এসো শ্রমিক বান্ধব হই…

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago
বেলায়েত বাবলু

বেলায়েত বাবলু: ক্যালেন্ডারের পাতাটা উল্টে গেছে। একটি মাস শেষে আরেকটি মাসের শুরু হলো আজ। হিসেব অনুযায়ী আজ মে মাসের প্রথম দিন। আর প্রতি বছর দিনটি শ্রমিকের অধিকার আদায়ের দিন অথবা মে দিবস হিসেবে পালিত হয়। যা সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবেও পালিত হয়ে থাকে। প্রতিবছর যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হলেও এবছরের প্রেক্ষাপট পুরোপুরি ভিন্ন। যদিও রমজানের কারনে এবছর স্বল্প পরিসরে দিনটি উদযাপিত হলেও হতে পারতো। কিন্তু করোনা দূর্যোগের কারনে তাও আর হচ্ছেনা। শ্রমিক অধিকারের এ দিবসটি এমন সময় পালিত হতে যাচ্ছে যখন আমাদের দেশসহ বিশ্বের লাখ লাখ শ্রমিকের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। করোনার প্রভাবে কলকারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়ছে অগনিত শ্রমিক। এর প্রভাবে দেশের অর্থনীতি ঝুঁকিতে রয়েছে। ফলে এখন মানবেতর জীবন যাপনের হাতছানি শ্রমিকদের সামনে।

ইতিহাস ঘেটে জানা গেছে, শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের রাজপথে যে আন্দোলন হয়েছিল আজ তার ১৩৪তম বার্ষিকী।
সংখ্যার হিসেবে ৮ ঘন্টা কাজের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ১৩৪ বছর হলেও আজো শ্রমজীবীরাই সবচেয়ে বেশি দুর্বল। তাদের শ্রমের সুরক্ষা নেই, ভাল চিকিৎসাসেবা পাওয়ার সুযোগ নেই, এমনকি বাড়িতে থেকেও কাজের সুযোগ নেই।

মে দিবস শুধু অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন নয়, শ্রমিকদের আন্দোলন সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস এই দিন। যাদের ঘামের বিনিময়ে সচল রয়েছে আমাদের অর্থনীতির চাকা সেই শ্রমিকদের শোষণ বঞ্চনার অবসান ঘটার স্বপ্ন দেখার দিনও বটে আজ।

শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার এই দিন এমনি আসেনি। দিনটি প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে রক্তঝরা ইতিহাস। তাই ইতিহাসের পাতায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৮৯০ সাল থেকে ১ মে বিশ্বব্যাপী পালন হয়ে আসছে ‘মে দিবস’ বা ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’।

মে মাসের প্রথম দিনটি পৃথিবীর অনেক দেশে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই দিনটি মে দিবস নামেও পরিচিত। বেশ কিছু দেশে মে দিবসকে ‘লেবার ডে’ হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশে মে দিবস নামেই পালিত হয়। যে নামেই দিবসটি পালন হোক না কেন আমাদের দরকার শ্রমিকদের নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আসলে যারা নিজের শ্রম বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে তারাই শ্রমিক। শ্রমিকদের দাবি আদায়ের জন্য যেমন প্রকৃত শ্রমিক সংগঠন আছে আবার শ্রমিকদের উপর ভর করে কিছু ভুইফোড় সংগঠনও গড়ে উঠেছে দেশের আনাচে কানাচে। ওই সকল তথাকথিত সংগঠনগুলো শ্রমিকদের ব্যবহার করে মালিকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে থাকে। আজ সংবাদকর্মী তৈরীর নামে কতিপয় সম্ভাবনাময় যুবকদের হাতে একটি পরিচয়পত্র তুলে দিয়ে তাদেরকে গাধার খাটনি খাটানো হচ্ছে। বিনিময়ে অসাধু মালিক পক্ষ বলে দিচ্ছে তুমিও চলো, আমারেও চালাইয়া রাইখো। এর ফলে জাতি প্রকৃত সংবাদকর্মী না পেয়ে পাচ্ছে সাংঘাতিক ভয়ংকর রুপী কিছু অমানুষ।

আজ শ্রমিকরা দিনরাত তাদের শ্রম বিক্রি করে নায্য হিস্যা পাচ্ছেনা। যে মেয়েটা প্রতিরাতে হাতে হাতে বদলায় সেও পাচ্ছেনা তার দেহ বিক্রির প্রকৃত মূল্য। আইন পেশায় যুক্ত থাকার কারনে আইনজীবী হওয়া গেলেও দেহ ব্যবসায় যুক্ত থাকার কারনে দেহজীবী হওয়া যায়না। যারা অর্থের বিনিময়ে দেহটাকে বিক্রয়ের পেশা হিসেবে নিয়েছেন তাদের বলা হয় পতিতা বা যৌনকর্মী। এসকল দেহজীবীরা কেউ কোন পেশাজীবী সংগঠনের সাথে যুক্ত হতে পারেনা। তারা হয়ে থাকে এ সমাজের সবচে নিকৃষ্ট জাতি। আসলে দেশে কর্মসংস্থানের অনেক পথ খোলা থাকলেও বৈষম্য রয়ে গেছে প্রতিটি রন্ধে রন্ধে। মে দিবস এলে আমরা যারা গলা ফাটিয়ে শ্রমিকদের অধিকারের কথা বলে থাকি তারা যদি সত্যিকারের শ্রমিক বান্ধব না হই তাহলে খেটে খাওয়া মানুষগুলো আজীবন অধিকার হারাই থেকে যাবে। আজকে আমরা যদি সত্যিকার অর্থে শ্রমিক বান্ধব না হতে পারি প্রতিবছর মে দিবস পালন করাটা শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

লেখক:বেলায়েত বাবলু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়ন