এমাজউদ্দীনকে শ্রদ্ধাভরে মনে রাখবে দেশ: শোকাহত বিশিষ্টজনেরা

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ কেবল একজন শিক্ষাবিদই ছিলেন না, একাধারে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রতীক ছিলেন বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। তার অবদান জাতি শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ রাখবে বলেও জানান দেশের রাজনীতিক, শিক্ষকসহ সমাজের নানা স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

শুক্রবার (১৭ জুলাই) সকালে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদের ইন্তেকালের খবরে শোক জানিয়ে পাঠানো বিবৃতি ও বাণীতে এসব আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। এদিন সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান দেশের খ্যাতনামা এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।

রাজনৈতিক অঙ্গনে সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় এমাজউদ্দিন আহমদ উদ্যোগী ছিলেন বলে শোকবাণীতে মন্তব্য করেছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রধান, সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে অধ্যাপক এমাজউদ্দীনের সমঝোতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ তাকে নন্দিত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। তিনি সাধারণভাবে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন।’

এমাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে ১৯৪৮ সালে কলকাতা থেকে মেট্রিকুলেশন পাস করেন সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমির উদ্দিন সরকার আইন ও ইতিহাস নিয়ে পড়েন এবং এমাজউদ্দীন আহমদ পড়েন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ ও আমি সহপাঠী ছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে তিনি অত্যন্ত সফল। তিনি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন, ওই সময় সেশনজট ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেই জটগুলো তিনি খুলে দেন। সরকারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে যখন অন্যদের কলম নীরব, তখন এমাজউদ্দীন স্যারের কলম দুর্নিবার চলেছে।’

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান স্বাক্ষরিত শোকবাণীতে  জমির উদ্দিন সরকার বলেন,  ‘এমাজউদ্দীন স্যারের ইন্তেকালে আমি গভীর শোকাভিভূত। প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমদ শুধুমাত্র একজন শিক্ষাবিদই ছিলেন না, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের একজন অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন। একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে দেশে এবং বিদেশে সমাদৃত হয়েছেন। তার অবদান জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। আমি তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এমাজউদ্দীনের মৃত্যুতে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। শোক জানিয়েছেন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ ও মহাসচিব ডা. আব্দুস সালাম।

জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলেন, ‘দেশের শিক্ষার বিকাশে এমাজউদ্দীন আহমদের গুরুত্বপূর্ণ অনেক অবদান রয়েছে। বাংলাদেশে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন।’

ড. এমাজউদ্দীন আহমদের ইন্তেকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম গভীর শোক প্রকাশ করেন। এছাড়া, দলটির মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা গাজী আতাউর রহমান প্রমুখ শোক জানান।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, ‘দীর্ঘ প্রায় অর্ধশতাব্দি ধরে তুলনামূলক রাজনীতি, প্রশাসন-ব্যবস্থা, বাংলাদেশের রাজনীতি, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক বাহিনী সম্পর্কে গবেষণা করেছেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন। এসব ক্ষেত্রে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় তিনি বিশেষজ্ঞ হিসেবেও প্রখ্যাত। এমাজউদ্দিন আহমেদের মৃত্যু একটি নক্ষত্রের পতন। তার মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো তা অপূরণীয়।’

জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)এর চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘ড. এমাজউদ্দিন আহমদের মৃত্যুতে দেশ তার একজন বরেণ্য শিক্ষককে হারালো। গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতার প্রশ্নে তার সুচিন্তিত ও বিশ্লেষণধর্মী লেখা মানুষকে চিরদিন অনুপ্রাণিত করবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য তাকে রাষ্ট্রশক্তির জুলুমও সইতে হয়েছে। বর্তমানে রাজনৈতিক সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের দাবির পক্ষে তিনি জাতীয় অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেছেন।’

শোকবাণীতে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ সব সময় বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আজীবন কাজ করে গেছেন। তার গবেষণাধর্মী লেখা বাংলাদেশ তথা বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষকে দিক নির্দেশনা দিয়েছে। তার মৃত্যুতে যে শূন্যস্থান তৈরি হলো, তা অপূরণীয়।’

অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের ইন্তেকালে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি ) আহ্বায়ক সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী ও সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মন্জু বলেন, ‘অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে বাংলাদেশ হারালো তার অন্যতম প্রধান শিক্ষাগুরুকে। আমরা তাই গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক সমবেদনা। এ ক্ষতি অপূরণীয়।’

এছাড়া, এমাজউদ্দীনের মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন—  কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ও গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী ও মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, ২০ দলীয় জোট শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি’র সভাপতি আবদুল করিম আব্বাসী ও মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিবুন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার, জামায়াতের ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল ও সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রমুখ।