ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সংসদ সদস্যের (এমপি) পক্ষে মানববন্ধন করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা। সোমবার (২৩ মে) দুপুর ২টার দিকে তারা এ মানববন্ধন করেন। সরকারি চাকরিজীবী হয়েও এমপির পক্ষে শিক্ষকরা মানববন্ধন করায় বিষয়টি সমালোচিত হচ্ছে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজের দুই সহকারী অধ্যাপককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (১৯ মে) দুপুরে কলেজে এ ঘটনা ঘটে বলে ওই দুই শিক্ষকের ভাষ্য। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ ড. মো. মাহবুবুর রহমান।
অভিযোগের বরাত দিয়ে জাগোনিউজ২৪.কম-সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদনকে ষড়যন্ত্রমূলক আখ্যা দিয়ে এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের পক্ষে মানববন্ধন করেন শিক্ষকরা।
দুপুর ২টার দিকে উপজেলা শহরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের সামনে কালীগঞ্জ উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের ব্যানারে তারা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির উপজেলা সভাপতি মিজানুর রহমান, শিক্ষক নেতা সাখাওয়াত হোসেন, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
সরকারি নিয়ম না মেনে স্কুল সময়ে মানববন্ধন করার বিষয়ে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘স্কুল বন্ধ করে না, মিটিং শেষ করে ফিরে যাওয়ার সময় দু-পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়েছিলাম। আমাদের স্কুল কমিটি গঠন, রাজনৈতিক বিষয়, আসবাবপত্র ক্রয়সহ নানা প্রয়োজনে সংসদ সদস্যের প্রয়োজন হয়। তাই তার পক্ষে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাহতাব উদ্দিন কলেজের শিক্ষককে সংসদ সদস্য লাঞ্ছিত করেছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক নয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাই শিক্ষক হয়ে শিক্ষকের পক্ষে না দাঁড়িয়ে সংসদ সদস্যের পক্ষে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি।’
উপজেলার সুন্দরপুর-দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে কলেজে গোলযোগ হয়েছে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি আমাদের মানববন্ধনের জন্য ডাকলেন। তাই আমরা সেখানে গিয়েছি।’
স্কুল সময়ে ক্লাস না নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উপজেলায় মাসিক মিটিং ছিল। মাসিক মিটিংয়ের দিন প্রধান শিক্ষকরা কেউ স্কুল করেন না। তাই মিটিং শেষ করেই মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি।’
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া জহুরা খাতুন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) মোর্শেদ আলম বলেন, ‘সব স্কুল খোলা আছে। স্কুল ফাঁকি দিয়ে আমরা এখানে আসিনি, সহকারী শিক্ষকরা স্কুলে আছেন। আর একটা শিক্ষক কখন এ ধরনের কাজ করে সেটা আপনারা ভালোই বোঝেন। শিক্ষকরা যেন বিপদে না পড়ে আপনারা সেটাই করবেন।’
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিনা আক্তার বানু বলেন, ‘মিটিং শেষে আসার পথে দেখলাম শিক্ষকরা মানববন্ধন করছে। মাসিক মিটিং শেষ করে তাদের স্কুলে ফিরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তারা কেন স্কুলে না গিয়ে এমন করলো তা বলতে পারছি না।’
সরকারি চাকরি করে শিক্ষকরা মানববন্ধনে অংশ নিতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা তো আমার কাছে শুনে করেনি। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।’
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কলেজের বিষয়ে প্রাথমিকের শিক্ষকরা কেন মানববন্ধনে দাঁড়াবে, এটা আমি বুঝতে পারছি না। মানববন্ধনের বিষয়ে আমি জানিও না। আমার কাছে কোনো অনুমতিও নেয়নি। খোঁজ নিয়ে দেখছি কেন তারা এমন করলো।’
তিনি আরও বলেন, সমন্বয় মিটিং শেষে যদি সময় থাকে তাহলে অবশ্যই শিক্ষকদের স্কুলে ফিরে যেতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রথীন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘প্রাথমিকের শিক্ষকরা সংসদ সদস্যের পক্ষে মানববন্ধন করেছে, বিষয়টি আপনাদের থেকেই প্রথম শুনলাম। বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যারকে জানাবো।’