ক্ষমতার শেষবেলায় ডোনাল্ড ট্রাম্প উল্টাপাল্টা কিছু করতে পারেন, এমন আশঙ্কা ছিল আগে থেকেই। শেষপর্যন্ত সেটাই সত্য হলো। ২০০ বছরের ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্রে যা কখনো ঘটেনি, সেটাই ঘটিয়ে ছাড়লেন ট্রাম্প। সমর্থকদের উসকে দিয়ে জো বাইডেনকে কংগ্রেসে জয়ী ঘোষণা আটকাতে চেয়েছিলেন তিনি। ফলাফল- অধিবেশন চলাকালে পার্লামেন্ট ভবনে নজিরবিহীন হামলা।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহতের সংখ্যা আরও বেশি। সবচেয়ে বড় কথা, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ইতিহাসে যে কালির আঁচড় লাগল, তা হয়তো মুছবে না কখনোই। এমন ঘটনায় সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে-বাইরে। ট্রাম্প সমর্থকদের নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা, এমনকি প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনেক রিপাবলিকান নেতাও। ইতোমধ্যে পদত্যাগও করেছেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান মিত্র যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পার্লামেন্ট ভবনে হামলাকে ‘লজ্জাজনক ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেছেন। সবসময় ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়ে আসা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা দু’জনই শান্তিপূর্ণভাবে ট্রাম্পকে ক্ষমতা হস্তান্তরের অনুরোধ জানিয়েছেন।
এছাড়াও নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেয়েরেস, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন যার লিয়েন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁর মতো নেতারা।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান নেতা জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেছেন, এটা অসুস্থ এবং হৃদয় বিদারক দৃশ্য। যুক্তরাষ্ট্রের মতো গণতান্ত্রিক দেশে এর কোনো জায়গা নেই।
পার্লামেন্ট ভবনে তাণ্ডবকে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহচর ও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ‘কালো দিন’ বলে উল্লেখ করেছেন। সিনেটে রিপাবলিকানদের নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেছেন, যারা গণতন্ত্র বিঘ্নিত করতে চেয়েছিল, তারা পারেনি, তারা পরাজিত হয়েছে।
ইউএস ক্যাপিটলে হামলার পর ট্রাম্পের কাছ থেকে দূরে যেতে শুরু করেছেন অনেকেই। ইতোমধ্যে হোয়াইট হাউসের তিন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন, আরও কয়েকজন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। জানা গেছে, হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সারাহ ম্যাথিউস, সোশ্যাল সেক্রেটারি রিকি নিকেটা ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ স্টেফানি গ্রিশ্যাম বুধবার রাতে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
আগে বাইডেনকে জয়ী ঘোষণায় বিরোধিতা করলেও ক্যাপিটলে হামলার পর সেই আপত্তি তুলে নিয়েছেন দুই রিপাবলিকান সিনেটর কেলি লোয়েফার এবং লিন্ডসি গ্রাহাম।
নিন্দনীয় এ ঘটনায় জনপ্রিয়তায়ও ভাটা পড়েছে ট্রাম্পের। বিশ্লেষকরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প গত নির্বাচনে হারার পর ২০২৪ সালের নির্বাচনে আবারও প্রার্থী হওয়ার যে স্বপ্ন দেখছিলেন, বুধবারের ঘটনায় তা মিলিয়ে যেতে বসেছে।
হামলায় সমর্থন জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও বেশ তোপের মুখে রয়েছেন ট্রাম্প। ঘটনার পর হামলাকারীদের ‘দেশপ্রেমিক’ উল্লেখ করে এক ভিডিও বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘তোমাদের ভালোবাসি।’ এর পরপরই ফেসবুক ও টুইটার তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। আর ভিডিও সরিয়ে নেয় ইউটিউব।
ফেসবুক ও টুইটার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার পোস্টের মাধ্যমে সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন ব্যবহারকারীরা। এজন্য টুইটারে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট ১২ ঘণ্টা এবং ফেসবুকে ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে। তবে সবচেয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছে ট্রাম্পের প্রিয় টুইটার। তারা জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিতর্কিত টুইট বাদ না দিলে তার অ্যাকাউন্ট চিরতরে বন্ধ করে দেয়া হবে।
সূত্র: সিএনএন, বিবিসি, আল জাজিরা
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com