ঐশী রহমান আমার জীবনের সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। ছুরি দেখিয়ে সে তার বাবা মায়ের রক্ত ও লাশ সরাতে বাধ্য করেছে। আমার কোনো দোষ ছিল না। আল্লাহ তার পাপের সাজা দিয়েছে।
রোববার পুলিশ দম্পতি খুনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ঐশীকে সহযোগিতার অপরাধে আটক গৃহপরিচারিকা খাদিজা আক্তার সুমিকে খালাস দিয়েছেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ। খালাস পাওয়ার পর কান্না জড়িত কণ্ঠে সুমি এ কথা বলেন।
সুমি বলেন, আমি গরিব মানুষ। কাজ করে খাই। কিন্তু ঐশীর কারণে আমাকে জেলে থাকতে হয়েছে। তার কথা যখন মনে পড়ে তখন ঘৃণা হয়।
কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমি পড়ালেখা করতে চাই। আমি শিক্ষিকা হতে চাই। সমাজের মানুষকে আলোর মুখ দেখাতে চাই।
এ দিন রায়ের আগে আইন ও সালিশ কেন্দ্র থেকে সুমি আদালতে উপস্থিত হন। এ সময় তার সঙ্গে আসা আইন সালিশের কর্মী শামছুন্নাহার বলেন, সুমি খুবই ভালো মেয়ে। সে আমাদের হেফাজতে থাকে। সেলাই থেকে শুরু করে সে অনেক কাজ করেছে। সে আমাদের কাছে থাকতে আগ্রহী।
গত ২২ এপ্রিল আদালত রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য রোববার (৬ মে) দিন ধার্য করেন। মামলায় ৪৯ সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ২৩ জন সাক্ষ্য দেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর চামেলীবাগে নিজ বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (রাজনৈতিক শাখা) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মা-বাবা খুন হওয়ার পর পালিয়ে যায় ঐশী।
ওই ঘটনায় ২০১৩ সালের ১৭ আগস্ট নিহত মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই মো. মশিউর রহমান রুবেল পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। একই বছরের ১৭ আগস্ট ঐশী রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করে। এরপর ২৪ আগস্ট আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয় ঐশী।
২০১৪ সালের ৯ মার্চ গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. আবুল খায়ের মাতুব্বর আসামিদের বিরুদ্ধে দুটি পৃথক চার্জশিট দাখিল করেন। সুমি অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় কিশোর আইনে এবং ঐশীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আরেকটি চার্জশিট দাখিল করেন।
সুমির মামলার বিচার কার্যক্রম কিশোর আদালতে পরিচালনা হয়। ২০১৪ সালের ২০ মে সুমির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধান আসামি ঐশী রহমানকে ডাবল মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার ৪নং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। অপর দুই আসামি ঐশীর বন্ধু রনিকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও জনিকে খালাস দেয়া হয়।
২০১৭ সালের ৫ জুন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশী রহমানের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।