ওয়াকিটকি হাতে পুলিশ পরিচয় দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে গরুবোঝাই ট্রলার আটকে বেপারীদের মারধর করে ৬৫টি গরু ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে।
রোববার দুপুর ১টার দিকে নারায়ণগঞ্জের তালতলা হাটের ইজারাদার শাহ আলম গাজি টেনুর লোকজন এ ঘটনা ঘটনায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অভিযান চালান ফতুল্লা থানা পুলিশের ওসি শাহ মোহাম্মদ মঞ্জুর কাদের ও পরিদর্শক (তদন্ত) শাহজালাল।
পুলিশ দেখেই ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন হাওলাদারসহ তাদের লোকজন। আলাউদ্দিন হাওলাদার টেনু বাহিনীর সক্রিয় সদস্য।
জানা গেছে, ওই হাটের লোকজন গত দুইদিনে বুড়িগঙ্গার মাঝনদীতে প্রায় ৬-৭টি ট্রলার আটকে ১০-১২ জন গরুর বেপারীকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে তাদের কয়েকশ গরু। ভয়ে এ ব্যাপারে কেউ থানায় অভিযোগ না করলেও আতঙ্কের মধ্যে বুড়িগঙ্গা দিয়ে ট্রলারযোগে চলাচল করছেন বেপারীরা।
এছাড়া ঢাকা-পাগলা-নারায়ণগঞ্জ ও মন্সিগঞ্জ পুরাতন সড়কের তালতলা এলাকায় উভয় পাশে টেনুর এ হাট বসানোর কারণে যানচল ব্যাহত হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
ফরিদপুরের গরু বেপারী শেখ শফিক জানান, ফরিদপুর নগর কান্দা থেকে ৫ জন বেপারী ৬৫টি গরু নিয়ে ট্রলারযোগে বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে ঢাকা নয়াবাজারের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। এ সময় ফতুল্লার পাগলা তালতলা এলাকায় আসা মাত্র ৬/৭টি ট্রলারযোগে প্রায় ৪০-৪৫ জন লোক তাদের পথরোধ করেন।
তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের হাতে ওয়াকিটকি ছিল। তারা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে বলে ট্রলার তীরে ভিড়াতে। ট্রলারটি তীরে ভিড়াতেই ট্রলার থেকে জোর করে গরু নিয়ে যায় তারা। বাধা দিলে বেপারীদের বেধড়ক মারধর করা হয়।
শেখ শফিক বলেন, এরপর গরুগুলো নদীর তীরে নামিয়ে আমাদের ট্রলার ছেড়ে দেয়। আমরা এ এলাকার থানা চিনি না ও পুলিশের নম্বর জানি না। তাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা চাইতে পারিনি।
গরু বেপারী শেখ শফিক আরও বলেন, আমরা আসার পথে শুনেছি গত দুইদিনে তালতলা এলাকায় প্রায় ৬-৭টি ট্রলার আটকে ১০-১২জন গরুর বেপারীকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে ভয়ে ভয়ে আসছিলাম। কিন্তু আমরাও সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রেহাই পাইনি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক তৎপর প্রচার করেছে। কিন্তু বাস্তবে তা চোখে পড়েনি। বিভিন্ন স্থানেই দিতে হচ্ছে চাঁদা। আগামীতে আর ব্যবসা করব না।
ইজারাদার শাহ আলম গাজি টেনু বলেন, সদর উপজেলা থেকে অস্থায়ী এই হাট ইজারা নিয়েছি। রাস্তার পাশে হলে যানজট সৃষ্টি হতে দেই না। ওয়াকিটকি একটি কোম্পানির। আমাদের প্রয়োজনে এটি ব্যবহার করছি। নদীতে কোনো বেপারীকে মারধর করা হয়নি। কয়েকজন বেপারীর সঙ্গে আমাদের লোকজনের তর্ক হয়ে দুই-একজনের মাথা ফেটেছে। জোর করে গরু না আনলে হাট চলবে না। তবে বেপারীদের যাতে সমস্যা আর না হয় সেজন্য আমাদের লোকজনকে বলে দেব।
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের ওসি মঞ্জুর কাদের বলেন, ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন ইজারাদার গাজী টেনু। ব্যাপারটি তাদের ভুল হয়েছে বলেও স্বীকার করেছেন। তবে পরবর্তীতে এমন ঘটনা আর ঘটাবেন না বলেও তারা নিশ্চিত করেন। পরে তাকে সর্তক করে দেয়া হয়েছে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।