এনডিবিকে ১৬শ কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

বাংলাদেশ নতুন সদস্য হিসেবে ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’কে(এনডিবি) ১৬০০ কোটি টাকা (১৮ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার) পরিশোধ করবে। এর বিনিময়ে বাংলাদেশের হাতে থাকবে এ আন্তর্জাতিক বহুমুখী উন্নয়ন সংস্থার ১৮৮৪টি শেয়ার। পরিশোধিত মূলধন হিসাবে বাংলাদেশ এই অর্থ দেবে। টাকা পরিশোধের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের বোর্ড অব গভর্নরসকে চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।

গত বৃহস্পতিবার নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের বোর্ড অব গভর্নরস নতুন সদস্য হিসেবে বাংলাদেশকে অনুমোদন দিয়েছে। পাশাপাশি আরও দুটি দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত ও উরুগুয়েকে নতুন সদস্য হিসাবে গ্রহণ করেছে এনডিবি। সদস্য পদ পেয়ে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বাংলাদেশের যোগদান উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প-২০৪১ এবং অন্যান্য উন্নয়ন পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক সহায়তা লাভে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

এনডিবির বোর্ড অব গভর্নরসকে লেখা চিঠিতে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার আগামী ৬ মাসের মধ্যে প্রথম কিস্তি (সাবস্ক্রাইবকৃত) মূলধন পরিশোধ করবে। তবে মোট ৭৮ কিস্তিতে ১ হাজার ৬০১ কোটি ৪০ লাখ টাকা বা ১৮ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হবে। কত মাস পরপর কিস্তি দেওয়া হবে তার একটি তালিকা এনডিবিকে পাঠিয়েছে অর্থ বিভাগ। সেখানে বলা হয়, প্রথম ৬ মাসে ১ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হবে। এই ছয় মাস গণনা হবে এনডিবির সঙ্গে ডিপোজিট সংক্রান্ত চুক্তির তারিখ থেকে। এই টাকা পরিশোধের পর ১৮৮৪টি শেয়ারের মধ্যে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ হবে বাংলাদেশের। একইভাবে ১৮ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তিতে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার পরিশোধ করা হবে। ওই সময় ২০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা পাওয়া যাবে। আর ৩০ মাসের মধ্যে তৃতীয় কিস্তি পরিশোধ করা হবে ২ কোটি ৮২ লাখ ৬০ হাজার ডলার। ফলে ৩৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা আসবে বাংলাদেশের হাতে। এছাড়া চতুর্থ এবং পঞ্চম কিস্তি সমান হারে পরিশোধ করা হবে। প্রতিটি কিস্তির টাকার অঙ্কের পরিমাণ হবে ২ কোটি ৮২ লাখ ৬০ হাজার ডলার। তবে চুতর্থ কিস্তি দেওয়া হবে ৪২তম মাসে এবং ৫৪ মাসের মাথায় দেওয়া হবে পঞ্চম কিস্তি। ওই সময় এনডিবির বাংলাদেশ অংশের মোট শেয়ারের ৬০ শতাংশ আসবে সরকারের হাতে। এরপর ৬৬তম মাসে ৬ষ্ঠ কিস্তি এবং ৭৮তম মাসে শেষ টাকা পরিশোধ করা হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি কিস্তি সমান হারে ৩ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এর মধ্য দিয়ে এনডিবির ১৮৮৪টি শেয়ারের মালিকানা বাংলাদেশের হাতে চলে আসবে।

বর্তমান নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ১ লাখ শেয়ার রয়েছে ভারতের কাছে। এক লাখ শেয়ার ব্রাজিলের কাছে। এছাড়া চীনের এক লাখ, রাশিয়ার ১ লাখ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে আছে এক লাখ শেয়ার। এ হিসাবে মোট ৫ লাখ শেয়ারের মালিক এই পাঁটি দেশ। বাকি ৫ লাখ শেয়ার এখনো অব্যবহৃত আছে। এর মধ্যে ১৮৮৪ শেয়ারের মালিকানা আসছে বাংলাদেশের হাতে।

এনডিবির প্রাথমিক অনুমোদিত মূলধন হলো ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। এর মোট ১০ লাখ শেয়ার আছে। প্রতিটির মূল্য ১ লাখ মার্কিন ডলার।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্র্তা বলেন, বাংলাদেশ ২০২৪ সালে স্বল্প আয়ের দেশ থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে যাবে। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিচয় লাভ করবে। তখন স্বয় ব্যয়ে বিদেশি ঋণসহ অন্যান্য সুবিধা সীমিত হয়ে আসবে। এখন এনডিবির সদস্য হয়ে থাকলে পরবর্তীতে কম ব্যয়ে ঋণ মেলা যাবে।

সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ এটি ভালো খবর। এর পরিচালনা পর্ষদে বাংলাদেশের প্রতিনিধি থাকবে কিনা এটি এখনো জানা যায়নি। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বাংলাদেশের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঋণ পেতে ভবিষ্যতে আমাদের সুবিধা হবে। যদিও ঋণ পরিশোধের রেকর্ড হিসাবে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে দাতা সংস্থাগুলোর কাছে। এখন আরও সুবিধা যুক্ত হবে।

জানা গেছে, ২০১২ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ৪র্থ ব্রিকস সম্মেলনে শীর্ষক ব্যাংক স্থাপনের ধারণাটি প্রস্তাব করা হয়েছিল। ওই সভায় প্রধান বিষয় ছিল একটি নতুন উন্নয়ন ব্যাংক চালু করা। ব্রিকস নেতারা ২০১৩ সালের ২৭ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান শহরে পঞ্চম ব্রিকস সম্মেলনে একটি উন্নয়ন ব্যাংক স্থাপনে সম্মত হন। এরপর ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার (ব্রিকস) অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসের উদ্যোগে ২০১৫ সালের ২১ জুলাই যাত্রা শুরু করে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-এনডিবি হিসেবে। বর্তমানে এর সদর দপ্তর চীনের সাংহাইতে।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো এবং নগর উন্নয়ন সংক্রান্ত ৮০টি বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে। সর্বশেষ ব্যাংকটি করোনা মহামারি প্রতিরোধের সদস্য দেশগুলোর জন্য ২২৫ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে।