ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানকে ওয়াসার পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে দেয়া মিজানুর রহমানকে হুমকি দিয়েছেন ওয়াসার কর্মকর্তারা। আজ বুধবার দুপুরে ওয়াসার কয়েকজন কর্মকর্তা তার বাড়ি গিয়ে তাকে শাসিয়ে এসেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
হুমকি প্রসঙ্গে মিজানুর রহমান বলেন, ‘সকাল থেকেই অপরিচিত অনেকে বাসায় আসছে। আমি আমার স্ত্রীকে বলেছি যাতে অপরিচিত কাউকে ঢুকতে না দেই। কিন্তু ওয়াসার কয়েকজন লোক অতর্কিতভাবে আমার বাসায় ঢুকে যায়। আমার স্ত্রী তখনই আমাকে ফোন দেয়। আমি তখন এলাকার কয়েকটি ওয়াসার কল থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করছিলাম। ফোন পেয়ে তৎক্ষণাৎ আমি বাসায় যাই। গিয়ে দেখি তারা মোবাইলে ভিডিও করছেন। তারা বলেছেন, আমরা বস্তি এলাকায় থাকি, চুরি করে পানি ব্যবহার করি, বিল দেই না। আমরা নাকি গতকাল শরবত নিয়ে নাটক করেছি। তারা আমাদের দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। আমার সঙ্গে আক্রমণাত্মক কথা বলতে থাকে। বারবার আমাকে আক্রমণ করতে থাকে। তখন আমিও মোবাইলে ভিডিও করা শুরু করি। তখন তারা চলে যায়।’
পানির লাইন ঠিক না করে জুরাইনবাসীকে হুমকি দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানকে ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফোন ধরেননি ওয়াসার জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল কাদেরও।
তবে হুমকির বিষয়ে লিখিত কিংবা মৌখিকভাবে কদমতলী থানা পুলিশকে কিছু জানাননি মিজানুর রহমান।
‘ঢাকা ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়’ গত শনিবার (২০ এপ্রিল) সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ জানায় পুরান ঢাকার জুরাইনবাসী। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) কারওয়ানবাজারে অবস্থিত ওয়াসা ভবনের সামনে ‘ওয়াসার পানির শরবত’ বানিয়ে এমডিকে খাওয়াতে আসেন জুরাইনবাসী। তবে এমডি না থাকায় শরবত না খাওয়ায়েই প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরে যান তারা।
সকালে তাদের প্রথমে ওয়াসা ভবনে প্রবেশে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাধা পেয়ে ঢাকা ওয়াসা ভবনের প্রধান ফটকে জুরাইন এলাকাবাসীর পক্ষে মিজানুর রহমানসহ তিন-চারজন অবস্থান নেন। অপেক্ষা করতে থাকেন এমডির জন্য। তাদের অবস্থানে আশপাশের উৎসুক মানুষের জটলা তৈরি হয়। জুরাইনবাসী ততক্ষণে ওয়াসার পানি ও লেবু-চিনি দিয়ে শরবত তৈরি করেন।
একপর্যায়ে তাদের ওয়াসা ভবনে ঢোকার অনুমতি মেলে। তবে ওয়াসার এমডি উপস্থিত না থাকায় তাদের সঙ্গে কথা বলেন ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহিদ উদ্দিন। পরিচালকের রুমেই জুরাইনবাসীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন তারা। বৈঠকে মিজানুর রহমানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস ও নিশ্চয়তা দেন সহিদ উদ্দিন।
বৈঠকে জুরাইনবাসীকে নিয়ে আসা পানি দিয়ে বানানো শরবত পানের আহ্বান জানালে সহিদ উদ্দিন বলেন, ‘আজ শরবত খাবো না। ওই এলাকার পানির সমস্যার সমাধান করে সেই পানি দিয়ে শরবত খাবো।’
ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়; ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাসকিম এ খানের বক্তব্যকে সমর্থন করে ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহিদ উদ্দিন জানান, ওয়াটার অ্যান্ড সুয়ারেজ অথরিটি (ওয়াসা) পানি খেয়ে কেউ অসুস্থ হলে তার দায়দায়িত্ব নেবে ওয়াসা।
সহিদ উদ্দিন বলেন, ‘এমডির বক্তব্য শতভাগ সঠিক। কারণ, আমাদের যে গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করি সেই পানি শতভাগ নিরাপদ। এছাড়াও পানি উৎপন্নস্থল, রিজার্ভে দেয়ার আগে ও পরে তিন দফা পরীক্ষা করা হয়। পানিতে মানুষের জন্য ক্ষতিকর কিছু পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ক্লোরিন দিয়ে তা বিশুদ্ধ করা হয়।’
বৈঠক শেষে মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ওয়াসার এমডির সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলাম। আমরা তার পদত্যাগ চাই। যাই হোক, ওনারা আমাদের অভিযোগ শুনেছেন। দ্রুত সমাধান করবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা দেখব তারা কী করেন। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না হলে জুরাইনসহ রাজধানীবাসীকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে।’
এর আগে সকালে ওয়াসা ভবনের সামনে ‘শরবত’ নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সময় মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এলাকার ওয়াসার পানি ড্রেনের পানির মতো অপরিষ্কার। পান করা তো দূরের কথা, গন্ধে হাতে নেয়াই যায় না। এ অবস্থায় ওয়াসার এমডি কীভাবে বলেন, ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়, বিশুদ্ধ?’
মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘২০১২ সালে জুরাইনের সাড়ে ৩ হাজার বাসিন্দার গণস্বাক্ষর নিয়ে ওয়াসার এমডি বরাবর একটি অভিযোগ করেছিলাম। সেই অভিযোগে কোনো কাজ হয়নি। এখনো প্রতিদিন ময়লা পানি আসে। কয়েক বছর ধরে ওয়াসার পানি শুধুমাত্র গোসল, কাপড় ও বাসন ধোয়ার জন্য ব্যবহার করছি। খাওয়ার জন্য মসজিদের টিউবওয়েলের পানি কিনে খাচ্ছি। প্রতি ১০ লিটার পানির জন্য ২ টাকা দিতে হয়।’