#

জলবায়ু পরিবর্তনকে বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় সংকট উল্লেখ করে এর
মোকাবিলায় তরুণদের আরো সোচ্চার ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ,
বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। তিনি
বলেছেন, উন্নত দেশের কারণে আমরা জলবায়ু বিষয়ক ক্ষয় ক্ষতির মুখে পড়েছি।
জলবায়ু সংকট সমাধানে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ কী ভাবছে তা নিয়ে বসে না থেকে
তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। যদিও তারা তা করে দেখাচ্ছেন। তবে, এ ক্ষেত্রে
যথাযথ অর্থায়ন ও সহযোগিতা বাড়াতে হবে।

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় রাজধানী ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের
পার্লামেন্ট মেম্বার ক্লাবের এলডি হলে ‘কপ২৭ ডিব্রিফিং’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশন ও
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-এর অংশীদারিত্বে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে
ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে বক্তারা নাগরিক সমাজ ও তরুণদের প্রচেষ্টার সাথে সরকারি
উদ্যোগগুলোকে সারিবদ্ধ করার উপর জোর দেন। কারণ কপ ২৭ -এর সময় নির্ধারিত
উদ্দেশ্যগুলো এখনও সম্পূর্ণরূপে অর্জিত হয়নি। হতাশা সত্ত্বেও, বক্তারা
কপ কাঠামোর মধ্যে থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। কারন এটি ছাড়া আর
কোন উপলব্ধ পথ নেই। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার
প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন তারা।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের চেয়ারপার্সন
তানভীর শাকিল জয় এমপি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের অস্তিত্বের বিষয়।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তরুণরা সাহসের
সাথে কাজ করছে। রাজনীতিবিদদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে তারা। তবে, জলবায়ু
পরিবর্তনের ক্ষতি রোধ করতে শুধু অর্থ দিয়ে হবে না। প্রযুক্তিগত সহায়তারও
প্রয়োজন আছে।

অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন
মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন,
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমালয়ের হিমবাহগুলোর অন্তত এক তৃতীয়াংশ গলে
যাওয়ার হুমকিতে রয়েছে। কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে যদি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির
হারকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায়, তারপরও হিমালয়
অঞ্চলের হিমবাহ গলা থামবেনা। উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে
গলে যাবে ৫০ শতাংশ হিমবাহ। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করতে আমাদের যে
স্ট্যান্ডিং কমিটি আছে তারা কাজ করে যাচ্ছে।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ও
জলবায়ু বিজ্ঞানী প্রফেসর সালিমুল হক বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ে এখন
গোটা বিশ্বই চিন্তিত। কারণ এক হিসেবে দেখা গেছে, গত ১৫০ বছরে উষ্ণায়নের
কারণে সমুদ্রের পানির স্তর বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। হিমবাহ ও বরফের চাদর
গলে পানি হচ্ছে, আর সেই পানি গিয়ে মিশছে সমুদ্রে। সম্প্রতি এক তথ্যে
প্রকাশ পেয়েছে আগামী দশকের মধ্যে সেই পানির জন্য সমুদ্রের পানির স্তর
দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। আমাদের সবাইকে নিয়েই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর ম্যাট ক্যানেল বলেন, “জলবায়ু
পরিবর্তন মোকাবেলায় কপ২৭ এবং গ্লাসগো জলবায়ু চুক্তিতে দেওয়া
প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ৷ যুক্তরাজ্য সরকার
১.৫ ডিগ্রি বাঁচিয়ে রাখার জন্য জলবায়ু প্রতিশ্রুতিতে বর্ধিত
উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিকাশে বাংলাদেশ সহ সকল দেশের সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশের মধ্যে নীতিগত সম্পৃক্ততা, দক্ষতা ভাগাভাগি এবং
অর্থায়নের উপর ভিত্তি করে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব রয়েছে। একসাথে,
আমরা জলবায়ু প্রতিশ্রুতিগুলোকে কাজে পরিণত করছি। কপ ২৮ প্রস্তুতির
গ্রহণের জন্য এখন থেকে সজাগ হওয়ার আমন্ত্রণ জানান তিনি।

ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারপারসন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও
খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ওয়াসেকা আয়েশা খান
বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় থাকা দেশের মধ্যে
একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। গত এক দশকের তুলনায় জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির
বিষয়ে এখন সচেতনতা অনেক বেড়েছে। সরকারের নীতি নির্ধারণেও তার প্রভাব
পড়ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যে পদক্ষেপ গ্রহণ
করেছেন তাতে আমরা দ্রুত সমাধান পাবো।

মুক্ত আলোচনায় কপ২৭ সম্মেলনে বাংলাদেশের অফিসিয়াল ইয়ুথ ডেলিগেট ও ইয়ুথনেট
ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান বলেন, অভিযোজন
এবং ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার পাশাপাশি কার্বন নির্গমন হ্রাস করতেই হবে।
জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার
ঘটাতে হবে। রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানির প্রধানকে কপ২৮ সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট
হিসেবে ঘোষনার সিদ্ধান্তে উষ্মা প্রকাশ করে তিনি কপ সম্মেলনে জীবাশ্ম
জ্বালানির দালালদের আগ্রাসন রুখে দিতে সম্মিলিত আন্দোলনে গড়ে তোলার উপর
জোড় দেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দলের ইশতিহারে
শক্তিশালী জলবায়ু অঙ্গীকার এবং সবুজ জ্বালানি শক্তির উত্তরণের
সুনির্দিষ্ট ঘোষণা সংযুক্ত করার আহবান জানিয়ে এই তরুণ জলবায়ুকর্মী
বিদ্যমান জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ ও জ্বালানি সংক্রান্ত নীতিমালা
বাস্তবায়নে সমন্বয় এবং সম্মিলিত অংশীদারিত্ব বাড়ানো, জলবায়ু সুবিচার,
খাদ্য ও পুষ্টি সুরক্ষা এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহবান
জানান।

কপ ২৭ ডিব্রিফিং অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি
রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুয়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি,
মীর মুস্তাক আহমেদ রবি এমপি, আহসান আদেলুর রহমান এমপি, সুইডেন দূতাবাসের
হেড অফ কোঅপারেশন এবং ডেপুটি হেড অফ মিশন মারিয়া স্ট্রিডসম্যান,
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের মিনিস্টার কাউন্সিলর
মাউরিজিও চিয়ান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহুপাক্ষিক অর্থনৈতিক বিষয়ক
শাখার মহাপরিচালক ফাইয়াজ মুর্শিদ কাজী, বিদ্যুৎ, শক্তি ও খনিজ সম্পদ
মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের মহাপরিচালক ইঞ্জি. মোহাম্মদ হোসেন, পরিবেশ,
বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন-১)
লুবনা ইয়াসমিন প্রমুখ।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন