জাতীয় সংসদের ৩৩ নম্বর আসন গাইবান্ধা-৫। আশির দশক থেকে আসনটিতে ছয়বার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। তিনবার জাতীয় পার্টি ও তিনবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ২০০১ সালে রওশন এরশাদের কাছে পরাজিত হন ফজলে রাব্বী মিয়া।
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার প্রয়াণে সম্প্রতি গুঞ্জন উঠেছে- কে ধরবেন এ আসনে হাল? কার হাতে যাচ্ছে নৌকার বৈঠা? এ নিয়ে গাইবান্ধা আওয়ামী লীগ দুইভাগে বিভক্ত। কেউ প্রয়াত ডেপুটি স্পিকারের মেয়ে ফারজানা রাব্বী বুবলীর পক্ষে, কেউ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনের পক্ষে। তবে নৌকার প্রার্থী কে হবেন— চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড।
ভোট বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, আসনটি বরাবরই জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের হাতে ছিল। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে এ আসনে জয়ী হন ফজলে রাব্বী মিয়া। ১৯৯১ সালেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুন্নবী প্রধানকে ১৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ফজলে রাব্বী মিয়া। ১৯৯৬ সালেও জাতীয় পার্টির হয়ে ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাবিবুর রহমানকে পরাজিত করেন। এরপর ২০০১ সালে ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী রওশন এরশাদের কাছে ২১ হাজার ভোটে হেরে যান আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলে রাব্বী মিয়া। পরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে টানা জয়লাভ করেন।
এখন পর্যন্ত এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলেই আছে। এখানে যোগ্য ব্যক্তিকে নৌকা দিলে সহজেই জয় নিশ্চিত করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাদের কেউ কেউ প্রয়াত ডেপুটি স্পিকারের মেয়ে ফারজানা রাব্বী বুবলীর পক্ষে এবং কেউ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনের পক্ষে কথা বলছেন। তবে কিছু সংখ্যক মানুষ আছেন। তারা বলছেন, নৌকা যার আমরা তার।
এ নিয়ে ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম সেলিম পারভেজ জাগো নিউজকে বলেন, গেলো দুইবার আমি প্রার্থী হয়েছিলাম। আমিও একজন প্রার্থী। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন আমরা তার পক্ষে কাজ করবো।
সাঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুইজন ও জাতীয় পার্টির দুইজন মনোনয়ন চায়। এর বাইরে স্বতন্ত্র থাকতে পারে কেউ। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বোর্ড কাকে মনোনয়ন দেয় দেখা যাক।
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা চাই প্রয়াত ডেপুটি স্পিকারের মেয়ে ফারজানা রাব্বী বুবলী আসুক। তার তো এটা হক। তারা বাবা ফজলে রাব্বী মিয়া মারা গেছেন। বাকি ১৫ মাসের জন্য তাকে দিক।
তবে, এ নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, বিষয়টি একান্তই মনোনয়ন বোর্ডের বিষয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মনোনয়ন বোর্ড যাকে বাছাই করবেন, তার পক্ষে সবাইকে নিয়ে কাজ করার জন্য প্রস্তুত তারা।
গত শুক্রবার (২২ জুলাই) বাংলাদেশ সময় দিনগত রাত ২টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফজলে রাব্বী মিয়া। এ সময় তার বড় মেয়ে ফাহিমা রাব্বী রিটা ও একান্ত সচিব তৌফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৪৬ সালের ১৫ এপ্রিল গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার গটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ফয়জার রহমান ও মায়ের নাম হামিদুন নেছা।
১৯৭১ সালে ফজলে রাব্বী মিয়া মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বৈশ্বিক জনমত গড়ে তুলতে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন।