এক পায়ে লাফিয়ে কাটছে সুমাইয়ার কষ্টের জীবন

:
: ২ years ago

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার আলোকডিহি ইউনিয়নের রিকশাচালক শফিকুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া (১০)। আলোকডিহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির এই শিক্ষার্থীর ছোটবেলা থেকেই এক পায়ে সমস্যা।

জানা যায়, সুমাইয়ার যখন দুই বছর বয়স, তখন গুটিবসন্ত (স্মল পক্স) হয়। এরপর থেকে তার বাম পা আস্তে আস্তে বেঁকে যেতে থাকে। বাম পায়ের চলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় গত আট বছর ধরে এক পায়ে লাফিয়ে চলছে সুমাইয়ার কষ্টের জীবন।

 

বাড়ি থেকে সুমাইয়ার বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। এক পায়ে ভর করেই এই পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করছে সে।

বর্তমানে বাম পা দিয়ে চলাচল করতে না পারলেও চিকিৎসা করলে এটি ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে চিকিৎসা করাতে যে অর্থের প্রয়োজন তা জোগানো অসম্ভব সুমাইয়ার রিকশাচালক বাবার পক্ষে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সরকারি জমিতে ছোট একটি কুঁড়ে ঘরে মায়ের সঙ্গে থাকে সুমাইয়া। বাবা ঢাকায় রিকশা চালায়। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম শফিকুল ইসলামের টাকা দিয়েই কোনও রকমে চলে সংসার।

 

শিক্ষার্থী সুমাইয়া বলেন, ‘বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব অনেক বেশি। প্রতিদিন আমাকে এক পায়ে ভর করে লাফিয়ে স্কুলে যেতে হয়। এতে খুব কষ্ট হয়। ক্লাসের বাকি সহপাঠীদের মত আমিও সুন্দরভাবে বাঁচতে চাই। লেখাপড়া করে ডাক্তার হতে চাই।’

সুমাইয়ার মা সুমি আক্তার বলেন, ‘দুই বছর বয়সে সুমাইয়ার গুটিবসন্ত হয়। এরপর থেকে বাম পা বেঁকে যেতে থাকে। মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সংসারে যা ছিল সব খুইয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসকরা বলেছেন, উন্নত চিকিৎসা করালে সুমাইয়ার পা ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এত টাকা পাবো কোথায়। মেয়েটা এক পায়ে ভর করে সংসারের সব কাজে সাহায্য করে, প্রতিদিন স্কুলে যায়। ওর এই কষ্ট সহ্য হয় না।’

 

সুমাইয়ার বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গরীব মানুষ, রিকশা চালিয়ে খাই। মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে যা ছিল, সব শেষ। তবুও মেয়েকে সুস্থ করতে পারিনি। মেয়েকে সুস্থ করার জন্য সরকারসহ দেশের বিত্তবানদের নিকট সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছি।’

আলোকডিহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘সুমাইয়া এক পায়ে ভর করে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসে। সে খুব মেধাবী ছাত্রী। লেখাপড়ার প্রতি তার আগ্রহ রয়েছে। আশা করি, সমাজের বিত্তবানরা অসহায় শিশুটির চিকিৎসায় এগিয়ে আসবে।’