#

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এছাড়া দেশের সব স্থানে চলমান ও অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাণিজ্য মেলা বন্ধ ঘোষণা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের অফিসে না এসে ঘরে বসেই কাজ করতে নির্দেশনা দিচ্ছে।

তাই শপিং মল কিংবা দোকানপাট কখন যে বন্ধ হয়ে যায়, সে আশঙ্কায় নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্য বেশি পরিমাণে কিনে বাসায় মজুত করতে শুরু করেছে জনগণ। এতে রাজধানীর কাঁচাবাজারসহ সুপার শপগুলোতে কেনাকাটার হিড়িক পড়েছে। এ সুযোগে চালের দামও কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।

মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার সালেক গার্ডেন কাঁচাবাজার, ট্যানারি মোড় কাঁচাবাজার, রায়ের বাজার এবং এসব এলাকার বিভিন্ন সুপার শপ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

ধানমন্ডি জিগাতলার গাবতলা বড় মসজিদ এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার পারভেজ বাড়ির কাজের ছেলেকে নিয়ে মঙ্গলবার সালেক গার্ডেন কাঁচাবাজারে প্রয়োজনীয় বাজার করতে আসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস ইউরোপের অনেক শক্তিশালী দেশকে ঘায়েল করে ফেলেছে। সেসব দেশে ঘর থেকে বাইরে বের হলেই জরিমানা করা হচ্ছে। আমাদের দেশেও যদি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তা-ই আগেভাগেই নিত্যপণ্য একটু বেশি করে কিনে রাখছি।’

গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে দাম কেমন— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাঁচাবাজার কিছুটা এদিক-ওদিক হলেও প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম গত সপ্তাহের মতোই রয়েছে। তবে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। আজ ২০ কেজি খোলা মিনিকেট কিনলাম, যেটার দাম রাখল প্রতি কেজি ৫৫ টাকা। গত সপ্তাহে কিনেছিলাম প্রতি কেজি ৫৩ টাকায়।’

সালেক গার্ডেন বাজারের জননী স্টোরের মালিক আব্দুল মালেক বলেন, গতকাল থেকেই বেচাকেনা কয়েক গুণ বেড়েছে। সাধারণত ঈদে যেমন বেচাকেনা হয়, গতকাল আর আজ তেমনই হয়েছে। তবে দুপুরের পর বিক্রি কিছুটা কমেছে।

জিগাতলা এলাকার স্বপ্ন সুপার শপের ক্যাশ কাউন্টারে থাকা নাঈম ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, গতকাল আর আজ তাদের আউটলেটে অন্যদিনের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি বিক্রি হয়েছে। ক্রেতার সংখ্যা এতটাই বেশি ছিল যে, ক্যাশ কাউন্টারে লম্বা লাইন পড়ে যায়। আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ অবস্থা ছিল। তারা পালাক্রমে দুপুরের খাবার খেয়েছেন। দুপুরের পর বিকেলে ক্রেতার সংখ্যা অনেকটা কমে যায় বলেও জনান তিনি।

এ সুপার শপে বাজার করতে আসেন ট্যানারি এলাকার গৃহিণী আকলিমা খাতুন। তার হাতে স্যাভলন লিকুইট, বেশকিছু টিস্যু বক্সসহ নিত্যপণ্যের ট্রলি। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধের মূল কাজটাই হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা। তাই এসব পণ্য কেনার পাশাপাশি কিছুটা বেশি পরিমাণে চাল-ডালসহ অন্য নিত্যপণ্য কিনেছি, যাতে পরিস্থিতি খারাপ হলে ঘরে বসে কিছুটা নিশ্চিন্তে থাকা যায়।’

করোনাভাইরাসের কারণে মনুষ বেশি বেশি কেনাকাটা করছে, এ কারণেই কি চালের দাম বৃদ্ধি— জানতে চাইলে সালেক গার্ডেন বাজারের বিসমিল্লাহ স্টোরের প্রোপাইটার শামিম আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ কারণে দাম বাড়েনি। স্বাভাবিকভাবেই এ সময় দাম একটু বাড়ে। এখন পাইকারি বাজারেই চালের দাম কেজিতে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এক থেকে দেড় মাস পর নতুন ধান উঠলে দাম কমে যাবে।’

তিনি বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে প্রতি কেজিতে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা বেশিতে চাল বিক্রি করেছি। আজ মিনিকেট (খোলা) চাল বিক্রি করেছি প্রতি কেজি ৫৫ টাকা, আটাশ ৪২ টাকা, পারিজা ৩২ টাকা, নাজিরশাইল ৬০ টাকা।

চীন থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে মোট ১০ জনের মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এদের মধ্যে প্রথম দফায় আক্রান্ত তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

করোনাভাইরাসে সারাবিশ্বে এক লাখ ৮৮ হাজার ১৪৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে সাত হাজার ৪৯৭ জনের। ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন