দৈনিক আক্রান্তের হিসাবে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৫ গুণ বেড়েছে। গত ১৪ ডিসেম্বর (পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায়) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হন মাত্র ২৯৫ জন। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যানুপাতে রোগী শনাক্তের হার ছিল মাত্র ১ শতাংশ। এক মাস পর আজ (১৪ জানুয়ারি) চার হাজার ৩৭৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সে হিসাবে মাসের ব্যবধানে রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৫ গুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের কারণেই প্রতিদিনই সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, ওমিক্রনের সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। উন্নত দেশগুলোতে সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যুও বাড়ছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশে সংক্রমণ বাড়লেও মৃত্যুর ঘটনা অপেক্ষাকৃত কম।
করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে ইতোমধ্যেই ১১ দফা নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। এতে ঘরে-বাইরে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণরোধে মাস্ক পরিধানসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি টিকা গ্রহণের বিকল্প নেই। রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারিভাবে বিনামুল্যে টিকা প্রদান করা হচ্ছে। ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদেরও টিকা প্রদান করা হচ্ছে। অধিক সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে টিকাপ্রদানে বর্তমানে বিশেষ টিকাদান কার্যক্রম চলছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ২২ লাখ ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে। বর্তমান ষাটোর্ধ্ব বয়সী, করোনা রোগীদের সেবাদানের সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক ও নার্সহ সংশ্লিষ্টদের এবং ফ্রন্ট লাইনারদের বুস্টার ডোজ (তৃতীয় ডোজ) দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিপ্ততরের প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক মাসে (১৪ ডিসেম্বর থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত) যথাক্রমে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল- ২৯৫ জন, ২৯৭, ২৫৭, ১৯১, ১২২, ২১১, ২৬০, ২৯১, ৩৫২, ৩৮২, ৩৪২, ২৭৫, ২৬৮, ৩৭৩, ৩৯৭, ৪৯৫, ৫০৯, ৫১২, ৩৭০, ৫৫৭, ৬৭৪, ৭৭৫, ৮৯২, এক হাজার ১৪০, এক হাজার ১৪৬, এক হাজার ১১৬, এক হাজার ৪৯১, দুই হাজার ২৩১, দুই হাজার ৪৫৮, দুই হাজার ৯১৬, তিন ৩৫৯ এবং চার হাজার ৩৭৮ জন। গত ১৪ ডিসেম্বর সংক্রমণের হার ১ শতাংশ থাকলেও ১৪ জানুয়ারি তা বেড়ে ১৪ দশমিক ৬৬ শতাংশে দাঁড়ায়।
সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ তিন হাজার ৬০৭ জন শনাক্ত হন। ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) তিন হাজার ৪৮৯ জন শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়াও ফরিদপুরে ২০ জন,গাজীপুরে ২২ জন, গোপালগঞ্জে পাঁচজন, কিশোরগঞ্জে ১৫ জন, মাদারীপুরে পাঁচজন, মানিকগঞ্জে ১২ জন, মুন্সিগঞ্জে দুইজন, নারায়ণগঞ্জে ২৫ জন, নরসিংদীতে পাঁচজন, রাজবাড়ীতে দুইজন এবং টাঙ্গাইলে পাঁচজন শনাক্ত হন।
এ সময়ে চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বমোট ৪১৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হন। তাদের মধ্যে চট্টগ্রামে ২৯৬ জন, কক্সবাজারে ৫৪ জন, বান্দরবানে নয়জন, রাঙ্গামাটিতে তিনজন, খাগড়াছড়িতে চারজন, ফেনীতে পাঁচজন, নোয়াখালীতে চারজন, লক্ষ্মীপুরে সাতজন, চাঁদপুরে ১১জন এবং কুমিল্লায় ২৫ জন শনাক্ত হন।
গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী বিভাগে সর্বমোট ১১৭ জন আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে রাজশাহীতে ২৯ জন, নাটোরে ছয়জন, নওগাঁয় তিনজন, পাবনায় ১৭ জন, সিরাজগঞ্জে ১৩ জন, বগুড়ায় ২৫ জন এবং জয়পুরহাট ২৪ জন আক্রান্ত হন।
এ সময়ে রংপুর বিভাগে সর্বমোট ২৮ জন আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে রংপুরে আটজন, লালমনিরহাটে তিনজন, দিনাজপুরে ১৫ জন এবং গাইবান্ধায় দুইজন আক্রান্ত হন।
আলোচ্য সময়ে খুলনা বিভাগে সর্বমোট ৮১ জন আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে যশোরে ২৫ জন, ঝিনাইদহে ১৫ জন, খুলনায় ১৩ জন, কুষ্টিয়ায় ১৮ জন, মাগুরায় দুইজন, নড়াাইলে সাতজন এবং সাতক্ষীরায় একজন শনাক্ত হন।
এছাড়াও বরিশাল বিভাগে সর্বমোট ২১ জন আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে বরিশালে ১৬ জন, পটুয়াখালীতে একজন, ভোলায় দুইজন এবং ঝালকাঠিতে দুইজন শনাক্ত হন।
সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে সর্বমোট ৭৭ জন আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে সিলেটে ৬১ জন, হবিগঞ্জে পাঁচজন এবং মৌলভীবাজারে ১১ জন আক্রান্ত হন।