কমলাপুর স্টেশনে ঘরমুখী মানুষের ঢল, ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

লোকে লোকারণ্য কমলাপুর রেলস্টেশন। ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপনে শেষ সময়ে আজ শুক্রবার স্টেশনে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের ঢল নেমেছে। যাত্রীদের চাপে ট্রেনের নির্ধারিত সময়সূচিতে বিপর্যয় নেমেছে। এ কারণে স্টেশনে অপেক্ষারত যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। কেউ কেউ গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শেষ সময়ে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপের কারণে ট্রেনগুলো ধীর গতিতে চলছে। এ জন্য নির্ধারিত সময়ে ট্রেনগুলো স্টেশনে পৌঁছাতে পারছে না।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ রাত ১২টা ৫ মিনিট পর্যন্ত ৫৯টি ট্রেন ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ৩২টি আন্তনগর, পাঁচটি ঈদের বিশেষ ট্রেন এবং বাকিগুলো মেইল ট্রেন। আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৮টি ট্রেন স্টেশন ছেড়ে গেছে।

স্টেশনে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ে স্টেশন ছাড়তে পারেনি অনেক ট্রেন। কয়েকটি এতটাই দেরি করেছে যে গরমে প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করতে করতে কোনো কোনো যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ প্ল্যাটফর্মে কাপড় বিছিয়ে শুয়ে পড়েছেন। শিশুরা আপন মনে খেলা শুরু করেছে। অপেক্ষারত যাত্রীরা ট্রেন দেরি করায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করছিলেন।

রাজশাহীগামী ধূমকেতু ট্রেনটির সকাল ছয়টায় ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। অথচ ট্রেনটি রাজশাহী থেকে ঢাকায় এসেছে সকাল ১০টায়। আর ছেড়ে গেছে ১০টা ৪৫ মিনিটে।
খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসের সকাল ৬টা ২০ মিনিটে স্টেশন ছাড়ার কথা ছিল। সেটি ছেড়েছে বেলা ১টা ১০ মিনিটে।
জামালপুরগামী তিস্তা ট্রেন সকাল সাড়ে ৭টায় ছাড়ার কথা ছিল, ছেড়েছে আটটা ১০ মিনিটে।
চিলাহাটিগামী নীল সাগর সকাল আটটায় ছাড়ার কথা ছিল। ট্রেনটি ঢাকায় এসেছে দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে। আর ছেড়েছে বেলা ১টা ১০ মিনিটে।
রংপুর এক্সপ্রেস সকাল নয়টায় ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঢাকায় পৌঁছায়নি। লালমনিরহাটগামী ঈদের বিশেষ ট্রেনটিও ঢাকায় এসে পৌঁছায়নি। অথচ সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে এটি ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। রাজশাহী এক্সপ্রেসের দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেই ট্রেনটিও রাজশাহী থেকে এখনো ঢাকা এসে পৌঁছায়নি।
চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতির সকাল পৌনে আটটায় ঢাকা ছাড়ার কথা ছিল। এ ট্রেনটি ৪০ মিনিট দেরিতে সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে স্টেশন ছেড়েছে।

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় নিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্তী বলেছেন, অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে ট্রেন চলছে ধীরে ধীরে। তবে ট্রেন স্টেশনে আসার পর ছাড়তে দেরি করছে না।

নির্ধারিত সময়ে ট্রেন ছেড়ে না যাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন অপেক্ষারত অনেক যাত্রী। শফিউল্লাহ শাকিল লালমনিরহাটগামী বিশেষ ট্রেনের যাত্রী। তিনি জানান, চার বন্ধু মিলে ঈদ উদ্‌যাপনে বাড়ি যাচ্ছেন। ট্রেন সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকায় তাঁরা আগেভাগে সকাল সাতটায় স্টেশনে চলে আসেন। অথচ বেলা পৌনে তিনটার সময়েও ট্রেনটি আসেনি।
সময় কাটাচ্ছেন কীভাবে জানতে চাইলে বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরে আর পত্রিকা পড়ে সময় পার করতে হচ্ছে। ট্রেনের টিকিট কাটা হয়ে গেছে। অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে দিনাজপুর যাচ্ছেন সুরুজ আলী। টিকিট কাটা নিয়ে বিভ্রান্তির শিকার হয়ে প্রচণ্ড বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে তাঁকে। কী হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, তিনি আজ সকাল সাতটায় স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে স্টেশনে এসেছেন। সকাল আটটার ট্রেনের জন্য টিকিট কাটাই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু ধরেই নিয়েছিলেন সকালে এসেছেন তাই সকালের টিকিটই তাঁকে দেওয়া হবে। এ কারণে সকাল না রাত তা উল্লেখ করেননি। এখন টিকিট কাটার পর দেখছেন তাঁকে রাত আটটার একতা ট্রেনের টিকিট দেওয়া হয়েছে। যে হারে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে, তাতে রাত আটটার ট্রেন কয়টায় আসে তা নিয়ে তিনি চিন্তিত।

সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে বেলা পৌনে তিনটায় স্টেশনে আসেন রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন।