এক নজরে শান্তিতে নোবেলজয়ী দুই সাংবাদিক

:
: ৩ years ago

মানবাধিকার প্রশ্নে আপসহীন সাংবাদিক মারিয়া রেসা ও দিমিত্রি মুরাতভ। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় দীর্ঘদিন কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ফিলিপাইন ও রাশিয়ার এ দুই সাংবাদিক পেয়েছেন এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার। দীর্ঘ বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়েছেন তারা। এখনও কাজ করে যাচ্ছেন মানুষের কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠায়। শান্তিতে তাদের নোবেল পুরস্কার অর্জন প্রেরণা যোগাবে বিশ্বজুড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মরত সাংবাদিকদেরও।

এখন বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রেসা ও মুরাতভই। শুক্রবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে নরওয়ের রাজধানী অসলোতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নোবেল কমিটি বিজয়ী দুজনের নাম ঘোষণার পর তাদের পরিচয় কী, তারা কী ভূমিকা রেখেছেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতায়, এমন নানান প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন সবাই।

রেসা ও মুরাতভকে বিজয়ী ঘোষণা করে নোবেল কমিটির তরফ থেকে বলা হয়, ‘গণতন্ত্র ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পূর্বশর্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষায় ভূমিকা রাখায় মারিয়া রেসা ও দিমিত্রি মুরাতভকে এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি।’

নোবেল কমিটি এ যুগলকে ‘এমন ভূমিকা রাখা সব সাংবাদিকের প্রতিনিধি’ হিসেবে অভিহিত করে।

রেসার ব্যাপারে কমিটির তরফ থেকে বলা হয়, ফিলিপাইনের অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘র‌্যাপলার’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা রেসা তার মাতৃভূমি ফিলিপাইনে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার, সংঘাতের ব্যবহার এবং ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদের উন্মোচনে’ মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ব্যবহার করে প্রশংসনীয় স্থান লাভ করেছেন।

অন্যদিকে মুরাতভের বিষয়ে বলা হয়, ‘নভায়া গাজেতা’ পত্রিকার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও টানা দুই যুগের প্রধান সম্পাদক মুরাতভ ‘ক্রমবর্ধমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও’ কয়েক দশক ধরে রাশিয়ায় বাকস্বাধীনতা রক্ষায় লড়াই চালিয়ে আসছেন।

নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার খবর জানার পর মারিয়া রেসা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি বাকরুদ্ধ।’ আর দিমিত্রি মুরাতভ বলেন, ‘আমি (আনন্দে) হাসছিই শুধু। আমি আসলে এতটা আশা করিনি।’

সাহসী মারিয়া রেসা

র‌্যাপলার ও নোবেল কমিটির তথ্য মতে, সাংবাদিকতায় ৩৫ বছর পার করেছেন এশিয়ার গর্ব মারিয়া রেসা। মাতৃভূমি ফিলিপাইনের মানুষের মতপ্রকাশের ব্যাপারে সব সময় সোচ্চার তিনি। দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে র‌্যাপলার। তবে কাজ করতে গিয়ে সব সময় তিনি ফিলিপাইন সরকারের রোষানলে পড়েন। প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুর্তেতের সরকার তাকে আটকও করে। যদিও পরে ছাড়া পান রেসা।

তিনি সাহসী পদক্ষেপ এবং ভূমিকার জন্য ২০১৮ সালে টাইম ম্যাগাজিনের ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালে টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে ‘শতাব্দীর সেরা প্রভাবক মানুষ’ হিসেবে স্বীকৃতি পান। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির শত উৎসাহদাতার তালিকায়ও উঠে আসে তার নাম। ২০২০ সালে তিনি ‘জার্নালিস্ট অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য কাজ করায় তিনি জিতে নেন গোল্ডেন পেন ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড। এছাড়াও সাংবাদিকতার বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন রেসা।

র‌্যাপলার প্রতিষ্ঠা করার আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রেসা পর্যটনকেন্দ্রিক অনুসন্ধানী কাজের ওপর জোর দেন। ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি জাকার্তা ব্যুরো খোলার আগে প্রায় এক দশক সিএনএন এর ম্যানিলা ব্যুরোয় কাজ করেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে নিয়ে তিনি লিখেন ‘সিডস অব টেরর’ নামে বই, যেখানে আল কায়েদা ও ওসামা বিন লাদেন সম্পর্কিত তথ্যও উঠে আসে।

লড়াকু দিমিত্রি মুরাতভ

‘নভায়া গাজেতা’ ও নোবেল কমিটির তথ্যানুসারে, রাশিয়ার পত্রিকা ‘নভায়া গেজেতা’র প্রধান সম্পাদক দিমিত্রি মুরাতভ শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও পরিচিত মুখ। ৫৯ বছর বয়সী মুরাতভ কখনো সত্যের পথ থেকে পিছপা হটেননি।

রাশিয়ায় সমালোচকদের অনেককেই ‘ফরেন এজেন্ট’ বলে অভিযুক্ত করা হয়। স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করা দেশটিতে খুবই কঠিন ব্যাপার। এই প্রতিকূলতার মধ্যেই মুরাতভ কয়েক দশক ধরে রাশিয়ায় স্বাধীন সাংবাদিকতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মুরাতভ ১৯৯৩ সাল থেকে কর্মরত ‘নভায়া গেজেতা’র পুরো টিমকে এই পুরস্কার উৎসর্গ করেছেন। বিশেষ করে পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে যে ছয়জন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের স্মরণ করেছেন তিনি।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর তিনিই প্রথম রাশিয়ান, যিনি শান্তিতে নোবেল পেলেন। এর আগে ১৯৯০ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ এ পুরস্কার পান। তার আগে ১৯৭৫ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের নাগরিক হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান পদার্থবিদ, মানবাধিকারকর্মী আন্দ্রেই শাখারভ।

সূত্র: র‌্যাপলার.কম, দ্যা মস্কো টাইমস