করোনায় উপসর্গহীন রোগী বাড়ছে, তালিকায় মন্ত্রী-সচিবও!

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

করোনার উপসর্গ নেই এমন অনেকেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। করোনায় কোনো ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ ছাড়া আক্রান্তের ফলে সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আজ (বুধবার) ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আগে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।

পরীক্ষায় লক্ষণবিহীন করোনায় আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। এ তালিকায় একাধিক মন্ত্রী, সচিবসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে তারা কেউ আজ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পারেননি। আক্রান্তদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর পাশাপাশি গত কয়েক দিনে তাদের কাছাকাছি যারা এসেছেন, তাদের নামের তালিকাও তৈরি হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ব্যক্তি সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আপনার আশপাশে হয়তো করোনার লক্ষণ ও উপসর্গবিহীন করোনা রোগীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিজে থেকে সতর্ক না হলে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। এজন্য সরকারের দিকে না তাকিয়ে থেকে নিজেকে বাঁচাতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে বলে তারা মন্তব্য করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বুধবার থেকেই রাষ্ট্রপ্রধানসহ তাদের সফরসঙ্গীরা আসতে শুরু করেছেন। আজ এসেছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহীম মু. সালেহ। আগামী কয়েকদিনে আসবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ও নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী।

আমন্ত্রিত অতিথিদের করোনার সংক্রমণরোধে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে জাতীয় প্যারেড স্কয়ার, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও আবাসিক হোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবার করোনার নমুনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয়।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ারলাইন্স থেকে শুরু করে ইমিগ্রেশন, কাস্টমস, সিভিল এভিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট মোট ৬৮২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে ১০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর করোনা শনাক্ত হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানবন্দরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, যাদের করোনা শনাক্ত হয়েছে তাদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কোনো ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ ছিল না। বিষয়টি উদ্বেগজনক উল্লেখ করে তারা বলেন, করোনায় আক্রান্তদের মাধ্যমে ইতোমেধ্যই অনেকেই সংক্রমিত হয়েছেন। ফলে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

ভিন্ন একটি সূত্র জানায়, জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আমন্ত্রিত মন্ত্রী ও সচিবসহ সরকারের নীতিনির্ধারণের সঙ্গে জড়িত অনেকের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে কমপক্ষে দু’জন মন্ত্রী ও একাধিক সচিবসহ নীতিনির্ধারকরাও রয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলমগীর হোসেনের কাছে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নিজেরা নিজেদের বিপদ ডেকে আনছি। ঘরের বাইরে বের হলেই মুখে মাস্ক পরিধানসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে বারবার বলার পরও মানুষ ফ্রি স্টাইলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফলে সংক্রমণ বাড়ছে।

তিনি বলেন, জীবন ও জীবিকার তাগিদ তথা দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে মানুষকে ঘরের বাইরে কাজ-কর্মে বের হতেই হবে। সেক্ষেত্রে ব্যক্তি সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

দেশের সরকারি ও বেসরকারি ২১৯টি ল্যাবরেটরিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ হাজার ৪৮১ জনের নমুনা সংগ্রহ এবং ২৪ হাজার ২৭৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় নতুন ১ হাজার ৮৬৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ লাখ ২৮ হাজার ২৬৯টি। এ মহামারিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৫ লাখ ৬২ হাজার ৭৫২ জন।

এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ হাজার ৫১০ জন। এ নিয়ে দেশে সুস্থ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১৫ হাজার ৯৮৯ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ১১ জন। এ নিয়ে ভাইরাসে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৮ হাজার ৬০৮ জন।