করোনা আক্রান্ত শিক্ষক সহকর্মীবৃন্দ কতটা কঠিন সময় পার করছে?

:
: ৪ years ago

রসুলপুর চকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম খায়েরের করোনা আক্রান্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা বরিশাল জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক জায়েদা ইয়াছমিনকে নিয়ে ফেসবুকে আবেগন স্ট্যাটাস। সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম খায়েরের ফেসবুক টাইম লাইন থেকে নেওয়া স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো।

মান্যবর পরম শ্রদ্ধেয় সচিব মহোদয় স্যার এবং মান্যবর পরম শ্রদ্ধেয় মহাপরিচালক মহোদয় স্যার,

আমরা সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লক্ষ লক্ষ শিক্ষক আপনাদের মত দুইজন অভিভাবক পেয়ে সত্যি খুবই আনন্দিত। আমাদের বুক ভরে যায় যখন আপনারা বলেন, আমার শিক্ষক, আমার শিক্ষক। স্যার সারা বিশ্বের ন্যায় প্রিয় বাংলাদেশও এক কঠিন সময় পার করছে। স্যার আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন ইতিমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শতাধিক( ২২৪+)শিক্ষক কোভিড-১৯ পজেটিভ।

সারা দেশের সম্মানিত শিক্ষকগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন মাধ্যমে ক্লাস পরিচালনা করতে গিয়ে নানান উপকরণ থেকে শুরু করে সরঞ্জামাদি যোগাড় করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত তাঁরা কোভিড-১৯ পজেটিভ হচ্ছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের সর্বোচ্চ অভিভাবকদ্বয় সার্বক্ষনিক শিক্ষকদের খোঁজ খবর নিয়ে থাকেন কিন্তু মাঠ পর্যায়ের অভিভাবকগণ সম্মানিত শিক্ষকদের পাশে কতটুকু আছেন তা ভাববার সময় এসেছে।

আমার একজন সহকর্মী শিক্ষক যখন নিজ থেকে দায়িত্ব নিয়ে নমুনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে স্যাম্পল দিচ্ছেন এবং মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায়ই করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন।আমরা দূর থেকে হলেও উপলব্ধি করতে পারি নিজের পরিবার পরিজন ছেড়ে নিজেকে সম্পূর্ণ একা গৃহবন্দী করে অদৃশ্য শক্তি করোনার বিরুদ্ধে একাই লড়ে যাওয়া কতটা কঠিন,তা আমরা সবাই হয়তো একটু চিন্তা করে দেখিনা।

করোনা আক্রান্ত আমার সম্মানিত শিক্ষক সহকর্মীবৃন্দ কতটা কঠিন সময় পার করছে তা সবারই হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে ভেবে দেখা একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে মনে করি। করোনা নামক অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে লড়তে আমার এক একজন প্রিয় সহকর্মীর শরীর কতটা ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত হচ্ছে তাও সবার চিন্তা করা খুবই প্রয়োজন।

আমাদের পরম শ্রদ্ধেয়, সম্মানিত সর্বোচ্চ অভিভাবক মহোদয়গণ,করোনা আক্রান্ত প্রিয় সহকর্মীর ২য় স্যাম্পলটা তাঁদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করে দেওয়া,এতটুকু সহানুভূতি পাওয়ার অধিকার কি আমরা রাখিনা !!!

পরিশেষে, (বরিশাল সদরের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার জনাব তানিয়া ম্যাডামের ওয়াল থেকে বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ একজন প্রিয় সহকর্মীর করোনা পজিটিভ হওয়া অতঃপর কঠিন পরিস্থিতিতে যাওয়া নিয়ে তাঁর প্রায় ৫ বছরের সন্তানের কথোপকথন দিয়ে শেষ করব : ” পাঁচ বছরের আলিফ তার নানার কাছে বামনা,বরগুনা আর তার করোনা আক্রান্ত মা বরিশালে একা ঘরে, ২৬তম দিনের রাতের কনভারসেশন:

মাঃ চোখ বন্ধ করলে ঘুম আসেনা ওমা তুমি ঘুমাও মা
আলিফঃ না,তোমার জ্বর ছাড়ছে ?
মাঃ হ মা
আলিফঃ আমিতো আটকাইয়া পরলাম তোমার কাছে যে যামু তাও পারিনা
মাঃ ওমা আমার জ্বর কমছে কিন্তু কাশি কমে নাই তাই আসতে পারিনা ও মা তুমি ঘুমাও
আলিফঃ লকডাউন কমছে ? এক্কেবারে লকডাউন ভাইঙ্গা ফালামু…”
পাঁচ বছরের আলিফ এই সিস্টেমকে ক্ষমা করবেতো !!!
বিঃদ্রঃ বিষয়টি কাল্পনিক। রাইতে স্বপ্ন দেকছি ! ভাবলাম ফেইসবুকের ফেইসে একটু থাকুক !)