করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সরকারি নির্দেশনার প্রেক্ষাপটে লঞ্চে ডেকের ভাড়া বাড়ল ৬০ শতাংশ। তবে কেবিনের ক্ষেত্রে কোনো ভাড়া বাড়বে না।
বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ সময় নৌপরিবহন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার থেকেই এই ভাড়া কার্যকর হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানা সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনার মেয়াদ অনুযায়ী আগামী ২ সপ্তাহ পর্যন্ত বর্ধিত ভাড়া কার্যকর থাকবে বলেও জানান নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী।
এর আগে বুধবার (৩১ মার্চ) লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে আলোচনার পর ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাবের চিঠি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক। সেখানে ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার কথা বলা হয়।
৬০ শতাংশ বাড়ার পর এখন লঞ্চের ডেকের ভাড়া হয়েছে ১০০ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য জনপ্রতি এক কিলোমিটারে ২ টাকা ৭২ পয়সা। ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব, অর্থাৎ ১০০ কিলোমিটার পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের জন্য জনপ্রতি ভাড়া ছিল প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ২৪ পয়সা। এছাড়া জনপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া হলো ২৮ টাকা ৮০ পয়সা।
করোনা সংক্রমণ রোধে গত সোমবার (২৯ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।
পরে মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) ৬০ শতাংশ বাস ভাড়া বাড়িয়ে ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগ যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত বুধবার থেকে কার্যকর করা হয়।
অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলের ক্ষেত্রে আগে লঞ্চের ডেকের ভাড়ার হার ছিল ১০০ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য জনপ্রতি এক কিলোমিটারে এক টাকা ৭০ পয়সা। ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব অর্থাৎ ১০০ কিলোমিটার পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের জন্য জনপ্রতি ভাড়া ছিল প্রতি কিলোমিটারে এক টাকা ৪০ পয়সা। এছাড়া জনপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ১৮ টাকা। এখন এর সঙ্গে ৬০ শতাংশ যুক্ত হলো।
লঞ্চের সুযোগ-সুবিধার ওপর ভিত্তি করে কেবিনের ভাড়া ডেকের (তৃতীয় শ্রেণি) ভাড়ার চার, তিন, দুই ও দেড় গুণ নির্ধারিত রয়েছে।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মালিকদের সঙ্গে ভাড়া আলোচনার পর বাড়ানোর প্রস্তাব বিআইডব্লিউটিএ আমাদের মন্ত্রণালয়ে দিয়েছে। সেটা নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করেছি। আমরা দেখেছি কোভিডে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার স্বার্থে… যদিও লঞ্চের ক্ষেত্রে এটা খুব দুঃসাধ্য ব্যাপার, লঞ্চের নকশাটা এমনভাবে তৈরি করা সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানাটা কঠিন। আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে অনেকগুলো পদ্ধতি অনুসরণ করেছি। সর্বশেষ আমরা সেটাকে ধরে রাখতে পারিনি, এটাই হচ্ছে সত্য কথা ও বাস্তবতা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করেছি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে গেলে ভাড়া বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। এটা বৃদ্ধি করতে হবে। মালিকরা সম্মত হয়েছে তারা ক্যাপাসিটির অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করবেন। সেজন্য আমরা যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে ৬০ ভাগ ভাড়া বৃদ্ধি করেছি। যে বৃদ্ধিটা কেবিনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। এটা আমরা অনুমোদন করেছি।’
অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করবে লঞ্চগুলো, তাহলে বাকি অর্ধেক পরিবহনের জন্য লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে কি না— জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লঞ্চের সঙ্কট আছে। আমরা গতকালও যাত্রী সাধারণকে বিনীত অনুরোধ জানিয়েছিলাম যে, আমাদের প্রয়োজন না হলে আমরা যাতে স্থানান্তর না হই। শক্তি প্রয়োগ করে স্বাস্থ্যবিধি মানানো কঠিন ব্যাপার। সবাই সচেতন না হলে এটা খুব কষ্টসাধ্য। লঞ্চ মালিকরা বলেছেন, সবগুলো লঞ্চই তারা যাত্রী সেবায় নিয়োজিত করবেন। যাতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা যায়।’
খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালু করার জন্য আমরা মালিকদের কঠিনভাবেই বলেছি। এটা করা হলে স্বাস্থ্যবিধি মানা সহজ হবে। সেই বিষয়ে তারা পদক্ষেপ নেবে বলে আমাদের জানিয়েছেন। আমরা একটা কল সেন্টার পাইলট আকারে চালু করেছি, আমরা দেখেছি সেটার সঙ্গে মানুষ যুক্ত হচ্ছে।’
লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা কীভাবে মনিটরিং করা হবে— জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিআইডব্লিউটিএ, নৌপুলিশ, অধিদফতর আছে, কোস্টগার্ড আছে, সবাইকে নিয়েই আমরা বিষয়গুলো মনিটরিং করব।’