চলে গেলেন দেশের ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল শিল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা আলহাজ এসএম নজরুল ইসলাম। বিশিষ্ট শিল্পপতি, সমাজসেবক ওয়ালটন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম রবিবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। তিনি স্ত্রী, পাঁচ পুত্র, দুই মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
কর্মজীবনে সফল ব্যক্তিত্ব নজরুল ইসলাম ৭ মে ১৯২৪ সালে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গোসাই জোয়াইর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম এস.এম. আতাহার আলী তালুকদার এবং মাতার নাম মোসাম্মৎ শামছুন নাহার।
নজরুল ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদন শিল্পের পথিকৃৎ। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল, আইওটি, হোম ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্সেস প্রস্তুত ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন ও মার্সেল প্রতিষ্ঠা করেন।
ওয়ালটন গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এসএম নজরুল ইসলামের মৃত্যুতে ওয়ালটন পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। আমরা তাঁর বিদেহি আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
সোমবার সকাল পৌনে ১১টায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ওয়ালটন গ্রুপের করপোরেট অফিসে মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দুপুর ১২টায় গাজীপুরের চন্দ্রায় অবস্থিত ওয়ালটন কারখানায় মরহুমের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মরহুমের তৃতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বাদ আসর টাঙ্গাইলের গোসাই জোয়াইরে তাঁর নিজ গ্রামে। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তিনি শায়িত হবেন।
মরহুমের বড় ছেলে ওয়ালটন গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এসএম নূরুল আলম রেজভী দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশবাসীকে আরো উত্তম সেবা দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
দেশের মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে ইলেকট্রনিক্স পণ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে নজরুল ইসলাম ১৯৭৭ সালে ওয়ালটন গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। তার দূরদর্শিতা ও সুযোগ্য পরিচালনায় ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা ওয়ালটন পণ্যের সুনাম ও খ্যাতি আজ দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।
ব্যবসায়িক সাফল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে নজরুল ইসলাম বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি টাঙ্গাইল জেলা সমবায় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, টাঙ্গাইল জেলা সার ডিলার সমিতির সভাপতি, টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের পরিচালক এবং টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় জমি বন্ধকী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
তিনি তার গ্রামে এসএম নজরুল ইসলাম কারিগরি বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। এছাড়া মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত সাহায্য-সহযোগিতা দিতেন। তিনি গ্রামের দুস্থ, বৃদ্ধ ও মহিলাদের জন্য বয়স্ক ভাতা প্রকল্প চালু করেছেন। তার মৃত্যু ওয়ালটন পরিবারের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে মনে করছে ওয়ালটন ও মার্সেল পরিবার।