অনলাইন ডেস্ক: কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন বরিশাল জেলার ৬টি আসনের হেভিওয়েট নেতারা। এদের মধ্যে কেউ বর্তমান সাংসদ কিংবা সাবেক সাংসদ। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ মুহুর্তে ঘরে বাইরে এমন চ্যালেঞ্জ মোকাবেল করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নেতাদের। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলেই এবার প্রার্থীর ছড়াছড়ি। এর মধ্যে পোড় খাওয়া অনেক জেষ্ঠ্য নেতা যেমন রয়েছে, তেমনি চমক লাগানো নতুন প্রার্থীও আছে। হেভিওয়েট নেতারা মনে করেন, ভোট এলেই মৌসুমী নেতার আভির্ভাব ঘটে। তবে দুই দলের নতুন প্রার্থীরাও মনোনয়ন পেতে একাট্টা হচ্ছেন কোন কোন আসনে।
বরিশাল-২(উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এ্যাড. তালুকদার মো: ইউনুস। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকও। আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতাকে এবার এক ডজন দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এর মধ্যে যেমন ধনাঢ্য প্রার্থী রয়েছে, তেমনি পোড় খাওয়া আ’লীগ নেতা ও সাবেক এমপিও রয়েছেন। গত ৮ নভেম্বর জেলা ও মহানগর বর্ধিত সভায় মনোনয়ন প্রত্যাশী আ’লীগ নেতা গোলাম ফারুক এ আসনে স্থানীয় প্রার্থী দেয়ার দাবী জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী জানিয়েছেন, মনোনয়ন বোর্ডে গিয়ে তারা সকলে এ আসনের জন্য স্থানীয় প্রার্থী দেয়ার দাবী জানাবেন। কেননা এমপি ইউনুস বরিশাল-১ আসনের বাসিন্দা। অপরদিকে এ আসনে বিএনপির ধনাঢ্য প্রার্থী এস সরফুদ্দিন সান্টু ও সাবেক হুইপ শহিদুল হক জামালও প্রার্থী হচ্ছেন। সেক্ষেত্রে সাবেক হুইপ জামালকে নিয়ে টেনশনে পড়েছেন এমপি ইউনুসের পাশাপাশি এ আসনে বিএনপির গতবারের এমপি প্রার্থী সান্টুও।
বরিশাল-৩(বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের ওয়াকার্সপার্টির এমপি শেখ টিপু সুলতানের বিপরীতে এবার প্রার্থী হচ্ছেন যুবমৈত্রীর কেন্দ্রীয় নেতা আতিকুর রহমান। এ আসনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু যেমন প্রার্থী, তেমনি ইতিহাসবিদ সিরাজ উদ্দিন আহমেদও আ’লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এদিকে বিএনপির হেভিওয়েট নেতা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান এবং এ্যাড. জয়নাল আবেদিনও এ আসন থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। এ অবস্থায় এমপি টিপুকে জোটের এবং জোটের বাইরের প্রার্থীকেও মোকাবেলার চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়েছে।অপরদিকে বিএনপির হেভিওয়েট সেলিমা ও জয়নালকেও এবার ঘরে বাইরে কঠিন বিপাকে পড়তে হচ্ছে। যুবমৈত্রীর কেন্দ্রীয় নেতা আতিকুর রহমান বলেন, তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জনগনের পাশে থেকে কাছ করছেন। জনগনই বিচার করবেন জোট, মহাজোট নাকি যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করা উচিত।
বরিশাল-৪(হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের বর্তমান এমপি পংকজ নাথের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন দলীয় ৬জন। এর মধ্যে আ’লীগের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মি আহমেদও রয়েছেন। অপরদিকে এ আসনের বিএনপির সাবেক এমপি মেজবা উদ্দিন ফরহাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন হাফডজন নেতা। এর মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনও রয়েছেন। বরিশাল-৪ আসনে আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এ্যাড. আফজালুল করিম বলেন, সবাই এবার এমপির বিপরীতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। বিএনপির সাবেক এমপি মেজবা উদ্দিন ফরহাদ বলেন, যে কেউ মনোনয়ন নিতে পারেন।
মর্যাদার আসন বরিশাল-৫(সদর) আসনের বর্তমান এমপি জেবুন্নেছা আফরোজের বিপরীতে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন আরও ১০জন আ’লীগ নেতা। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য মেহরপুরের মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলা সরকারের প্রথম গার্ড অব অর্নারকারী মাহবুব উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম), মহানগর আ’লীগের সভাপতি এ্যাড. গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু। অপরদিকে এ আসনের একাধিবারের এমপি বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ন মহাসচিব মজিবর রহমানের বিপরীতে মনোনয়ন সংগ্রহকারী উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছেন দক্ষিন জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চান, সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের রহমাতুল্লাহ। মহানগর আ’লীগের সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, এ আসনে বিএনপির শক্ত প্রার্থী রয়েছে। তাই দক্ষ প্রার্থী না দিলে বিএনপকে মোকাবেলা করা কঠিন হবে। দক্ষিন জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চান বলেন, উড়ে এসে জুড়ে বসা কেউ যেন মনোনয়ন না পান এমনটাই দাবী নেতাকর্মীদের।
বরিশাল-৬(বাকেরগঞ্জ) আসনে এবার জাতীয় পার্টির এমপি নাসরিন জাহান রতœার বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন আ’লীগ। গত ৮ নভেম্বর আ’লীগের বর্ধিত সভায় মনোনয়ন সংগ্রহকারী বাকেরগঞ্জ পৌর মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া বলেন, তারা মহাজোটের জট থেকে মুক্তি চান। এ আসনে হাফডজন নেতা আ’লীগের মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। এদিকে বিএনপির সাবেক এমপি আবুল হোসেনের বিপরীতে ৬জন নেতা মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। এমনকি সাবেক এমপি আবুলকে মনোনয়ন না দেয়ার জন্য গত ১১ নভেম্বর বরিশাল প্রেসক্লাবে বাকেরগঞ্জ বিএনপির একাংশ সংবাদ সম্মেলন করেন।