আসরের অন্যতম সেরা!
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিবেকানন্দ যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনের ৩ নম্বর ফটকের সামনে দেখা গেলো লম্বা লাইন। সবাই খুঁজছেন টিকিট। ফাইনালের টিকিটের চাহিদা তো আছেই, সবার বাড়তি আগ্রহ বুধবারের ব্রাজিল-ইংল্যান্ড সেমিফাইনালের টিকিটেরও। সেমিফাইনালের টিকিট পাওয়া যাবে দাদা? কারো গলায় অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেখলেই এমন আকুতি দর্শকদের। একেবারেই হঠাৎ করে পাওয়া এমন একটি ম্যাচ যে কলকাতাবাসীর জন্য অন্যরকম একটি বোনাস!
গুয়াহাটির ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে যখন ২১ অক্টোবর মালি ও ঘানার কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ হয় তখনই প্রশ্ন উঠেছিল ওই স্টেডিয়ামের মাঠ নিয়ে। হেরে যাওয়া দল ঘানাতো ফিফার কাছে অভিযোগও করেছে, ‘এমন মাঠে বিশ্বকাপের মতো আসরের ম্যাচ আয়োজনের যৌক্তিকতা নিয়ে’।
মালি-ঘানার ম্যাচ নিয়েই যেখানে কথা উঠলো মাঠের মান নিয়ে, সে মাঠে ব্রাজিল-ইংল্যান্ড ম্যাচ হয় কী করে? ফিফা অবশ্য অনড় ছিল ম্যাচটি গুয়াহাটিতেই আয়োজনের। হেলিকপ্টার দিয়ে মাঠ শুকিয়ে দুই দলের কাছে গ্রহণযোগ্য মাঠ দেয়ার চেষ্টা করেও পারেনি ফিফা এবং স্থানীয় আয়োজকরা।
গুয়াহাটি থেকে ম্যাচ সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ফিফাও পড়েছিল নতুন সমস্যায়। এত দ্রুত সময় কোন শহর পারবে এমন একটি ম্যাচ আয়োজন করতে? তখন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এ ম্যাচটি আয়োজনের দায়িত্ব নিলে চিন্তামূক্ত হয়ে ফিফা এবং আনন্দের ঢেউ বয়ে যায় কলকাতায়।
২৮ অক্টোবর কোলকাতায় ফাইনাল। এ নিয়ে এ শহরের মানুষের প্রস্তুতি অনেক আগের থেকেই; কিন্তু সোমবার বিকেলে যখন শহরে খবর পৌঁছলো ব্রাজিল-ইংল্যান্ড সেমিফাইনালও আসছে তাদের স্টেডিয়ামে তখন কলকাতার ফুটবল প্রেমীদের মনে বয়ে যায় বাড়তি আনন্দের ঢেউ।
বিবেকানন্দ যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গন ছোটদের এ বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে পেয়েছে নতুন রূপ। ৮৫ হাজার দর্শকধারণ ক্ষমতার এ স্টেডিয়ামে এখন যে কারোরই চোখ আটকে থাকবে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে এ স্টেডিয়াম ঘিরে শুরু হয়েছে ফুটবল প্রেমীদের আনাগোনা। কর্মরত নানা ধরণের মানুষ কাটাচ্ছে ব্যস্ত সময়। বুধবার বিকেলে যে এ স্টেডিয়াম বুকে ধারণ করতে যাচেছ ব্রাজিল-ইংল্যান্ড ম্যাচ!
কলকাতার মানুষদের আরো আলোড়িত করেছেন ইংল্যান্ড যুব দলের কোচ স্টিভ কুপার। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন,‘কলকাতার মানুষ দারুণ একটি ম্যাচ দেখবে বলে আমার বিশ্বাস।’ নিজের দলের সম্ভাবনার পাশাপাশি তিনি প্রতিপক্ষ ব্রাজিল সম্পর্কে বলেছেন, ‘তারা অনেক ভালো দল। এ বিশ্বকাপে শুরু থেকেই তারা ভালো ফুটবল খেলছে। দলে বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান ফুটবলার আছেন। এর মধ্যে লিংকন ও পলিনহোর কথা আলাদা করেই বলতে হয়। তারা দুইজনই খুব ভালো মানের ফুটবলার।’
ব্রাজিলের কোচ আমাদেউ কার্লোসও আশা করছেন কলকাতার মানুষ দারুণ একটি ম্যাচ উপভোগ করবে। প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডকে শক্তিশালী দল হিসেবে উল্লেখ করে ব্রাজিল যুব দলের কোচ বলেছেন,‘তারাও সেমিফাইনাল পর্যন্ত ভালো ফুটবল খেলে এসেছে। তবে আমার ছেলেরা কোয়ার্টার ফাইনালে শক্তিশালী জার্মানির বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্ত জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। এতে করে তাদের মনোবল এখন আগের চেয়ে ভালো। আশা করি আমার দল সেমিফাইনালেও ভালো ফুটবল খেলবে।’