করোনায় বন্ধ হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা!

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদেশে উচ্চশিক্ষার দ্বার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেকে বিশ্বের নামিদামি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ (স্কলারশিপ) পেয়েও বিদেশে পাড়ি দিতে পারছেন না। দেশগুলোতে ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।

চলতি বছর লক্ষাধিক শিক্ষার্থী বিদেশে পড়তে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেও অনেকে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিদেশে পড়ালেখা বা ক্যারিয়ার তৈরির সম্ভাবনা স্বাভাবিক হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, প্রতি বছর ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা অর্জনে পাড়ি দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকে বৃত্তি নিয়ে বিনা খরচে পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছেন। পড়ালেখা শেষে কেউ কেউ সেসব দেশে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলছেন।

ইউনেস্কো ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিসটিকসের (ইউআইএস) তথ্য বলছে, ২০০৫ সালে বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিলেন ১৫ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৬ হাজারে। ২০১৯ সালে এসে তা লক্ষাধিক ছাড়ায়।

ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের নিম্ন জীবনমান, দুর্বল শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তাও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখী করছে। বিদেশে পড়তে যাওয়া এসব তরুণের অধিকাংশই ধনী পরিবারের। তাদের পড়াশোনার মাধ্যম ইংরেজি, যাদের অনেকেই পাঠ শেষে আর দেশে ফেরেন না।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে জানা গেছে, প্রতি বছর ইউজিসির মাধ্যমে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনে কমনওয়েলথ বৃত্তি ও ইউজিসি বৃত্তির আয়োজন করা হয়। এতে প্রায় কয়েক হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করলেও শতাধিক ব্যক্তিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচন করে বৃত্তির দিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ করে দেয়া হয়।

ইউজিসির কর্মকর্তারা জানান, গত বছর ইউজিসির আয়োজনে কমনওয়েলথ স্কলারশিপে মোট ৬৩ জন নির্বাচিত হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদেশ পাড়ি দিতে পারছেন না। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের কীভাবে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানো যায় সে বিষয়ে কাজ করছে ইউজিসি।

পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এসএসসি থেকে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে গবেষণা প্রকল্প তৈরি, ডক্টরেট ডিগ্রি, পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপসহ বিভিন্ন ধরনের ডিগ্রি প্রদান করা হবে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নির্বাচিত করে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসব ডিগ্রি প্রদানের সুযোগ দেয়া হবে।

ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। চলতি মাসে ডিগ্রিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির গবেষণা সহায়তা ও প্রকাশনা বিভাগের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন  বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে ইন্টারন্যাশনাল বৃত্তি কিছুটা কমে যাবে। সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশের অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। বৈশ্বিক মহামারির কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। যেগুলো খোলা রয়েছে সেগুলোতে অর্থ বরাদ্দও কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে বিদেশি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা বা স্কলারশিপ থেকে পিছিয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে যেহেতু বিদেশ পাড়ি দেয়া জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে, সে কারণে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে দেশের অভ্যন্তরে বৃত্তির সংখ্যা কীভাবে বাড়ানো যায় সেই চিন্তাভাবনা চলছে।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, গত দুই দশকে দেশে অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও মানসম্মত প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়নি। এ কারণেও অনেকে বিদেশমুখী হচ্ছেন। তবে বিদেশি ডিগ্রি মানেই যে ভালো, এমন নয়। উচ্চশিক্ষার নামে নামসর্বস্ব কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নিয়ে এলে কোনো উপকার হবে না, বরং ডিগ্রির পাশাপাশি উদ্ভাবনী জ্ঞান আহরণকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।

এ শতকের শুরুতে আন্তর্জাতিক ডিগ্রিপ্রত্যাশী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগেরই গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও প্রতিবেশী ভারত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মালয়েশিয়াও তাদের পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে।

ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী, বিদেশে ডিগ্রি নিতে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ৫০ শতাংশের বর্তমান গন্তব্য মালয়েশিয়া। সাত বছরের ব্যবধানে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বেড়েছে ১৫০০ শতাংশ। ২০১০ সালে যেখানে মালয়েশিয়াগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৭২২, ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ হাজারে।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ প্রদানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের চুক্তি রয়েছে। সে চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর অনেকে বিনা খরচে ডিগ্রি লাভের সুযোগ পেয়ে থাকেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে এসব চুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো জটিলতার সৃষ্টি হয়নি।

সচিব বলেন, বিদেশে ডিগ্রি অর্জনে গত বছর আমাদের অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী বৃত্তির সুবিধার আওতায় এলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এখনও যেতে পারেননি। এমন পরিস্থিতিতে সময়ক্ষেপণ না করতে বাংলাদেশে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেমিস্টার শুরু করতে অথবা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেখানে যেতে চুক্তিভিত্তিক দেশগুলো থেকে পরামর্শ দেয়া হলেও আমরা এ প্রস্তাব মেনে নেইনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে কীভাবে এসব শিক্ষার্থীকে স্কলারশিপ দিয়ে, তারা যাতে সেমিস্টার শুরু করতে পারে সেই আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।