ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একসঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নীতিমালা নিয়ে ফখরুলের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, তার এ গুলিয়ে ফেলা নিয়ে আমার নিজেরও লজ্জা লেগেছে। তাকে যারা পরামর্শ দিয়েছেন তাদের উচিৎ ছিলো সৎ পরামর্শ দেওয়া। তার নিজেরও প্রয়োজন ছিলো এ বিষয়ে জেনেবুঝে কথা বলা। কিন্তু ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নীতিমালা নিয়ে রাজনৈতিক ইস্যু তৈরির চেষ্টা মোটেই সমীচীন নয়।
সোমবার (১৪ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে মতবিনিময় ও দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গত শনিবার গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রস্তাবিত ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া ও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম রেগুলেশনের খসড়া নীতিমালা প্রণয়নের উদ্দেশ্য হচ্ছে সত্যকে আড়াল করে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং এর মাধ্যমে জনগণের কণ্ঠরোধ করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা।
মির্জা ফখরুলের ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তথ্যমন্ত্রী বলেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে রাজনীতির ইস্যু বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সবকিছুতে রাজনীতি নিয়ে আসাটা কখনো সমীচীন নয়। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। তারপরও কেউ কেউ এ বিষয়টিকে কেন রাজনীতিতে টেনে আনেন সেটা আমার বোধগম্য নয়। আমি আশ্চর্য হলাম, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুলিয়ে ফেলেছেন। এতো বড় দলের একজন মহাসচিব, যিনি মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন, তিনি কীভাবে বিনোদন মাধ্যমের ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর গণমাধ্যমের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললেন।
ড. হাছান বলেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত ডিরেক্টরস গিল্ড, টেলিট্যাব, নাট্যকার সংঘসহ আরও একটি সংগঠনের নেতারা এখানে এসেছেন। আমাদের সরকার প্রয়োজনীয়তার নিরীক্ষে এবং সবার দাবির প্রেক্ষিতে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম কোনো গণমাধ্যম নয়। এটি একটি বিনোদন মাধ্যম, এটি কোনো পত্রিকা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও নয়৷ এটি আজকের পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান বিনোদন মাধ্যম। এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সিনেমা, নাটকসহ আরও অনেক কিছু রিলিজ হয়। মানুষ সেটি অত্যন্ত সহজভাবে দেখতে পারে যে কোনো জায়গা, যে কোনো পরিবেশে ও সময়ে। সিনেমা হলে তো টিকেট কেটে যেতে হয়। কিন্তু ওটিটি প্ল্যাটফর্ম সিনেমা হলের বিকল্প নয়। তারপরও একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে বিনোদন মাধ্যমে।
তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিদেশি কিছু দেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আমাদের দেশের বাজারকে ইনভাইট করেছে। এই প্ল্যাটফর্মে অনেক কিছু আপলোড হয়, যা আমাদের দেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা অতীতে দেখেছি এখানে এমন কিছু আপলোড হয়েছে যা আমাদের নতুন প্রজন্মের মূল্যবোধের ওপর আঘাত হানে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় অনেক লেখালেখিও হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, তখন আমাদের দেশে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে একটি নীতিমালা করার দাবি উঠেছিল। সব কিছুরই নীতিমালা থাকতে হয়। সেজন্য আমরা একটি নীতিমালা করার উদ্যোগ নিই। সেখানে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। আরও মতামত চেয়ে সে খসড়া ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। এরপরই এটি চূড়ান্ত হবে।
নীতিমালা তৈরির মূল উদ্দেশ্য জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশীয় কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু যেন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আপলোড না হয়। সেখানে এমন কোনো কিছু যেন না আসে, যা নতুন প্রজন্ম ও সমাজকে মিসলিড (বিভ্রান্ত) করবে। এছাড়া বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো যেন আমাদের দেশের বাজারকে ইনভাইট করতে না পারে এবং দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো যেন সুরক্ষা পায়। সরকার চায়, এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমাদের বিনোদনমাধ্যম বিকশিত হোক এবং সৃজনশীল বিষয়গুলো সেখানে উঠে আসুক।
ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, আমাদের দেশে কয়েকটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নীতিমালা করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে এ প্ল্যাটফর্মটি যেন সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। এছাড়া দেশের যেসব ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ধীরে ধীরে বাজারে আসছে সেগুলো যেন সুরক্ষা পায়।
তিনি বলেন, বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের দেশে যথেচ্ছাভাবে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বাজার দখল করছে। সেটা কোনো দেশে হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। সে কারণে ভারতে অনেক আগেই একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কোনো জিনিস আপলোড করতে হলে সরকারের অনুমতি নিতে হয়। আমরা কিন্তু সেটা করতে চাই না।