নারী দিবসে আমন্ত্রণ দিতে দেরি হওয়ায় পাবনা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে থাপ্পড় দিয়ে পাবনা ছাড়া করার হুমকির অভিযোগ উঠেছে পাবনা-সিরাজগঞ্জের সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলির বিরুদ্ধে।
নারী দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ দিতে দেরি হওয়ায় সোমবার (০৭ মার্চ) সকালে তিনি এমন কাণ্ড ঘটান বলে অভিযোগ করেন জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কানিজ আইরিন জাহান। মঙ্গলবার (০৮ মার্চ) সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন তিনি।
এর আগে কানিজ আইরিন জাহান ও নাদিরা ইয়াসমিন জলি এমপির কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে বেশ রাগান্বিত ও উচ্চস্বরে ওই কর্মকর্তাকে অশালীন ভাষায় পাবনা ছাড়া করার হুমকি দিতে শোনা যায় ওই নারী সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে।
সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য ছাড়াও নাদিরা ইয়াসমিন জলি জাতীয় মহিলা সংস্থা পাবনার চেয়ারম্যান ও পাবনা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডে শোনা যায়, প্রথমে সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শামসুন্নাহার রেখা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে মহিলা এমপিকে কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়নি জানতে চান। মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানালে বাসায় কেন লোক পাঠানো হয়নি বা ফোন করা হয়নি তা জানতে চান। একপর্যায়ে, নাদিরা ইয়াসমিন জলি ফোন কেড়ে নিয়ে বলেন, এই আপনি কী হয়েছেন? আপনি নারী হয়ে নারীদের সম্মান করেন না। আপনাকে এক ‘থাপ্পড়’ মেরে পাবনা ছাড়া করবো কিন্তু, বেশি স্পর্ধা হয়েছে, সব কিছু কি আপনার লিজ দেয়া হয়েছে? মেয়েদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন, আপনাকে কি করে পাবনা ছাড়া করতে হয় তার ব্যবস্থা আমি করছি। আপনাকে পাবনা ছাড়া করা মাত্র ১০ মিনিটের বিষয় বলে গালিগালাজ করতে থাকেন।
কানিজ আইরিন জাহান বলেন, ‘আমার কাজে অনিয়ম, ভুলক্রুটি পেলে তিনি বকা দিতে পারেন, প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করতে পারেন। কিন্তু থাপ্পড় দেয়ার কথা বলতে পারেন না। আমার বাবা, মাও কখনও আমাকে থাপ্পড় দেননি। অথচ নারী দিবসে আমাকে এমন একটি পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হলো। আমি এখানে সরকারের দায়িত্ব পালন করতে এসেছি, নারী দিবসের দিনে থাপ্পড় খেতে নয়। ঘটনার পর থেকে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাদিরা ইয়াসমিন জলি এমপি মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের কথা স্বীকার করেন। মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে দুর্নীতি পরায়ণ, স্বেচ্ছাচারী অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘মহিলা এমপি হওয়া সত্ত্বেও নারী দিবসের অনুষ্ঠানে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি। নারী সমাজের প্রতিনিধিকে অপমান, অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য করে তিনি সমগ্র নারী জাতির অবমাননা করেছেন।’
‘থাপ্পড়’ দিতে চেয়েছেন কি না জানতে চাইলে নাদিরা ইয়াসমিন জলি বলেন, ‘উনি একজন প্রোগ্রাম অফিসার, অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে জেলার দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি জেলায় দুর্নীতির রামরাজত্ব কায়েম করেছেন। আমি তাকে সংশোধন হতে বার বার বলেছি। কিন্তু তার অপকর্ম অব্যাহত রেখেছেন। গতকাল কয়েকবার ফোন দেয়ার পরও তিনি আমার ফোন ধরেননি। পরে অন্য ফোন রিসিভ করায় আমি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করবো।’
নারী দিবসের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করা পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (স্থানীয় সরকার) মোখলেসুর রহমান বলেন, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।