কমিশন বাণিজ্যে পরিণত শেবাচিমের মেডিসিন ইউনিট

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

শামীম আহমেদ ::শেবাচিম হাসপাতালের সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্ট হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা লুটছে মেডিসিন ওয়ার্ডের কতিপয় চিকিৎসক। হাসপাতালের ইনডোরের সিও রেজিষ্ট্রার পদবীর চিকিৎসকরা ইন্টার্ন ডাক্তার দিয়ে সিটি স্ক্যান ও পরীক্ষা নিরীক্ষা লেখিয়ে পছন্দসই ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দীর্ঘদিন থেকে কমিশন বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন।

এ ক্ষেত্রে ওইসব ওয়ার্ডের আয়া ও বুয়ারাও মোটা অংকের কমিশন নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রোগীর স্বজনদের দাবী, দালাল ধরার অভিযানের পূর্বে ওইসব ডাক্তার, আয়া ও বুয়াদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো উচিত।

রোগীরা জানায়, নাম লিখে দেয়ার কারনে তারা তাদের পছন্দ সই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা করাতে পারছেন না। এমনকি অন্যত্র সিটি স্ক্যান বা পরীক্ষা নিরীক্ষা করলে তাদের পরীক্ষার রিপোর্ট ছুড়ে ফেলে দেয় ওই ওয়ার্ডের চিকিৎসকেরা।

শেবাচিম সূত্রে জানা গেছে, ইনডোরে চিকিৎসা দেয়া ওয়ার্ডের সংখ্যা ১৯টি। এরমধ্যে মেডিসিন-১ মেডিসিন-৩ ও মেডিসিন-৪ নাম্বার ওর্য়াডের সিও রেজিস্ট্রার চিকিৎসক মাসুদ খান, মাহফুজ খান, ও মনিরুজ্জামান। সপ্তাহের শনি, সোম ও মঙ্গলবার এই তিন ওয়ার্ডের দায়িত্ব পালন করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফিমেল মেডিসিন ইউনিটের-৪ নাম্বার ওয়ার্ডে সুমাইয়া নামের ১৫বছরের এক রোগীকে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য একটি স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে লাইফ সিটি স্ক্যান সেন্টারের নাম লিখে দিয়েছে ডাক্তার। একই চিত্র দেখা গেছে আরো কয়েকটি স্লিপে।

সরাসরি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম লিখে দেয়ার ব্যাপারে রোগী সুমাইয়ার স্বজনরা জানান, স্লিপে টেস্টের নাম লিখে দেয় জানতাম কিন্তু ল্যাবের নাম লিখে দেয়া হয় তা দেখলাম এই প্রথম। মেডিসিন-৩ ও ৪ এর আরও কয়েকটি স্লিপে বরিশাল সিটি স্ক্যান সেন্টার ও লাইফ সিটির নাম দেখা গেছে।
শেবাচিমের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, শেবাচিমের সামনে এই দুটি সিটি স্ক্যান সেন্টারের মেশিনই সব থেকে পুরাতন এবং অল্প ক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টি স্লাইজের। মাল্টি স্লাইজের মেশিন হওয়ায় ফিল্ম চারভাগে ভাগ করে রিপোর্ট করায় অনেক সমস্যা ধরাও পরেনা। ফলে পরীক্ষ্ নি®ক্ষার ক্ষেত্রে এর থেকে আধুনিক মেশিন থাকা সত্ত্বেও সেখানে না পাঠিয়ে বেশি কমিশনের আশায় ওইসব ল্যাবে যাওয়ারই পরামর্শ দিচ্ছেন মেডিসিন ১, ৩ ও ৪ নাম্বার ওয়ার্ডের চিকিৎসকেরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে, লাইফ ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের এক কর্মচারি জানান, লাইফ এইড সিটি স্ক্যান সেন্টার প্রতিটি সিটি স্ক্যান বাবদ ছয় থেকে আটশ’ টাকা মেডিসিন ওয়ার্ডের ডাক্তারদের কমিশন দিতে হয়। যে কারনে মেডিসিন, ১, ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চিকিৎসকেরা সরাসরি লাইফ এইড ও বরিশাল সিটি সেন্টারের নাম লিখে দেন।

অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সিটি স্ক্যান ও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে ওই তিনটি ওয়ার্ডের সিও, রেজিস্ট্রার ও চিকিৎসকরা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা কমিশন পেয়ে থাকেন। লাইফ সিটি স্ক্যানের এক কর্মকর্তা জানান, ডাঃ মাসুদ ও লাইফ সিটির মালিক মাহাবুবের মধ্যে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে বেশি কমিশনের চুক্তিতে লাইফে সবরোগী পাঠানো হয়। তিনি আরও জানান, মেডিসিন-৪ এর চিকিৎসক মাসুদ ও মেডিসিন-৩ এর চিকিৎসক মাহফুজ চাঁদমারি রোডের মাদ্রাসার গলিতে একই বাসায় থাকার সুবাদে দুইজন মিলে মেডিসিন ইউনিটগুলোকে কমিশন বাণিজ্যে রূপ দিয়েছে।

এ ব্যাপারে শেবাচিমের মেডিসিন-৪ এর সিও রেজিস্ট্রার ডাঃ মাসুদ খান জানান, তার স্বাক্ষরিত কোন স্লিপে ল্যাবের নাম নেই। এমন প্রমান প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে বললে তখন তিনি বলেন, রোগী কোনটায় পরীক্ষা ভাল হবে জানতে চায়, তাই তারা ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম বলে দেন। ল্যাবের নাম লিখে দেয়ার যৌক্তিকতার প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনার থেকে আমি ভাল বুঝি কোথায় যেতে হবে আর কোথায় হবেনা। কতো কমিশনের বিনিময়ে ল্যাবের নাম লিখে দিচ্ছেন প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়েই তিনি মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

শেবাচিমের পরিচালক ডাঃ বাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যেহেতু হাসপাতালের সিটি স্ক্যান মেশিন নস্ট সেহেতু রোগী যেখানে খুশী সেখানে যাবেন। নাম লিখে দেবেন কেন? তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমি ঢাকায় আছি। বরিশালে ফিরে এ বিষয়ে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। একইসাথে ইনডোর আউট ডোরের আয়া, বুয়াদের বিষয়েও ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রয়োজনে প্রতি তিন মাস পরপর সকলকে রোস্টারের মাধ্যমে পরিবর্তন করে দায়িত্ব পালন করানো হবে।

 

জাতীয়প্রচ্ছদরাজনীতি এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে প্রথমেই স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন।তিনি বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদানের জন্য বৃহৎ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এজন্য চাই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। স্বাস্থ্য খাতে কোনো প্রকার অনিয়ম দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। এ লক্ষ্যে কমিটির সকলকে সচেষ্ট থাকতে হবে।শনিবার পিরোজপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন।সভায় পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা আজাদ, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহ আলম, পিরোজপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ফারুক আলম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হক, ইউএনও সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বাবু, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তানভীর সিকদার, ওসি মো. কামরুজ্জামান তালুকদার প্রমুখ বক্তব্য দেন।এর আগে মন্ত্রী স্বরূপকাঠি পৌর গোরস্থান ও শ্মশান ঘাটের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন শেষে পৌরসভার মেয়র মো. গোলাম কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে যোগ দেন।সেখানে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয় এমন কোন কাজ না করার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।পরে মন্ত্রী জাতীয় সমবায় দিবসের র‌্যালিতে অংশ গ্রহণ করেন। সব শেষে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সকল সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন।গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘দলে থাকবেন আর দলের সিদ্ধান্ত বিরোধী কাজ করবেন, তা হবে না। অনুপ্রবেশকারীকে দলে স্থান দেওয়া হবে না। শেখ হাসিনা রাত-দিন পরিশ্রম করে দেশের উন্নয়ন করে চলছেন। এ ধারা অব্যহত রাখতে আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করতে হবে।’
৫ years ago