ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণেই কি সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে!

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

দিনদিন বাড়ছে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণের হার সাড়ে পাঁচ শতাংশেরও বেশি।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি ৮৫২টি ল্যাবরেটরিতে ২০ হাজার ৮৯০টি নমুনা সংগ্রহ ও ২০ হাজার ২০৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে শনাক্ত হয় ১ হাজার ১৪৬ জন। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

এছাড়া সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত একজন নারী রোগীর মৃত্যু হয়। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দশোর্ধ্ব এ মেয়ে শিশুটি ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিল।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও রোগতত্ত্ববিদদের মতে, কোনো দেশে করোনা সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের নিচে থাকলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মনে করা হয়। দেশে প্রায় সাড়ে তিনমাস আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর আক্রান্তের হার ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ ছিল। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সংক্রমণের হার হ্রাস পেয়ে দুই শতাংশের নিচে নেমে আসে। তবে গত ২০ ডিসেম্বরের পর থেকে সংক্রমণের হার ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। নতুন বছর শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের হার দ্বিগুণের বেশি হয়।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোশতাক হোসেন বলেন, ডেল্টা-ওমিক্রন উভয় ভ্যারিয়েন্টের করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। এ পর্যন্ত ওমিক্রনে দেশে ২০ জন আক্রান্তের খবর রয়েছে। এখনো পর্যন্ত ডেল্টা ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, খুব দ্রুতই ওমিক্রনের সংক্রমণ সংখ্যায় আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, ওমিক্রনের সংক্রমণ এখনো ক্লাস্টার পর্যায়ে রয়েছে। সংক্রমণ এখনো পর্যন্ত কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়েনি বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সরকারের তিন বছরপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বাড়ছে মন্তব্য করেন। এখনো যারা করোনার প্রতিষেধক টিকা নেননি তাদেরকে দ্রুত টিকা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলতি মাসে এক কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। দেশে নয় কোটি ডোজ টিকার মজুত রয়েছে বলেও তিনি জানান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারি করোনা নমুনা পরীক্ষায় ৩৭০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয় এবং সংক্রমণের হার ছিল ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ ছিল। ২ জানুয়ারি করোনা নমুনা পরীক্ষায় ৫৫৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত এবং সংক্রমণের হার ২ দশমিক ৯১ শতাংশ। এরপর ৩ জানুয়ারি করোনা নমুনা পরীক্ষায় ৬৬৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত এবং সংক্রমণের হার ছিল ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ৪ জানুয়ারি ৭৭৫ জন রোগী শনাক্ত এবং সংক্রমণের হার ছিল ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। ৫ জানুয়ারি ৮৯২ জন শনাক্ত ও শনাক্তের হার বৃদ্ধি পেয়ে ৪ দশমিক ২০ শতাংশে দাঁড়ায়। এরপর ৬ জানুয়ারি ১ হাজার ১৪০ জন রোগী শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ হয়। এতে দেখা যায়, এক সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে সংক্রমণের হার দ্বিগুণেরও বেশি অর্থাৎ ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

একাধিক স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, করোনার সংক্রমণ বাড়লেও পর্যাপ্ত সংখ্যক জিনোম সিকোয়েন্সিং না হওয়ার কারণে ওমিক্রনে সর্বমোট কত সংখ্যক রোগী আক্রান্ত হচ্ছেন তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তারা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যাত্রীরা দেশে আসছেন। তাদের মাধ্যমে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়াচ্ছে। ফলে দ্রুতহারে সংক্রমণের গতি বাড়ছে।

প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি (সার্বক্ষণিক মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, জনসমাগমস্থল ও ভিড় এড়িয়ে চলা ইত্যাদি) মেনে চলার পাশাপাশি টিকা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। আর তা না হলে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা কেউ ঝুঁকিমুক্ত থাকবেন না বলেও তারা মন্তব্য করেন।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১ হাজার ১৪৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৯০২ জনসহ ঢাকা বিভাগে ৯২০ জন আক্রান্ত হন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ১১২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১১ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫২ জন, রংপুর বিভাগে ১০ জন, খুলনা বিভাগে ২৩ জন, বরিশাল বিভাগে পাঁচজন এবং সিলেট বিভাগে ১৩ জন আক্রান্ত হন।