চরফ্যাশন প্রতিনিধি ॥ ২০০৭ সালের এই দিনে ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে চরফ্যাশন উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ শিকার হয়। ওই ঘূর্ণিঝড় প্রাণহারিয়েছিল শত শত মানুষ। নিখোঁজ হয়েছিল সহ¯্রাধিকের অধিক। ২০০৭ সালের ১৫ই নভেম্বর এখনো এক দুর্বিসহ ঘর-বাড়ি আর সহায় সম্বল হারিয়ে মানুষ হয়েছিল অসহায়। সিডরের ক্ষত এখনো বহন করে চলেছেন অধিকাংশ পরিবার। ২০০৭ সালের ১৪ই নভেম্বর সারা দেশের আকাশ ছিল মেঘলা। আবহাওয়াবিদরা প্রথমে ৫ নম্বর সতর্ক সংকেত দিতে থাকলেন। রাতে তা ৮ নম্বর বিপদ সংকেতে গিয়ে পৌছায়। ১৫ নভেম্বর সকালে ঘোষনা করা হয় সিডর নামের ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে আসছে বাংলাদেশের উপকূলে। দুপুর নাগাদ তা বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করবে, ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। রাত সাড়ে ১০ টার দিকে সিডর আঘাত হানলো উপকূলীয় এলাকায়। ঝড়ের তীব্রতা কমে যাওয়ার পর শুরু হয় স্বজনদের খোঁজাখুঁজি। কারো বাবা নেই, কারো মা নেই, কারো নেই স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, ভাই-বোন, দাদা-দাদী, নানা-নানী, চাচা-চাচী, মামা-মামী, খালা-খালু। গাছের ডালে কিংবা বাড়ীর ঘরে খুটির সংগে আটকিয়ে আছে স্বজনদের লাশ। যে দিকে ছুটে যায় শুধু লাশ আর লাশ।
উপকূলের বাতাশে কান পাতলে মৃত্যুপথ যাত্রী শত মানুষের চিৎকার আর স্বজনদের আহাজারি। ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও সেইদিনের দুঃসহ স্মৃতি আজো জেগে আছে স্বজনহারাদের মনে। দুঃস্বপ্নের মতো আজো তাড়া করে তাদের। স্বাভাবিক হয়নি সিডর বিধ্বস্ত উপকূলবাসীর জীবন যাত্রা। চর মোতাহার ইউনিয়নের বাসিন্ধা মোঃ আবদুর রহমান বলেন, আমার ঘর ভেঙ্গে গেলে আমার ছেলে মোঃ রহিম (৩৫) ঘরের নিচে চাপা পড়ে মারা যায়। আমি তাকে হারিয়ে আজো শোকাহত। ঢালচর ইউনিয়নের ইয়াছিন আলী বলেন, আমার শিশু ছেলে মোঃ আকরাম (৮) বাহির হলে গাছ ভেঙ্গে মারা যায়। আজো তাকে ভুলতে পারি নি। চর কুকরি ইউনিয়নের আবদুস সহিদ বলেন আমার মেয়ে কুলছুম (৫) কে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়ার সময় নদীর ডেউ তাকে নিয়ে যায়। ১২ বছরে পরও আজো তাকে ফিরে ফেলাম না।
সিডরের ১৯ জেলার ১০০ উপজেলার সরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা ৩৪০৬ জন। নিখোজ হন ১৫৬০ জন। দেশের প্রায় ৬ লক্ষ টন ধান নষ্ট হয়। ঝড়ের প্রভাবে ৪ লক্ষ ৩০ হাজার ঘর বাড়ী বিধ্বস্থ হয়। ২১ হাজার হেক্টোর জমির ফসল নষ্ট হয়। এ ঝড়ে প্রায় দেড় লক্ষাধিক গৃহপালিত পশু ও হাঁসমুরগী মারা যায়। সর্বশেষ চলতি মাসের ১০ নভেম্বর তারিখে ঘুর্ণিচর বুলবুল উপকূলে আঘাত হানে। বুলবুলে কেড়ে নিয়েছে চরফ্যাশন উপজেলার ১০ জেলের প্রাণ। নিখোঁজ হয়েছে ১ জন। নভেম্বর মাস উপকূলবাসীর জন্য শোকাবহ, হৃদয় বিদারক ও আতঙ্কিত মাস। সিডরের পর চরফ্যাশন উপজেলা সহ ক্ষতিগ্রহস্থ উপকূলীয় এলাকায় যে ত্রাণ এবং সরকারি রিলিফ বিতরণ করেছে তার অধিকাংশই জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের হাতে গেছে বলে, অভিযোগ স্থানীয়দের। উপকূলীয় পর্যাপ্ত পরিমান ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও বেরিবাধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন চরফ্যাশন উপকূলবাসী।