পঞ্চগড় শহরের কামাতপাড়া মহল্লার একটি রাস্তায় একমাস বয়সী কন্যাশিশুকে ফেলে পালিয়ে গেছে তার মা।গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে ফুটফুটে শিশুটিকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিশুটিকে তার মা দত্তক দিতে না পেরে ওই গলিতে ফেলে রেখে পালিয়ে যান বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।তবে ফেলে যাওয়ার পর শিশুটিকে দত্তক নিতে অনেকেই ভিড় করেছেন হাসপাতালে। শিশুটি সুস্থ রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম হাসপাতালে শিশুটিকে দেখতে যান। পরে তারা কামাতপাড়া মহল্লায় শিশুটির মায়ের নানা বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত শিশুটির মায়ের কোনও খোঁজ পায়নি পুলিশ।পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানার ভিতরগর এলাকার গৃহবধূ রিমু আক্তার দুই বছর আগে দিনাজপুরের পার্বতীপুর এলাকার এক ট্রাকচালকের সঙ্গে পালিয়ে যান।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রিমু তার নানাবাড়ি জেলা শহরের কামাতপাড়া এলাকায় এসে পেয়ারা বেগম নামের এক গৃহবধূকে তার কন্যাশিশুটিকে দত্তক নিতে অনুরোধ করেন। এতে পেয়ারা বেগম রাজি না হলে পাশের একটি গলিতে শিশুটিকে রেখে পালিয়ে যান রিমু। রাতে শিশুটিকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়।পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সিরাজউদ্দোলা পলিন বলেন, শিশুটিকে হাসপাতালের শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। শিশুটি সুস্থ রয়েছে। একজন প্রসূতি মাকে দিয়ে তার খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।শিশুটির মা রিমুর মামা মো. মুক্তা বলেন, প্রায় দুই বছর আগে স্বামী-সংসার ছেড়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুর এলাকার এক ট্রাকচালকের হাত ধরে পালিয়ে যায় রিমু। এরপর আমরা আর তার কোনও খোঁজ করিনি। শুনেছি বৃহস্পতিবার সে নাকি তার শিশুসন্তানসহ আমাদের বাসায় এসেছিল। আমি সেসময় বাসায় ছিলাম না। পরে শুনেছি কোলের শিশুটিকে রেখে সে পালিয়ে গেছে। আমরাও তাকে খোঁজ করেছি। কিন্তু বর্তমানে সে কোথায় আছে আমরা জানি না।কামাতপাড়া এলাকার গৃহবধূ পেয়ারা বেগম বলেন, সন্ধ্যায় রিমু আমাদের বাসায় এসে শিশুটিকে দত্তক নিতে বলেন। আমি বাসায় মেহমান আছে বলে শিশুটিকে নিতে চাইনি। পরে শুনলাম শিশুটি রেখে সে নাকি পালিয়ে গেছে।পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, শিশুটিকে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। সেখানে দুই নারী পুলিশ সদস্য রয়েছেন। আগে আমরা শিশুটির মাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। মা বা প্রকৃত অভিভাবককে খুঁজে পাওয়া গেলে তাদের হাতে শিশুটিতে তুলে দেওয়া হবে।জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, কোনও মা যদি নিরাপত্তার অভাবে শিশুটিকে এভাবে রেখে যান, তবে তা খুবই দুঃখজনক। এই ফুটফুটে বাচ্চার ভবিষ্যতকে সুন্দর করা আমাদের সবার দায়িত্ব। এটা রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব। শিশুটির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য যা করার দরকার, আমরা তাই করার চেষ্টা করবো।