কর-জিডিপি বাড়াতে হবে, ঋণ নিয়ে চলতে পারব না: অর্থ উপদেষ্টা

লেখক:
প্রকাশ: ২ মাস আগে

দেশের উন্নয়ন চলমান রাখতে ও অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে যে পরিমাণ অর্থের জোগান দরকার তার জন্য কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

মঙ্গলবার বিকেলে আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এ কথা বলেছেন তিনি।

সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে বলেন, “কর্মকর্তাদের বলেছি, ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও আমাদের বাড়াতে হবে। নিজেদের ব্যবহারের জন্য প্রচুর অর্থ লাগবে। সারাক্ষণ তো লোন নিয়ে চলতে পারব না।”

তবে কর আহরণ বাড়াতে গিয়ে যেন মানুষের কষ্ট না হয় সেদিকও নজর দিতে বলেছেন তিনি।

অর্থ উপদেষ্টা হওয়ার পর প্রথমবারের মত এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসলেন অর্থ উপদেষ্টা।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “রাজস্ব হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে ইম্পরটেন্ট ইস্যু। বাংলাদেশের শিল্প বাণিজ্যের উন্নয়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটা বিরাট ভূমিকা আছে এবং তাদের কাজ হচ্ছে রেভেনিউ কালেক্ট করা। কিন্তু রাজস্ব আদায়টা যেন ম্যাক্সিমাম হয়, মানুষের যাতে কষ্ট না হয়। নিয়মমাফিক হয়।”

চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে জনগণের কষ্ট লাগব ও স্বস্তি ফেরাতে চিনি, সয়াবিনসহ অন্যান্য ভোজ্য তেল, আলু, সার ও কীটনাশকের আমদানিতে যে শুল্ক রয়েছে তা কমানো ও যৌক্তিকীকরণ করা যায় কিনা এনবিআরকে বিবেচনায়ও রাখতে বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা।

যেসব দেশে এখনও কর ও জিডিপির অনুপাত সবচেয়ে কম, বাংলাদেশ সেগুলোর অন্যতম। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির তুলনায় কর আহরণ এখনও মাত্র ৭ দশমিক ৬ শতাংশের মত। এটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার পরামর্শ দীর্ঘদিনের। কর আদায় কম হওয়ায় বাংলাদেশ উচ্চ হারে শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক আদায় করা হয়। এটি বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করে বলে মত দিয়ে আসছেন অর্থনীতিবিদরা।

কর্মকর্তারা যেন আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বাধা তৈরি না করে উল্লেখ করে উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ব্রিফিংয়ে বলেন, “বেসরকারি খাতের কিছু ইস্যু আছে তাড়াতাড়ি যেন পণ্য পোর্টে ছাড়ানো হয়। তারা যেন পণ্য দ্রুত পণ্য পায় সেই ব্যবস্থা করা।

“পোর্টে অনেক সময় আসে (ব্যবসায়ীরা), বিল অব এন্ট্রি করে, এগুলো সময় মত করতে হবে। আর যদি কাগজপত্র না থাকে, চাইবে। কাগজ নিয়ে বসে থাকা যাবে না। তারা ইমপোর্ট করে, এক্সপোর্ট করে। মোদ্দা কথা হচ্ছে, এগুলো যেন এক্সপেডাইট করে। সরকারের তরফে যদি বাধা থাকে, সেটা সরিয়ে দেওয়া।”

এনবিআরে মঙ্গলবার মতবিনিময়ের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

 

কর্মকর্তাদের হয়রানি বন্ধের বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “যে ট্যাক্স দেয়, তাকে জোর করা; আর যে দেয় না, তাকে ছেড়ে দেওয়া, এসব এখন আর চলবে না।”

কালো টাকা সাদা করার বিধান থাকবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ সম্বন্ধে এখন কিছু বলব না। এমন না যে আমরা আলাপ করি নাই।”

সরকার পরিবর্তনে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা তৈরি হয়ে তাতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ‘আকাশচুম্বি’ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন কীভাবে হবে জানতে চাইলে সদ্য নিয়োগকৃত এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, “লক্ষমাত্রা অর্জন করার জন্য আমাদের তরফ থেকে যা যা করার দরকার, আমরা সব করব।

“আমাদের রেভেনিউ সৈনিকরা অনেক পরিশ্রমী। তারা জানে কীভাবে কাজ করতে হয়। আমরা সবাইকে নিয়ে একসাথে কাজ করব।”

কর ফাঁকি যেন না হয় সেদিকেও নজর জানিয়ে তিনি বলেন, “আর লিকেজ যেন না হয়। স্যারও (অর্থ উপদেষ্টা) আজ যেটা নিয়ে ইনস্ট্রাকশন দিয়েছেন, যে রেভেনিউটা আমাদের যে সময়ে আসা দরকার, সে সময়ে সেটা আদায় করব। এজন্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম প্রয়োজন হবে।”

একইসঙ্গ করদাতাদের দ্রুত সেবা দেওয়া, বন্দরে সময় কমিয়ে তাদের আস্থা বাড়িয়ে কর আদায় বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীদের ফুল কনফিডেন্সে এনে, আস্থা বাড়িয়ে আমরা তাদের থেকে রেভেনিউ আদায় করব। আশা করি, আমরা কভার করতে পারব।”

এনবিআরের প্রসারে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের কারিগরি সহায়তার প্রস্তাব প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা বিষয়টি দেখছি। ওইদিকে আবার ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেটের রিফর্মের জন্য ব্রিটিশ অ্যাম্বাসেডর প্রস্তাব দিয়েছে।

“আমাদের দেশে যারা এক্সপার্ট আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলব। তাদের যদি এক্সাপার্টাইজ থাকে তাহলে বাইরের দিকে কেন তাকাব।”

এনবিআরে গত ১৫ বছরে নানা সংস্কার হলেও সেসব কোনো কাজে আসেনি জানানো হলে সালেহউদ্দিন বলেন, “এবার হলিস্টিক অ্যাপ্রোচে রিফরমের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”