পরাজিতদের গল্প কেউ শুনতে চায় না। বিজয়ীদের কথনই লাগে অমৃত। বিপিএলের ফাইনালের পর ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল সংবাদ সম্মেলন করছেন ২০ মিনিট। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো তামিম অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন শিরোপা। তাই বিজয়ীর কথা এদিন অনেক লম্বা হলো। যেখানে তামিম ট্রফি জয়ের গল্প শুনিয়েছেন, নেপথ্যের নায়কদের সামনে এনেছেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানিয়েছেন। সঙ্গে ঘুরে ফিরে নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কথাও বলেছেন।
জানিয়ে রাখা ভালো তামিম এদিন শুধু বিপিএলের ট্রফিই জেতেননি। বিপিএলের টুর্নামেন্টের সেরার পুরস্কার প্রথমবার পেয়েছেন। সর্বোচ্চ রান করে সেরা ব্যাটসম্যান হয়েছেন। প্রাপ্তির ঝুলি তাই টইটুম্বুর বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের। দুই বছর আগে যে ফরম্যাটকে তামিম বিদায় বলেছেন সেই ফরম্যাটে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান করা, টুর্নামেন্টের সেরা হওয়া বিরাট অর্জন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা তামিমের কি ফেরার সম্ভাবনা নেই? এবারের বিপিএলের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করলে নিশ্চিতভাবেই তাকে সীমিত পরিসরে দলে নেওয়ার কথা। কিন্তু তামিমের ইচ্ছে কি? বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি গত ১২ ফেব্রুয়ারি বোর্ড সভা থেকে বেরিয়ে জানিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিমের ভবিষ্যৎ নিয়ে বোর্ড কথা বলবে। কিন্তু মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কথা হয়নি।
শিরোপা পাওয়ার রাতে তাই তামিমের কাছেই তার অবস্থান জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তামিম মুখ খুলতে নারাজ। বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেই নিজের অবস্থান জানাবেন। কিন্তু কিছু বিষয়ে আঁচ দিয়ে রেখেছেন যা তার ফেরার ভাবনাকে পরিস্কার করে।
‘শেষ কয়েক মাসে আমি অনেক কিছুর ভেতর দিয়ে গিয়েছি। এই কারণে ওই পরিবেশের কথা বারে বারে কেন বলছি…আমি এমন কোনো পরিবেশে আসতে চাচ্ছিলাম না যেখানে ধরেন আমরা এক না। একটা খারাপ কথা…আজকে খারাপ করছে কেউ ওইটা অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করছি। ওই সঠিক পরিবেশটা তৈরি করা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ আমাদের জন্য।’ – বলেছেন তামিম।
সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘একটা বিষয় পরিস্কার করে বলতে চাই, আমার ফিরে আসার জন্য অনেক কিছু ঠিক হতে হবে। নয়তো অযথা ফিরে এসে শুধুমাত্র খেলার কোনো কারণ নেই। আমি এখন ক্যারিয়ারের ওই অবস্থায় আছি যেখানে হয়তো দুই বছর খেলতে পারি। ওই কথাগুলো উনাদের সঙ্গে বলতে হবে। এখনো উনাদের সঙ্গে ফাইনাল কথা হয়নি তাই সংবাদ সম্মেলনে এসে এসব নিয়ে কথা বলা উচিত হবে না।’
তামিমের কথা স্পষ্ট, জাতীয় দলে পরিবেশ ভালো না হলে কোনোভাবেই তিনি ফিরবেন না। যে পরিবেশের কারণেই তিনি গত বছরের জুলাইয়ে অধিনায়ক থাকা অবস্থায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আচমকা অবসর নিয়েছিলেন। একদিনের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পরে ফিরেও এসেছিলেন। এরপর সেপ্টেম্বরে বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ড সিরিজে ফিরে খেলেন দুই ম্যাচ।
কিন্তু বিশ্বকাপের আগে টিম ম্যানেজমেন্ট এমন ধুম্রজাল তৈরি করেছিল যার কারণে তামিম বাধ্য হয়ে নির্বাচকদের বলেন তাকে না নিতে। এরপর আর তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা হয়নি।
তবে বিপিএলে নিজের পারফরম্যান্সকে কোনোভাবেই উপেক্ষার জবাব হিসেবে দেখছেন না তামিম, ‘আমি এভাবে ভাবি না। যদি এভাবে ভাবতাম যে জবাব দিতে হবে, তাহলে হয়তো ভালো করতে পারতাম না। আমি জিনিসটাই ভাবিনি যে জবাব দিতে হবে।’
তামিমকে বিশ্বকাপ দলে না নেওয়ার পেছনে তৎকালীন নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ফিটনেসের ইস্যুকে সামনে এনেছিলেন। বলেছিলেন, ‘ফিটনেসের ঝুঁকির কারণে তামিমকে দলে নেওয়া হয়নি।’ অথচ তামিম পরদিনই ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না।’ তামিম এখনও নিজের অবস্থানে অনড়। সামনে বিসিবির সঙ্গে আলোচনাতে নিজের অবস্থান পরিস্কার করে দেবেন বলেও জানালেন।
`না আমার সঙ্গে তার (নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন) কোনো কথা হয়নি। আমার সঙ্গে জালাল ভাই (ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস) কথা হয়েছে। আমি অ্যাভেইলেভেল ছিলাম কথা বলার জন্য কিন্তু হয়নি। আমার সঙ্গে বসার কথা ছিল। তবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ আছে। আমি কাল (আজ) সকালে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছি। আশা করছি আসার পর আমরা বসবো।‘
যে ফিটনেসের ইস্যুকে সামনে এনে বিশ্বকাপ দলে তাকে নেওয়া হয়নি, বিপিএলের পর সেই ফিটনেসকেই সেরা বললেন তামিম, ‘ফিজিক্যালি আমি ওই সময়ে আরো ভালো অবস্থায় ছিলাম। এখন তো হালকা পেট বের হয়েছে দেখছেন। ফিজিক্যালি ওই সময়ে আমি আরো ভালো ছিলাম।’