কন্যাসন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরলেন সেই ইউএনও

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

সব উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ইউএনও হোসনে আরা বীণা বাসায় ফিরেছেন তার কন্যাসন্তানকে নিয়ে। শুক্রবার দুপুরে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতাল থেকে এক মাস দশ দিন পর বাসায় ফেরেন তিনি। নিজের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়ে দোয়া কামনা করেন কন্যা ইয়োনার জন্য। দীর্ঘ নয় বছর পর প্রথমবারের মতো মা হন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এই নির্বাহী কর্মকর্তা।

শুক্রবার কন্যা ইয়োনাকে নিয়ে বাসায় ফিরে নিজের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বীণা- ‘মহান আল্লাহর অপার রহমতে দীর্ঘ এক মাস দশ দিন পর আমার ইয়োনা মামণি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছে। সবাই আমার মামণির দীর্ঘায়ু ও সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন।’

গত ৪ ফেব্রুয়ারি ওএসডি করা হলে মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন সন্তানসম্ভবা হোসনে আরা বীণা। পরে একটি প্রিম্যাচিউরড কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। জন্মের পর থেকে তার সন্তানটি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিল।

এদিকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি নিজের ফেসবুক আইডিতে তিনি একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন- একজন নারী হিসেবে নয় বছরের দাম্পত্য জীবনে বহু চিকিৎসার পরও যখন সন্তান লাভ করতে পারিনি, তখন বিগত পাঁচ মাস আগে জানতে পারি আমি দুই মাসের সন্তানসম্ভবা। আর এ অবস্থায় নারায়ণগঞ্জের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচনের কাজ অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন করি। এর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বাহবাও পেয়েছি। একজন নারী কর্মকর্তা হিসেবে যখন এগিয়ে যাচ্ছিলাম, তখনই এক বিশেষ কর্মকর্তা বিভিন্ন মহলে পাঁয়তারা করছিলেন বদলি করার জন্য। এরই মধ্যে ২০১৯ সালের ২০ এপ্রিল সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ডাক্তারি পরীক্ষার সময় একজন ব্যাচমেটের মাধ্যমে জানতে পারি, আমাকে ওএসডি অর্থাৎ বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। আমার অপরাধ হলো আমি সন্তানসম্ভবা। এ খবর শুনে প্রচণ্ড মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে আমার ফুসফুসে ব্লাড সার্কুলেশন অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। ফলে পেটের সন্তানের অপিজেন সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায়। এতে গর্ভের শিশু নড়াচড়া বন্ধ করে দিলে ডাক্তার ও পরিবারের সিদ্ধান্তে দুই মাস আগেই প্রিম্যাচিউরড শিশুকে সিজার করে বের করতে হয়। আর এখন সেই শিশু ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালের এনআইসিউতে বেঁচে থাকার জন্য প্রাণপন যুদ্ধ করে যাচ্ছে।

তিনি স্ট্যাটাসে আরও লেখেন- ‘আমার অপরাধ হলো আমি সন্তানসম্ভবা, আর তার চেয়েও বড় কারণ হলো সেই তথাকথিত ক্ষমতাধর কর্মকর্তার উপরের মহল কর্তৃক তদবির।’

তিনি তার স্ট্যাটাসে বিশেষ কর্মকর্তার পরিচয় উল্লেখ করেননি।

ইউএনও হোসনে আরা বীণার স্ট্যাটাস নিয়ে ওই সময় সমকালসহ আরও দুটি দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেদিন প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়, ওইদিনই জাতীয় সংসদে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি তার ওএসডির আদেশ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।