ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিধ্বস্ত বিমানের পাইলটকে অবতরণের ভুল নির্দেশনা দেয়া হয় বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম (এটিসি) থেকে। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আগ মুহূর্তে বিমানের পাইলটের সঙ্গে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ কথোপকথনে এমনই আভাস মিলেছে।
নেপালের ইংরেজি দৈনিক নেপালি টাইমস কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে পাইলটের সর্বশেষ কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড হাতে পেয়েছে। নেপালি এ দৈনিক বলছে, কন্ট্রোল রুম থেকে ভুল বার্তা দেয়ার কারণেই ককপিটে দ্বিধায় পড়েন পাইলট।
বিমানটি অবতরণের আগে ইউএস বাংলা ফ্লাইটের পাইলটের সঙ্গে কন্ট্রোল রুমের চার মিনিট কথোপকথন হয়। এতে কন্ট্রোল রুমের দেয়া নির্দেশনা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়। বিমানবন্দরের রানওয়ে ০২ (দক্ষিণের শেষ প্রান্তের) ও রানওয়ে ২০ নিয়েই দেখা দেয় এ দ্বিধা।
বিমানটি যখন অবতরণের অনুমতি চায় তখন অন্য বিমানের নেপালি পাইলটরা বুঝতে পারেন যে এটিসিকে সতর্ক করে দিচ্ছেন ইউএস-বাংলার পাইলট। এমনকি কথাবার্তায় ইউএস-বাংলার পাইলটকে বিচলিত মনে হয়। নেপালি পাইলটরা সে সময় জানান, যে কোনো ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি এড়াতে ইউএস-বাংলার পাইলটকে রাডারের সহায়তা করা উচিত।
অডিও রেকর্ডের শুরুর দিকে শোনা যায়, কন্ট্রোল রুম থেকে বিমানের পাইলটকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, আমি আবারো বলছি, রানওয়ের ২০ এর দিকে অগ্রসর হবেন না। এমনকি তাকে কিছুক্ষণের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়। এছাড়া অন্য একটি বিমান অবতরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকায় তাকে অবতরণে নিষেধ করা হয়।
পরে এটিসি পাইলটের কাছে জানতে চায়, তিনি রানওয়ে ০২ নাকি ২০-তে অবতরণ করতে চান। এবার পাইলট জানান, আমরা ২০ নাম্বার রানওয়েতে অবতরণ করতে চাই। তখন তাকে রানওয়ের শেষ প্রান্তে অবতরণের অনুমতি দেয়া হয়।
পরে পাইলট আবার জানতে চান তিনি রানওয়ের নির্দিষ্ট এলাকায় আছেন কি-না। তখন তাকে না করে দেয়া হয়। এবার তাকে ডান দিকে সরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় এটিসি। পরে পাইলট ইতিবাচক সাড়া দেয়।
এ সময় পাইলট আবার বলেন, রানওয়ে ০২ অবতরণের জন্য ফ্রি (যদিও তিনি রানওয়ে ২০ -এ অবতরণের জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন)। তখন এটিসি থেকে তাকে রানওয়ে ০২- তে অবতরণের অনুমতি দেয়া হয়। একই সময়ে সেনাবাহিনীর একটি বিমান বিমানবন্দর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল; এ বিমানও কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করে অবতরণের সংকেত চায়। এ সময় এটিসি জানায়, বাংলাদেশি বিমান অবতরণের জন্য রানওয়ে ২০ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ইউএস-বাংলার পাইলটের সর্বশেষ কথা অস্পষ্ট বোঝা যায়। তিনি বলেন, স্যার, আমরা কি অবতরণ করতে পারি? কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর এটিসির নিয়ন্ত্রক চিৎকার করে বলেন, আমি আবারো বলছি, বাঁক নিন…!
এরপর কিছুক্ষণ কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে টাওয়ারে আগুনের সংকেত আসে। যাতে পরিষ্কার হয় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় অপর একটি বিমানের পাইলট এটিসির কাছে জানতে চায়, রানওয়ে কী বন্ধ রয়েছে? এটিসি তখন নিশ্চিত করে জানায়, রানওয়ে বন্ধ রয়েছে।
সোমবার নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ৪ ক্রু ও ৬৭ আরোহীবাহী বাংলাদেশি বেসরকারি এ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এতে সর্বশেষ ৫০ জনের প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে আরো ২১ যাত্রী।
সূত্র : নেপালি টাইমস।