একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের কাছে একটি সংগ্রামী ঐতিহ্য এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ চেতনা। একুশ আমাদের শিখিয়েছে, যেকোন অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে। আমরা যখনই অন্ধকার শক্তির আক্রমণের শিকার হয়েছি, একুশ হয়ে উঠেছে তখন প্রতিরোধের সাহস। অবশ্য এটাও সত্য যে, আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির শক্তি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতিপক্ষ অন্ধকার শক্তিও বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। সে কারণেই মাতৃভাষার হাত ধরে থাকা মুক্তচিন্তা ও বাঙালি সংস্কৃতির উপরে হামলার ঘটনাগুলো পূর্বেও ঘটেছে এখনো ঘটছে। অপশক্তিরা ভাল করেই জানে— বাঙালির শিকড় তার ভাষার লড়াই। সে কারণেই পাকিস্তানিরা মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সময়েই গুঁড়িয়ে দিয়েছে শহিদ মিনার। কিন্তু তারা বুঝেনি এই মিনার আমাদের কাছে ইট সিমেন্টের একটি অবয়বই নয়,আমাদের হৃদয়ে স্থাপিত এক বাতিঘর। সেই কারণেই এই মিনার কখনও ভেঙে ফেলা সম্ভব না।
বায়ান্নোর একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের মিছিলে গুলি চললে ঢাকা নয়,পুরো জনপদ জুড়েই হয়েছিল জনবিষ্ফোরণ। যে বিষ্ফোরণ সামাল দেওয়ার ক্ষমতা কোনও শাসকেরই কখনও থাকে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনের সেই চূড়ান্ত সময়টিতে কারাগারে আটক থাকা সত্যেও ছাত্র কর্মীদের যেমন দিক নির্দেশনা দিয়েছেন,তেমনই পরবর্তীতে ৬ দফা,থেকে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। সেখানকার প্রতিটি পদক্ষেপেই রাজনীতির সাথে প্রগাঢ় ভাবে মিশে ছিল দেশ ও মাতৃভাষার প্রেম। সেই সময়ে শহীদের রক্ত শত শোকের মাঝেও আমাদের ভাষার অধিকার দিয়েছে। আর সেই গৌরব আজ বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে পরিচিত করে তুলেছে। আমাদের হাত ধরেই এ বিশ্ব পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে পৃথিবীর ১৮৮টি দেশে এ দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়। এটাই চির সত্য যে, এখনো বিশ্বজুড়ে ১৯৫২-র একুশের শহিদেরা রয়েছেন প্রতিটি বর্ণমালার পাহারাদার হয়ে সম্মানের চূড়ায়।
বাংলাদেশ থেকে এখনও পুরো মুছে যায়নি পাকিস্তানি ভাবাদর্শ। তারা সাধারণ মানুষের দিনযাপনের মাঝে বিভিন্ন কৌশলে তাদের দুষ্ট ভাবাদর্শ গুঁজে দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু,এই সাধারণ মানুষের হৃদপিন্ডে যে চির প্রেরণার প্রতীক ৫২ সালের ভাষার লড়াই গুঁজে দিয়ে গিয়েছে,তার কাছে সব অন্ধকারই বার বার পরাজিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে কারণ আমাদের আছে একুশের সাহস। আমরা একুশকে হৃদয়ে ধারণ করে চলি এবং বিশ্বাস করি একুশের চেতনার বিনাশ নেই আছে শুধুই বিকাশ।