এবার ওয়ানডেতেও অবিস্মরণীয় জয়

:
: ৭ মাস আগে

আগের ৮ ম্যাচে যে দলের বিপক্ষে তাদের মাটিতে কখনো ন্যূনতম লড়াই করতে পারেনি বাংলাদেশ, সে-ই দলকে কিনা স্রেফ উড়িয়ে দিল তাদের মাটিতেই। টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডেতেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের মাটিতে হারাল বাংলাদেশ।

 

বিজয় দিবসে নারীদের হাত ধরে আসল অবিস্মরণীয় এক জয়। ওয়ানডেতে নারী ক্রিকেট দল এগিয়ে যাওয়ার যে বার্তা দিয়ে যাচ্ছিল, আজ তারই প্রমাণ মিলল দক্ষিণ আফ্রিকার ইষ্ট লন্ডনে। দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলকে ১১৯ রানে হারিয়েছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল।

আগে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে ২৫০ রানের পুঁজি পায়। ওয়ানডেতে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। এর আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ৭ উইকেটে ২৩৪। পাকিস্তানের বিপক্ষে হ্যামিল্টনে ২০২২ সালে ওই রান করেছিল।

 

এবারের সর্বোচ্চ দলীয় রান সংগ্রহের পেছনের ও জয়ের নায়ক মুর্শিদা খাতুন। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দিকে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যাওয়া মুর্শিদা ৯১ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন। অল্পের জন্য সেঞ্চুরি পাননি তিনি। তাতেই বাংলাদেশ পেয়ে যায় ভালো সংগ্রহ।

ওই রান করতে নেমে বাংলাদেশের স্পিনারদের ঘূর্ণিতে পথ হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেমে যায় ১৩১ রানে।

 

যেমন ব্যাটিং, তেমন বোলিং। সঙ্গে নজরকাড়া ফিল্ডিং। ইতিহাস গড়ার দিনে বাংলাদেশের নারীরা ছিলেন অনন্য, অসাধারণ। প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেওয়ার যে তাড়না, জেদ তাদের মধ্যে দেখা গেছে তা ছিল নিখাদ সুন্দর। জয়ের কাজটি সমাপন হয়েছে ভালোবাসার স্বেদবিন্দুর বিনিময়ে।

 

ওপেনারদের গড়ে দেওয়া ভিতে দাঁড়িয়ে মুর্শিদা তিনে নেমে শেষ পর্যন্ত ক্রিজে থেকে দলের চাকা সচল রাখেন। ১০০ বল খেলে ৯১ রানের ইনিংসটি সাজান। যেখানে চার মেরেছেন ১২টি। ওয়ানডেতে যা বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের দ্বিতীয় সেরা ব্যক্তিগত ইনিংস। বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান ফারজানা হক। এ বছরই মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে ১০৭ রান করেছিলেন।

 

শুরুর দিকে ওপেনার শামীমা সুলতানা ৪৮ বলে করেন ৩৪ রান। আরেক ওপেনার ফারজানার ব্যাট থেকে আসে ৭৬ বলে ৩৫ রান। সেখান থেকে বাংলাদেশকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মুর্শিদা তিনে নেমে গড়ে দেন ব্যবধান। ছোট ছোট জুটি বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করে।

দ্বিতীয় উইকেটে ফারজানার সঙ্গে মুর্শিদার জুটি ছিল ৭৪ বলে ৪৪ রানের এবং তৃতীয় উইকেটে জ্যোতির সঙ্গে ৮৭ বলে ৮০ রান যোগ করেন। পাঁচে ব্যাটিংয়ে আসা স্বর্ণা আক্তারও ছিলেন দ্যুতিময়। ৫৩ বলে দুজন ৬০ রান করে শেষ দিকের প্রয়োজনী রান স্কোরবোর্ডে জমা করেন। স্বর্ণা অপরাজিত থাকেন ২৮ বলে ২৭ রানে।

 

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে বল হাতে ১টি করে উইকেট নেন এলিজ-মারি মার্কস, ননকুলুলেকু মাকাবলা ও ডেলমি টার্কার।

প্রোটিয়া বোলাররা যেখানে নিজেদের চিরচেনা কন্ডিশনে খাবি খেয়েছে সেখানে বাংলাদেশের বোলাররা শুরু থেকেই ছিলেন প্রতাপশালী। দুই ওপেনারকে ফিরিয়েছে ১৩ বলের ভেতরে। মুর্শিদা খাতুন তানজিন ব্রিটসকে এবং সুলতানা থাতুন নেন লওরা উলবভারকটের উইকেট। এরপর নাহিদা আক্তার, রাবেয়া খান ও ফাহিমা খাতুন বোলিংয়ে এসে লন্ডভন্ড করে দেন স্বাগতিকদের ব্যাটিং অর্ডার। স্পিনত্রয়ীর আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েন ব্যাটসম্যানরা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিয়ে তাদের একশর নিচে অলআউট করে দেওয়ার শঙ্কা জেগেছিল। ভাগ্যিস এলিজ-মারি ছিলেন। তার সর্বোচ্চ ৩৫ রানের ইনিংস কেবল পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছে।

 

নাহিদা ৩৩ রানে পেয়েছেন ৩ উইকেট। দলের সেরা বোলারও তিনি। ২টি করে উইকেট নেন সুলতানা, রাবেয়া ও ফাহিমা।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় জয়। ২০১২, ২০১৭ সালে একটি করে ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার ২০২৩ সালে। প্রতিটি জয়ের ব্যবধান ৫ বছরের বেশি। প্রথম ম্যাচটি জিতেছিল মিরপুরে। পরেরটি কক্সবাজারে। এবার ইষ্ট লন্ডনে।

দেশের বিজয় উৎসবের দিনটিতে আনন্দ দ্বিগুন করলো বাংলাদেশ