ব্যাংকের আমানতে ৬ ও ঋণে হবে ৯ শতাংশ সুদহার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এমনই ঘোষণা দেন বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালক ও ব্যবস্থাপকরা। ব্যাংকগুলো এটি বাস্তাবায়নে সরকারের কাছ থেকে নানা সুযোগ সুবিধাও নিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখনো ১০ শতাংশের উপরে ঋণের সুদ আদায় করছে বেশিরভাগ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনাও মানছে না তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরের জুলাই থেকে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ব্যাংক উদ্যোক্তা পরিচালকদের সংগঠন ‘বিএবি’। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ ঘোষণা দেন তারা। তাই যেসব ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামনেনি; তারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্য করেছেন।
ব্যাংকের আমানত ও ঋণের সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) ৪ শতাংশীয় পয়েন্টের নিচে রাখার নির্দেশনা থাকলেও অনেক ব্যাংক বেশিরভাগ ব্যাংকই এ নির্দেশনা মানছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, আগস্ট মাস শেষে ৩১টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের সুদহার ১০ শতাংশের বেশি আদায় করছে। আর ৩৪টি ব্যাংকের স্প্রেড ৪ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপরে রয়েছে। আগস্ট শেষে ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। অনেক ব্যাংক এখনও স্প্রেড নিচ্ছে ৮ শতাংশের ওপরে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
তারল্য ব্যবস্থাপনার ওপর বাড়তি চাপকে কেন্দ্র করে সুদহার বাড়তে থাকায় তা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ৩০ মে এক নির্দেশনায় বলা হয়, ব্যাংকগুলো বিভিন্ন প্রকার ঋণের সুদহার ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি করছে। ঋণের সুদহার অযৌক্তিক মাত্রায় বৃদ্ধি করা হচ্ছে যা উদ্বেগজনক। তাই সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করতে ভোক্তা ঋণ ও ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে স্প্রেড ৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। আগে যা ৫ শতাংশ ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গড়ে ১০ শতাংশের বেশি ঋণের সুদ নিচ্ছে ৩১ ব্যাংক। এর মধ্যে বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের ঋণের সুদহার ১০ দশমিক ২১ শতাংশ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ, বেসরকারি এবি ব্যাংকের ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ, সিটি ব্যাংকের ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ, আইএফআইসি ১০ দশমিক ০৪ শতাংশ, উত্তরা ব্যাংকের ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ, সীমান্ত ব্যাংক ১০ দশমিক ০৮ শতাংশ, ইস্টার্র্নে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ, এনসিসির ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ, ঢাকা ব্যাংকের ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ, ডাচ-বাংলায় ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ডে ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ, ওয়ান ব্যাংক ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ, এক্সিমের ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ, প্রিমিয়ারে ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ফাস্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংকের ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়ার ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্প্রেড হার সবচেয়ে বেশি রয়েছে বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের। ব্যাংকটি আমানতের বিপরীতে গড়ে এক দশমিক ৭১ শতাংশ সুদ দিয়েছে। আর ঋণে সুদ নিয়েছে ১০ দশমিক ২১ শতাংশ। বিদেশি খাতের এ ব্যাংকটির স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। ব্র্যাক ব্যাংক আমানতের বিপরীতে সুদ দিয়েছে ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর ঋণের বিপরীতে নিয়েছে সুদহার ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ব্যাংকটির স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ডাচ বাংলা ব্যাংক সুদ দিয়েছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ আর নিয়েছে ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ। ব্যাংকটির স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
গত আগস্ট শেষে ব্যাংকগুলো গড়ে ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ সুদে আমানত নিয়েছে। আর ঋণ বিতরণ করেছে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ সুদে। এতে করে স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২৭ শতাংশীয় পয়েন্ট। স্প্রেড ৪ শতাংশের নিচে না নামানোর তালিকায় রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানার একটি ব্যাংক, বিদেশি মালিকানার ৭টি এবং বেসরকারি খাতের ২৬টি ব্যাংক।
আগস্টে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ, বিশেষায়িত ব্যাংকের ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, বিদেশি ব্যাংকগুলোর ৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ।