এনবিআর কর্মকর্তা ফয়সাল ও তার স্বজনদের ৮৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ

লেখক:
প্রকাশ: ৫ মাস আগে

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব (ট্যাক্সেস লিগ্যাল অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল, তার স্ত্রী ও স্বজনসহ ১৪ জনের ৮৭টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা অবরুদ্ধের (ফ্রিজ করে রাখার) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

 

 

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন। পাশাপাশি ফয়সালসহ ৭ জনের নামে থাকা ১৫টি সঞ্চয়পত্রের অধীনে থাকা ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকাও অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

এছাড়া ফয়সালের স্ত্রী আফসানাসহ ৪ জনের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক (প্রসিকিউশন সার্বিক) আমিনুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

 

অস্থাবর সম্পদের মধ্যে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের নামে ডাচ বাংলা ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকার দুটি সঞ্চয়পত্র, তার স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে চারটি সঞ্চয়পত্রে ৫০ লাখ টাকা, আফতাব আলীর নামে দুটি সঞ্চয়পত্রে ৩০ লাখ টাকা, কাজী খালিদ হাসানের নামে একটি সঞ্চয়পত্রে ৩০ লাখ টাকা, খন্দকার হাফিজুর রহমানের নামে দুটি সঞ্চয়পত্রে ৪০ লাখ টাকা, আহম্মেদ আলীর নামে তিনটি সঞ্চয়পত্রে ৫০ টাকা ও মাহমুদা হাসানের একটি সঞ্চয়পত্রে পাঁচ লাখ টাকা রয়েছে।

ফয়সাল ছাড়া ব্যাংক হিসাব যাদের অবরুদ্ধ হয়েছে তারা হলেন– শেখ নাসির উদ্দিন, মমতাজ বেগম, রওশন আরা খাতুন, আহম্মেদ আলী, খন্দকার হাফিজুর রহমান, ফারহানা আফরোজ, আশরাফ আলী মুনির, আফতাব আলী তানির, মাহফুজা আক্তার, মাইনুল হাসান, আফসানা জেসমিন, মাহমুদা হাসান ও কাজী খালিদ হাসান।

 

এছাড়া স্থাবর সম্পদের মধ্যে আফসানা জেসমিনের নামে ১০ কাঠা জমি, ২০০ বর্গমিটারের প্লট, আবু মাহমুদ ফয়সালের নামে ভাটারা, খিলগাঁও ও রূপগঞ্জে থাকা স্থাবর সম্পদ, আহমেদ আলীর নামে থাকা ফ্ল্যাট ও কার পার্কিংয়ের ৩২২৮ বর্গফুট স্থাবর সম্পদ ও মমতাজ বেগমের নামে থাকা ১০ কাঠা জমি জব্দ করা হয়েছে।

এর আগে রাজস্বের কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল, তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রয় বা মালিকানাসত্ব বদল রোধের জন্য ব্যাংক হিসাব, ব্যাংকে রক্ষিত সঞ্চয়পত্র ও নন ব্যাংকিং ফাইনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানের আমানতসমূহ থেকে অর্থ উত্তোলন অবরুদ্ধ এবং স্থাবর সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুদকের সহকারী পরিচালক অনুসন্ধানকারী টিমের সদস্য মোস্তাফিজ। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত ব্যাংক হিসাব, সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধ ও স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দেন।

দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল তার নিজ নামে ও তার স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে জলসিড়ি আবাসন প্রকল্পে মোট ২ কোটি ৩৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে ৫ কাঠার প্লট কিনেছিলেন। অনুসন্ধান চলাকালে জলসিড়ি আবাসন প্রকল্পের প্লট বিক্রি করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে অনুসন্ধান শুরুর পর থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা অপরাধলব্ধ সম্পদ বিক্রি করার চেষ্টা করছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। অপরাধলব্দ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত বর্ণিত সম্পদ/সম্পত্তির বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তা বেহাত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যার ফলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আবু মাহমুদ ফয়সাল সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ ঘুষ লেনদেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের উৎস লুকাতে শাহজালাল ব্যাংক কারওয়ান বাজার শাখায় তার নিজ নামে বিভিন্ন এফডিআর হিসাব খোলেন। মেয়াদপূর্তির পর এফডিআর ভাঙানো টাকা ও নতুন করে নগদ আনয়ন করে ফারহানা আক্তার, মমতাজ বেগম, মাহমুদা হাসান, খন্দকার হাফিজুর রহমান, কারিমা খাতুনের নামে বিভিন্ন এফডিআর স্কিম খোলেন। পরবর্তীতে এসব অর্থ এবি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, লংকা বাংলা ফাইন্যান্স, হজ্ব ফাইন্যান্স এবং সর্বশেষে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শাখায় আরও আহম্মেদ আলী, আফতাব আলী, শেখ নাসির উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদের নামে ৭০০ এর অধিক হিসাব খুলে অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপনের উদ্দেশ্যে স্থানান্তর বা রূপান্তর বা হস্তান্তর করে মানিলন্ডারিং অপরাধ সংঘটিত করেছেন।

দুদকের অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় জানা গেছে, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ২৪তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে কর ক্যাডারে সহকারী কর কমিশনার হিসাবে ২০০৫ সালের ২ জুলাই যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ১ম সচিব (কর) কর্মরত আছেন। তিনি চাকরিতে যোগদান থেকে এ পর্যন্ত অবৈধ লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন।

 

সম্প্রতি ‘ছাগলকাণ্ডে’ আলোচনায় আসেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা। তাদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মতিউর রহমান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ও সোনালী ব্যাংকের প‌রিচালক ছিলেন। দুর্নীতির বিষয়টি সামনে এলে তাকে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। পরে সোনালী ব্যাংকের প‌রিচালক পদ থেকেও তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে মতিউর রহমানের বিষয়ে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।