এক নজরে পদ্মা সেতুর ধারাক্রম

:
: ৪ years ago

কুয়াশা, ঝড় বা বৃষ্টি অথবা নাব্য সংকট। এর কোনো একটি হলেই বন্ধ রাখা হতো ফেরি ও লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল। ফলে ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়েছে মানুষকে। সেই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার জনগণ। কাঠখড়, ঘাত-প্রতিঘাত, গুজব, আরও কত বাধা- সব পেরিয়ে প্রমত্ত পদ্মার বুকে গৌরবের প্রতীক হয়ে দৃশ্যমান হয়েছে পদ্মা সেতু।

২০০৯ সালের ১৯ জুন সেতুর নকশা প্রণয়নের প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে। এরপর ২৯ জুন পরামর্শকের সঙ্গে চুক্তি হয়। পদ্মা সেতুর কাজ ২০১৩ সালের মধ্যে শেষ করার সময় নির্ধারণও করা হয় সে সময়।

২০১০ সালে প্রিকোয়ালিফিকেশন দরপত্র আহ্বান করা হয়। পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে আগ্রহ দেখায় বিশ্বব্যাংক। সেই সঙ্গে সহযোগী হতে চায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিপি), ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ও জাইকা।

২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়। পদ্মা নদীতে ‘ভাষা শহীদ বরকত’ নামের ফেরিতে এই চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া আর বিশ্বব্যাংকের পক্ষে বাংলাদেশে সংস্থাটির আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টাইন। বিশ্বব্যাংকের ইতিহাসে কোনো একক প্রকল্পে এটাই হতো সবচেয়ে বড় ঋণ।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া সেদিন জানান, ওই বছরের শেষ দিকে সেতুর কাজ শুরু হবে। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তিন বছর সময় দেয়া হবে। অর্থাৎ সেতুর কাজ শেষ হবে ২০১৫ সালের আগেই।

একই প্রকল্পে ২০১১ সালের ১৮ মে জাইকার সঙ্গে, ২৪ মে আইডিবির সঙ্গে এবং ৬ জুন এডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়। এডিবি ৬১ কোটি, জাইকা ৪০ কোটি ও আইডিবি ১৪ কোটি ডলার দেবে বলে ঠিক হয়।

কিন্তু বিশ্বব্যাংক উড়ো কথার ভিত্তিতে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তোলার পর শুরু হয় টানাপড়েন। সংস্থাটির অভিযোগ ছিল, কানাডার প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিন কাজ পেতে বাংলাদেশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে।

সরকার শুরু থেকেই এই অভিযোগ নাকচ করলেও বিশ্বব্যাংক চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে ২০১১ সালে ঋণচুক্তি স্থগিত করে।

পরে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াকে প্রধান আসামি করে সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। কিন্তু বিশ্বব্যাংক চাপ দিতে থাক সে সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে আসামি করতে।

সরকারি রাজি না হওয়ার পর ২০১২ সালের ৩০ জুলাই ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। পরে চুক্তি অনুযায়ী বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ায় সরে যায় এডিবি, জাইকা ও আইডিবি।