এক সৈয়দ আশরাফ বার বার জন্মান না

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

কিশোরগঞ্জের আজকের সকালটি অন্যান্য দিনের মতোই। শহরের এখানে-সেখানে ঝুলছে নির্বাচনী পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন। এইতো সেদিন তিনি বিজয়ী হয়েছেন বিপুল ভোটে। এখনও শেষ হয়নি আনন্দের রেশ। এরই মধ্যে শোকের ছায়া পুরো শহরজুড়ে। প্রিয় নেতা সৈয়দ আশরাফকে হারিয়ে শোকে কাতর কিশোরগঞ্জবাসী।

দলমত নির্বিশেষে এখানকার মানুষেরা বলছেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন একজন বিরল রাজনীতিবিদ। তার মতো নির্মোহ, সৎ ও সাহসী রাজনীতিবিদ বার বার জন্মান না।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুকে শোকের ছায়া বইছে তার নিজের জেলা কিশোরগঞ্জে। সৎ, নির্মোহ ও দলের দুর্দিনের কাণ্ডারি এ নেতার মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান দলীয় নেতাকর্মীসহ এলাকার সর্বস্তরের মানুষ।

তারা বলছেন, মহান এ নেতার মৃত্যুতে দেশ ও জাতির যে ক্ষতি হয়ে গেলো তা পূরণ হওয়ার নয়। তার নীতি ও আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশ সেবায় আত্মনিয়োগের আশাবাদ জেলা আওয়ামী লীগের।

অনেক দিন ধরেই অসুস্থ কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে বার বার নির্বাচিত এমপি জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত সৈয়দ আশরাফ চিকিৎসাধীন ছিলেন থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে। এ অবস্থাতেই গেলো নির্বাচনে আবারও তাকে দলীয় মনোনয়ন দেন শেখ হাসিনা। আর তার অনুপস্থিতেই বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেন কিশোরগঞ্জ-হোসেনপুরবাসী। কিন্তু শপথ গ্রহণের আগেই প্রিয় নেতার মৃত্যু সংবাদ যেন জেলাবাসীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতোই। ব্যতিক্রম গুণাবলির অধিকারী একজন সৈয়দ আশরাফের মৃত্যু যেনো কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তারা।

দু’বছর আগে জেলা আওয়ামী লীগের ইফতার পার্টিতে অংশ নিতে কিশোরগঞ্জ এসেছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এত বড় মাপের একজন রাজনীতিবিদ হলেও কিশোরগঞ্জ শহের তার নিজের কোনো বাড়ি নেই। কিশোরগঞ্জে এলে উঠতেন শহরের খড়মপট্টি এলাকায় চাচার বাসায়। প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান আত্মীয়-স্বজনও। স্ত্রী শীলা ইসলামের মৃত্যু শোক কাটতে না কাটতেই প্রিয় নেতাকে হারিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় পরিবারের লোকজন।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. মো. আতাউর রহমান বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন আমাদের আস্থার প্রতীক। তার মতো সাহসী ব্যক্তি রাজনীতিতে বিরল।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. এম এ আফজাল সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলেন, দলের ক্রান্তিলগ্নে তিনি অবিচল থেকে কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধু যেমন সৈয়দ নজরুল ইসলামের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পারতেন, ঠিক তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থার প্রতীক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তার মতো নির্মোহ ব্যক্তি এ যুগে সত্যিই বিরল। তার মৃত্যুতে কিশোরগঞ্জসহ দেশের রাজনীতির বড় ক্ষতি হয়ে গেলো।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মতো একজন নির্মোহ, সৎ ও সাহসী রাজনীতিক এ যুগে সত্যিই বিরল। দলের দুঃসময়ে তিনি আস্থার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আদর্শ বুকে ধারণ করে দেশ বিনির্মাণে সবাইকে কাজ করার আশাবাদ জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৯৬ সাল থেকে টানা ৫ বার কিশোরগঞ্জ-১ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। আগামীকাল শনিবার বিকেলে তার মরদেহ দেশে আসার কথা রয়েছে।