রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের দু’টি বাসা থেকে ২ লাখ ৭ হাজার ১০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে র্যাব-২। বুধবার রাতের এই অভিযানে মাদক বিক্রির ১৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকাসহ ছয়জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধারকৃত ইয়াবার মূল্য প্রায় ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ এসব তথ্য জানান। গ্রেফতার ছয়জন হলেন- জহির আহাম্মেদ ওরফে মৌলভি জহির (৬০), ফয়সাল আহাম্মেদ (৩১), মিরাজ উদ্দিন নিশান (২১), তৌফিকুল ইসলাম ওরফে সানি (২১), সঞ্জয় চন্দ্র হালদার (২০) ও মমিনুল আলম ওরফে মোমিন (৩০)।
মুফতি মাহমুদ বলেন, ইয়াবা চোরাচালান চক্রটির মূল হোতা মৌলভি জহির। তিনি ও তার বড় ছেলে বাবু (২৮) পাঁচ-ছয় বছর ধরে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া করে ইয়াবা ব্যবসা করছেন। গত ২৫ এপ্রিল মাদকদ্রব্যসহ ধানমন্ডি এলাকা থেকে বাবুকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া জহিরের স্ত্রী, মেয়ে, বড় জামাতা আবদুল আমিন, জামাতার ভাই নুরুল আমিনসহ টেকনাফের বেশ কয়েকজন এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এই সিন্ডিকেটে পরিবহন খাতের কয়েকজন চালক ও সহকারী, দু’টি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মচারী, ঢাকার কয়েকজন খুচরা বিক্রেতাও জড়িত রয়েছে। সব মিলিয়ে এই সিন্ডিকেটে ২৫ থেকে ৩০ সদস্য রয়েছে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জহির জানিয়েছে, টেকনাফে তার ওষুধের দোকান আছে, যার আড়ালে তিনি ইয়াবা ব্যবসা করে আসছিলেন। এই সিন্ডিকেটের মিয়ানমারের প্রতিনিধি আলম ওরফে বর্মাইয়া আলম। মিয়ানমারের মংডুতে স্থায়ীভাবে বাস করা আলমের টেকনাফেও একটি বাড়ি রয়েছে। তিনি নৌপথে মংডু থেকে ইয়াবা পাচার করে টেকনাফের নাজিরপাড়া, জালিয়াপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার বাড়িতে সেসব মজুত রাখেন। আর সেগুলো জহির ও তার জামাতা আবদুল আমিন, নুরুল আমিন এবং মোমিন টেকনাফে সংগ্রহ করে সেখান থেকে বিভিন্ন পরিবহন ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠাত।
ফ্যান, ওয়াশিং মেশিন, এসিসহ বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক্যাল সরঞ্জামাদির ভেতর ইয়াবা লুকিয়ে পরিবহন বা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠানো হতো। যাত্রীবাহী বাসে ইয়াবা পাচারের সময় টেকনাফের দুই ব্যক্তি বাহক হিসেবে কাজ করতেন। কখনও কথনও বহনকারী ছাড়াও নির্ধারিত চালক ও সহকারীর মাধ্যমেও ঢাকায় ইয়াবা পাঠানো হতো। উদ্ধার করা ইয়াবাগুলো কয়েকদিন আগে দু’টি চালানে এসি ও ফ্যানের ভেতরে ঢুকিয়ে ঢাকায় আনা হয়। এই সিন্ডিকেটের সদস্য আবদুল আমিন ও তার ভাই নুরুল আমিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকায় আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেফতার ফয়সাল আহাম্মেদ একটি বেসরকারি ব্যাংকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদে কর্মরত। তিন বছর ধরে ইয়াবা সেবনের এক পর্যায়ে ধীরে ধীরে তিনি এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।
গ্রেফতার মিরাজ উদ্দিন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে প্রথম সেমিস্টারে পড়েন। একই এলাকায় বাড়ি হওয়ায় গ্রেফতার মোমিন ও তিনি একই সঙ্গে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।
তৌফিকুল ইসলাম ঢাকায় একটি কলেজে ম্যানেজমেন্টে প্রথম বর্ষে পড়েন। কলেজের বন্ধু মিরাজ উদ্দিন নিশানের (গ্রেফতার) সূত্র ধরে মোমিনের (গ্রেফতার) সঙ্গে তার পরিচয়। তিনি গত দেড় বছর ধরে ইয়াবা সেবন ও ব্যবসায় জড়িত।
আর গ্রেফতার সঞ্জয় চন্দ্র হালদার মাদারীপুর একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে পারিবারিক ব্যবসা করছিলেন। তিনি এক বছর ধরে ইয়াবা সেবন করছেন। তৌফিকুল ইসলামের (গ্রেফতার) মাধ্যমে নিশানের (গ্রেফতার) সঙ্গে পরিচয়ের পর ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি।
আরও তথ্য আদায়ের জন্য গ্রেফতার ছয়জনকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ।