 
                                            
                                                                                            
                                        
অত্যন্ত ছোঁয়াচে ও প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ এবং এর প্রতিরোধ নিয়ে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা। তারা এ বিষয়ে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চান। উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন তাদের আশ্বস্ত করেন এবং বলেন, সরকার করোনা প্রতিরোধে যথাযথ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজন ‘মুজিববর্ষ’ সম্পর্কে অবহিত করতে এ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, সচিব, স্বাস্থ্য সচিবসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও বিভিন্ন মিশন প্রধানরাসহ তাদের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।
কূটনীতিকরা এ সময় করোনাভাইরাসের কারণে দেখা দেয়া বৈশ্বিক মহামারি এবং এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ-কে নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানান। প্রশ্ন-উত্তর পর্বে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ এবং এটি মোকাবিলায় সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে জানতে চান। উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে যাতে এ ভাইরাসের বিস্তার সেখানে না হয়। এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশেপাশে এ ভাইরাসের উপস্থিতি দেখা যায়নি।
ইউরোপের উদাহরণ টেনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিংক প্রশ্ন করেন, এখন পর্যন্ত পাঁচজনের আক্রান্ত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সরকার কীভাবে নিশ্চিত হচ্ছে যে অন্যদের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ায়নি। আর যদি ছড়ায়, তবে সেজন্য সরকারের দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি-না? উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত আটজন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রথম তিনজনের দুজন ইতালি থেকে এসেছিলেন। পরে আক্রান্ত আরও দুজনের একজন ইতালি এবং আরেকজন জার্মানি থেকে এসেছেন। তাদের মাধ্যমে অপর একজন আক্রান্ত হয়েছেন। এই পাঁচজনের তিনজন ইতোমধ্যে বাড়ি ফিরে গেছেন।
‘করোনার হাত থেকে আমাদের দেশকে বাঁচাতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে সেই দেশগুলোর ওপর যেখানে এ ভাইসের প্রকোপ বেশি। সেইসঙ্গে যারা ফিরে আসছেন তাদের বাসায় কোয়ারেন্টাইন (রোগ সংক্রমণের শঙ্কায় পৃথক রাখা) করার জন্য বলা হচ্ছে। তাদের পরিবারকেও বাসায় কোয়ারেন্টাইনের জন্য বলা হয়েছে। মনে করেন, একটি ফ্লাইটে ১০০ জন যাত্রী এসেছেন। তাদের প্রাথমিক মেডিক্যাল তথ্য সংগ্রহ করে কোয়ারেন্টাইন করা হচ্ছে।’
রেন্সজে তেরিংক এ সময় সম্পূরক এক প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, আমরা গণমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি, হয়তো এটি গুজব হতে পারে, যারা বিদেশ থেকে এসেছেন তারা কোয়ারেন্টাইন ক্যাম্পে থাকেননি। তারা বাড়ি চলে গেছেন। তাহলে আপনি স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনের বিষয়ে নিশ্চিত হচ্ছেন কীভাবে?
উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এটি মোকাবিলায় কৌশল অবলম্বন করছি। আমাদের জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, কেউ যদি বিদেশ থেকে আসে, তাকে অবশ্যই কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কেউ যদি এর ব্যতিক্রম করেন, তবে তাদের প্রতিবেশীদের তাদের বিষয়ে তথ্য জানাতে, এক্ষেত্রে প্রণোদনা দেয়া হবে। সম্প্রতি এমন এক ব্যক্তি কোয়ারেন্টাইন থেকে বের হয়েছিলেন। আর আমাদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাকে জরিমানা করেছে। সামনের দিনগুলোতে বিষয়টি আমরা বেশ শক্ত হাতে প্রয়োগ করব।
অপর এক কূটনীতিক প্রশ্ন করেন, ভিসা ও বাংলাদেশ ভ্রমণে আপনারা কোন ধরনের হেলথ সার্টিফিকেট চাইছেন? উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা ৮৪টি দেশের অন-অ্যারাইভাল ভিসা স্থগিত করেছি। আমরা কোনো মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ছাড়া ভিসা ইস্যু করছি না।
এ সময় স্বাস্থ্য সচিব বলেন, মেডিক্যাল সার্টিফিকেটে আমরা জানতে চাইছি যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো ধরনের লক্ষণ আছে কি-না, আর যদি এমন হয় তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন, তবে তার জন্য ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থেকেছেন— এমন ঘোষণাও দিতে হবে।
এ কূটনীতিকের মন্তব্য, ‘কেউ স্বাস্থ্যবান এবং কেউ করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত— একটি থেকে অপরটি কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ কারণে আপনার কাছ থেকে বিষয়টি পরিষ্কার হতে চাইছি। আপনাদের নীতিতে স্বচ্ছতা লাগবে, তা না হলে বাংলাদেশে আসা ভ্রমণকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হবে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করব। ভ্রমণকারী ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি-না, তা তদন্ত করা বেশ কঠিন এবং অসম্ভব। ফলে আমরা দেখছি যে, যিনি আসছেন তিনি ভালো আছেন কি-না, বা রোগীর সংস্পর্শে এসে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থেকেছেন কি-না? এছাড়া তার ভেতরে করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ রয়েছে কি-না, বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
আরেক কূটনীতিক উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রশ্ন রাখেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যাদের শনাক্ত করা হয়েছে তারা বিদেশ থেকে এসেছেন। এমনও কিছু কেস থাকতে পারে যে, যাদের করোনার লক্ষণ রয়েছে কিন্তু স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে জানায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী কীভাবে বাংলাদেশ এর পরীক্ষা করা হচ্ছে?
উত্তরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনাভাইরাস বিষয়ক সমন্বয়ক বলেন, বিমানবন্দরে কাউকে যদি আমাদের স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকরা সুস্থ পান, তাহলে তাকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তবে সেই ব্যক্তিকে আগামী ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। আর যদি সেই ব্যক্তি হোটেলে অবস্থান করেন, তাদের মধ্যে যদি করোনার লক্ষণ দেখা যায়, তবে আমাদের হটলাইন নম্বর রয়েছে। তারা হটলাইনে ফোন করতে পারবেন। স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইন বাসা বা হোটেলে থেকে করতে পারবেন।
ব্রিফিং শেষে মুজিববর্ষ উপলক্ষে কেক কাটা হয়। পাশাপাশি রঙিন বেলুন উড়িয়ে মুজিববর্ষ উদযাপন করা হয়।