করোনা যোদ্ধা পুলিশ

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

খায়রুল আলম রফিক:: থানায় কর্মস্থলেই রয়ে গেছেন ৩ মাসেরও বেশি মময় । সেদিন এক ফাঁকে মায়ের সাথে এসেছেন থানার সামনে । বাবাকে দেখেই কোলে উঠতে চায় একরত্তি ছেলে। প্রাণ কাঁদলেও সঙ্গে সঙ্গে ছেলেকে স্পর্শ করতে পারেন না বাবা। ভয়ে? দুই বছরের ছেলেকে রেখেই আবার ফিরে গেলেন থানায় । লকডাউনে ডিউটি করেছেন । সহকর্মীদের কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন । তাই ছেলেকে স্পর্শ করেননি । ভয়েই। ভাইরাসের ভয়ের সঙ্গেই সামনের সারিতে থেকে রাতদিন লড়ছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই পুলিশ সদস্য । তিনি বিশ্বাস করেন, এই লড়াইয়ে জয় আসবেই। কেবল একটু ধৈর্য ধরতে হবে। আমি তো একা নই, সবাই মিলে আমরা লড়াই করছি ।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় এবং লকডাউন নিশ্চিতে দিনরাত কাজ করছেন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা । কর্মস্থলে কর্মরত থাকাবস্থায় জানার উপায় নেই কে বা কারা করোনায় আক্রান্ত । তাই জেনে নিজেকে পরিবার থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা । বাড়িতে ফোন করে শুনেন, তাদের জন্য ছেলে- মেয়েদের কান্নাকাটির শব্দ । দরিদ্রদের ত্রাণ বিতরণ খাবার বিলি থেকে মানুষকে সচেতনতা , নানা ভূমিকায় বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে কর্মরত পুলিশ । করোনা-পরিস্থিতিতে এমন নানা ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে পুলিশ বাহিনীকে । লকডাউনে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বও পালন করেছে পুলিশ। ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের ডিবি অসহায়দের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরন করে নজির সৃষ্টি করেছেন ।

করোনাযোদ্ধা এই পুলিশরা বলেছেন, এটা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সচেতন মানুষরাও বাহবা দিয়ে বলছেন, করোনা দেখিয়ে দিল, পুলিশ মানুষকে তথা সমাজকে কী ভাবে আগলে রাখে। ভয়ে লাশ ফেলে যখন পরিবারের লোকজন চলে যায় তখন লাশ কাঁধে তুলে নিয়েছেন এই পুলিশ । লকডাউন অমান্য করার প্রবণতাও কমেছে পুলিশের কর্মতৎপরাতায় । পুলিশের নজরদারিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসে বাজার। পুলিশের সচেতনতায় বেড়েছে মাস্ক ব্যবহারও । মানুষ যাতে জমায়েত না-করেন বা বিনা কারণে গাড়ি নিয়ে না-বেরোন, তা-ও কড়া নজরে রেখেছেন তারা । কেও অসহায় বোধ করলেও পুলিশকে খবর দিচ্ছেন মানুষ।

মানুষকে পুলিশ ভরসা দিয়ে বলছেন, অযথা আতঙ্কিত হবেন না। মানুষের সচেতন করতে পেরে খুশি পুলিশও । তাদের কথা, মানুষ সচেতন হচ্ছেন। তাঁরা আমাদের খবর দিচ্ছেন। তবে এটাও দেখতে হবে, ঘরে ফেরা মানুষের উপরে কোনও মানসিক চাপ তৈরি না হয়। পুলিশ সূত্রের খবর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৫ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন । বাংলাদেশ পুলিশের ৫ হাজারেরও বেশি সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

করোনা যুদ্ধের সন্মুখ সারির যোদ্ধা পুলিশের মানবিকতা মানুষ চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে । দেশের এই প্রতিকূল পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে জানি না। রোগের আতঙ্ক, আর্থিক অনিশ্চয়তা, সামাজিক ও পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা, একাকিত্বের ক্লান্তি দীর্ঘদিন বহন করা কঠিন। তবু এই অভিজ্ঞতাই হয়ত ধৈর্য, সহনশীলতা, মানবিকতার চেতনায় জীবনকে অনুপ্রাণিত করবেএই প্রত্যাশা । লেখক – মোঃ খায়রুল আলম রফিক সভাপতি – বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ (বনেক) কেন্দ্রীয় পরিষদ।