এক সিরিজ জয়ের হাতছানি টাইগারদের সামনে

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

বিদেশের মাটিতে এর আগেও টেস্ট সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। এই যেমন গত বছর জুলাই-আগস্টে, হারারেতে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ জিতেছিল টাইগাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেও সিরিজ জয়ের রেকর্ড রয়েছে।

কিন্তু শক্তির বিচারে এই দুই সিরিজে জিম্বাবুয়ে কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজের দল দুটি আন্তর্জাতিক মানের ছিল না। সুতরাং, বিদেশের মাটিতে সিরিজ জয়ের যে মাহাত্ম্য, তার খানিকটা পাওয়া গেলেও পুরোপুরি পাওয়া যায়নি এর আগে।

তবে এবার সেই পূর্ণ তৃপ্তি বা স্বাদ আস্বাদনের অপেক্ষায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সঠিক মাহাত্ম্য নিয়ে এবার বিরল এক টেস্ট সিরিজ জয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে টাইগাররা। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে সেই বিরল রেকর্ডটি কী সত্যি সত্যি গড়তে পারবেন মুমিনুল হকের দল?

 

মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং – সবগুলো ডিপার্টমেন্টে অসাধারণ নৈপূণ্য প্রদর্শণ করে প্রথমবারের মত টেস্টে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর গৌরব অর্জন করলো বাংলাদেশ। তাও তাদেরই মাটিতে। যেখানে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ১১ বছর আগে কেউ কিউইদের হারাতে পেরেছিল।

ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড কতটা দুর্বোধ্য, তা হাঁড়ে হাঁড়ে টের পায় সফরকারীদলগুলো। সেই সফরকারী যদি উপমহাদেশের কেউ হয়ে থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। নাকানি-চুবানি খেয়ে আসবে নিশ্চিত। বাংলাদেশ হলো তো আরও বাজে অবস্থা। কারণ, এর আগে নিউজিল্যান্ডে যতবারই বাংলাদেশ সিরিজ খেলতে গিয়েছে- কোনোবারই জয় তো দুরে থাক, নূন্যতম লড়াইটুকুও করতে পারেনি।

২০১৭ সালে একবার ওয়েলিংটনে সাকিব আল হাসানের ডাবল সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ৫৯৫ রানের বিশাল এক স্কোর গড়ে তুলেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেই টেস্টেও দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যটিং ব্যর্থতা উপহার দিয়ে হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে।

 

অথচ, মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে বাংলাদেশ কোনো একটি সেশনে নুয়ে পড়েনি। পেছনে পড়েনি। পুরো টেস্টেই দাপট দেখিয়ে জিতেছে শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে। সেই জয়ের পর আনন্দের আতিশর্য্যে হারিয়ে যাননি অধিনায়ক মুমিনুল হক। বলে দিলেন, ‘এই জয়ে আনন্দিত না হওয়ার চেয়ে সামনের দিকে তাকাতে চাই আমরা।’

২ ম্যাচের সিরিজের শেষ ম্যাচে ক্রাইস্টচার্চে বাংলাদেশ স্বাগতিকদের বিপক্ষে মাঠে নামবে আজ ভোর ৪টায় (বাংলাদেশ সময়)। হ্যাগলি ওভালে যদি বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচটি জয় সম্ভব না হোক, অন্তত ড্র’ও করতে পারে, তাহলেই সৃষ্টি হবে ইতিহাস। নিউজিল্যান্ডের পূর্ণ শক্তির দলটির বিপক্ষে সিরিজ জয়ের বিরল কৃতিত্ব অর্জন করে ফেলবে টাইগার বাহিনী।

প্রথম টেস্ট জয়ের অন্যতম নায়ক পেসার তাসকিন আহমেদ খুবই আত্মবিশ্বাসী, ক্রাইস্টচার্চেও জিতবেন তারা। মূলতঃ ২০২১ সালে ১০টি টেস্ট হারের কারণে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের মানসিকতায় যে ভঙ্গুর অবস্থা তৈরি হয়েছিল, মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে এক জয়েই সব উধাও হয়ে গেছে। ড্রেসিংরুমে এখন আত্মবিশ্বাসের ফোয়ারা বইছে যেন। তাসকিনের কথায়ও সেই আত্মবিশ্বাস পাওয়া গেলো।

ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তাসকিন বলেন, ‘ওভারঅল সবার মানসিকতা ও প্রিপারেশন ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমরা আমাদের সেরাটাই খেলব, জয়ের জন্যই খেলব। আপনারা সবাই সাপোর্ট করবেন, দোয়া করবেন যাতে সেরাটা দিয়ে ভালো খেলা উপহার দিতে পারি।’

 

বাংলাদেশের ব্যাটারদের ঘায়েল করার জন্য সবুজ উইকেট তৈরি করবে নিউজিল্যান্ড! এমনটাই শঙ্কা সবার মধ্যে কাজ করছে। বিশেষ করে ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, মিচেল সান্তনার, নেইল ওয়াগনারদের আগুনে বোলিংয়ে যেন কুপোকাত হয় টাইগার ব্যাটাররা, সে জন্যই সবুজের ফাঁদ তৈরি করছে কিউইরা।

কিন্তু এসবকে এখন আর ভয় পেলে চলবে। কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো জানিয়ে দিয়েছেন, সবুজ উইকেট তৈরি করে আমাদের ভয় লাগানো যাবে না। কারণ পেসার আমাদের হাতেও রয়েছে।

মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে এবাদত হোসেন একাই কাঁপিয়েছেন কিউইদের অস্তিত্ব। দ্বিতীয় ইনিংসে একাই নিয়েছেন ৬ উইকেট। তাসকিনও ঝড় তুলেছিলেন। ৩ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এমন পারফরম্যান্সের পর রাসেল ডোমিঙ্গো তো বড় গলাতেই বলতে পারছেন, তাদের হাতেও পেসার রয়েছে।

ডোমিঙ্গো বলেন, ‘আমাদের কয়েকজন মানসম্পন্ন পেসার আছে। খুব কম সময়ই বাংলাদেশ ঘাসের উইকেটে সুবিধা নেওয়ার কথা ভাবতে পারে। তবে এখন আমাদের দলে উঁচুমানের তিনজন পেসার আছে। তারা আত্মবিশ্বাসী। শুরুতে বোলিং করতে পারলে আশা করি তাদের ঘায়েল করতে পারব।’

তবে, প্রথম টেস্টে হারের পর দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়াতে চাইবে নিউজিল্যান্ড, এটা খুবই স্বাভাবিক। ঘরের মাঠে সিরিজ পরাজয়ের লজ্জা এড়াতে তারা মরনপণ লড়াই করবে। কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম সে দৃঢ় প্রত্যয়ই দেখিয়েছেন আজ মিডিয়ার সামনে এসে।

এখন দেখার বিষয়, ক্রাইস্টচার্চে বাংলাদেশ কী নিজেদের পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারবে? নাকি ঘুরে দাঁড়াবে নিউজিল্যান্ড? তবে, সবচেয়ে বড় কথা হলো, ক্রাইস্টচার্চে বাংলাদেশ হেরে গেলেও সিরিজে পরাজয় হচ্ছে না এবার আর। বড়জোর সিরিটা ড্র হবে, এই যা।