করোনার খবর দিয়ে কারাদণ্ডের মুখে চীনা সাংবাদিক

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

উহান শহরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে খবর প্রকাশ করে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের মুখে পড়তে যাচ্ছেন চীনের একজন নাগরিক সাংবাদিক।

 

গত মে মাসে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে এখনও আটক রয়েছেন ৩৭ বছর বয়সী ঝ্যাং ঝান। নতুন প্রকাশ হওয়া নথিতে দেখা গেছে, এই সাবেক আইনজীবীকে ‘ঝগড়া বাধানো এবং সমস্যায় উস্কানি’ দেওয়ায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।

 

চীনে অ্যাকটিভিস্টদের প্রায়ই এই অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়ে থাকে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

 

বিশ্বজুড়ে মহামারির আকার নেওয়া করোনাভাইরাস প্রথম ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে চীনের উহান শহর থেকে। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো এই ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়। পরে দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে কোটি কোটি মানুষকে আক্রান্ত এবং লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে ভাইরাসটি।

 

 

উহান শহরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে খবর প্রকাশ করে নানা ধরনের সমস্যার মুখে পড়েছেন সেখানকার বেশ কয়েকজন নাগরিক সাংবাদিক। এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অন্তত তিন জন নিখোঁজ হয়ে যায়।

 

 

এদের একজন লি জেহুয়া এপ্রিল মাসে ফিরে এসে দাবি করেন, এতদিন কোয়ারেন্টিনে ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় জন চেন কুইশির খোঁজ পরে পাওয়া গেলেও তাকে সরকারি নজরদারিতে রাখা হয়।

 

তবে তৃতীয় সাংবাদিক ফাং বিন-এর কোনও খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সমালোচনাকারী অ্যাকটিভিস্টদের থামাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পরিচিতি রয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষের।

 

নতুন প্রকাশ হওয়া একটি অভিযোগ পত্রে দেখা গেছে, নাগরিক সাংবাদিক ঝ্যাং ঝান ফেব্রুয়ারিতে উহানে যান। সেখান থেকে তিনি বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

 

চীনা এনজিও (বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা) নেটওয়ার্ক অব চাইনিজ হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস (সিএইচআরডি) জানিয়েছে, অন্যান্য নানা বিষয়ের পাশাপাশি ঝ্যাং ঝান অন্য স্বাধীন সাংবাদিকদের আটক এবং আক্রান্তদের যেসব পরিবার স্বচ্ছতার দাবি তুলেছিলো তাদের হয়রানি নিয়েও খবর প্রকাশ করেন।

 

 

তবে গত ১৪ মে ঝ্যাং ঝান উহান শহর থেকে হারিয়ে যান বলে জানিয়েছে সিএইচআরডি। একদিন পরে জানা যায়, প্রায় চারশ’ মাইল দূরের শহর সাংহাইতে তাকে আটক করেছে পুলিশ।

 

১৯ জুন তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সাংহাইতে গ্রেফতার দেখানো হয়। তারও প্রায় তিন মাস পর ৯ সেপ্টেম্বর তার আইনজীবীকে তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়।

 

সিএইচআরডি জানিয়েছে, গ্রেফতারের প্রতিবাদে আমরণ অনশনে যান ঝ্যাং ঝান। ১৮ সেপ্টেম্বর তার আইনজীবী একটি ফোন কল পান। তাতে তাকে জানানো হয় ঝ্যাং ঝানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। গত শুক্রবার তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে।

 

সোমবার প্রকাশ হয়ে যাওয়া ওই অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঝ্যাং ঝান লেখা, ভিডিও এবং অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করে উইচ্যাট, টুইটার এবং ইউটিউবে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন।

 

 

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিদেশি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে উহানের ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে বাজেভাবে তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগের জন্য তাকে চার থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের সুপারিশ করা হয়েছে।

 

তবে চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঝ্যাং ঝানের সমস্যা এবারই প্রথম নয়। সিএইচআরডি জানিয়েছে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে সাংহাইতে তলব করে পুলিশ।

 

ওই সময়ে হংকংয়ের অ্যাকটিভিস্টদের পক্ষে কথা বলায় তাকে আটকও করা হয়। আটক থাকা অবস্থাতে জোর করে তার মানসিক পরীক্ষা করানো হয় বলে জানা যায়।