ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। কিন্তু সেই ঈদের আনন্দ যেন নেই হাওরপাড়ে। এমনকি ঈদ উদযাপনে নেই কোনো প্রস্তুতি। বরং দুঃখ আর বুকভরা হতাশা নিয়ে এবছর ঈদ পালন করছেন হাওর পাড়ের মানুষ।
বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা যায়, সুনামগঞ্জে কৃষকের ঘরে এবারের ঈদ যেন বাড়তি কষ্ট নিয়ে এসেছে। একদিকে ধান তলিয়ে যাওয়ার বেদনা অন্যদিকে ঈদে ছেলে-মেয়েকে নতুন জমা কিনে দিতে না পারার যন্ত্রণা।
শুধু তাই নয়, ঈদ ভুলে পানি থেকে তুলে আনা ধান শুকাতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে পরিবারের শিশুসহ অন্য সবাই। এমনকি হাওরের কাঁচা ও আধাপাকা ধান কৃষকরা এখনও কাটছেন।
কৃষকরা জানান, এই বছর একটা ধানও ঘরে তুলতে পারিনি। যদিও কিছু ধান পানির নিচ থেকে কষ্ট করে কেটে নিয়ে এসেছি, তা শুকাতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিবারের সবাইকে নিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তারা আরো বলেন, ঘরে খাবার নেই। এবারের ঈদটা আমাদের জন্য খুব যন্ত্রণাদায়ক। কারণ ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা নতুন জামা কিনে দেওয়ার জন্য কান্নাকাটি করলেও কিছুই দিতে পারিনি।
তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের কৃষক মোতালেব মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, পানির ভয়ে একেবারে কাঁচা ধান কেটেছি। এখন সেই ধান বিক্রি করতে পারছি না। ঈদে ছেলে মেয়েদের একটা নতুন জামাও কিনে দিতে পারিনি।
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওরের কৃষক রাজিব মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, একমুঠো ধানও ঘরে তুলতে পারিনি। তারওপর ঈদ যেন আনন্দের বদলে বাড়তি যন্ত্রণা নিয়ে এসেছে।
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরের কৃষক জনিক মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আশা নিয়ে ফসল করেছিলাম, সব ফসল বানের পানিতে ডুবে গেলো। এখন ঘরে খাবার নাই, ছেলে মেয়েদের নতুন জামা কোথা থেকে কিনে দেবো।
হাওর পাড়ের শিশু পাপ্পু মিয়া ও কয়েস মিয়া জাগো নিউজকে জানায়, সকাল থেকে বাবার সঙ্গে হাওরে ধান কাটে, ধান শুকায় তারা। ঈদে তাদের বাবা নতুন জামা কিনে দিতে পারেননি।
হাওর পাড়ের শিশু কবির মিয়া জাগো নিউজকে বলে, বাবা ধান ঘরে তুলতে পারলে খাবার খেতে পারি। কিন্তু এবছর হাওরের ধান ঘরে ওঠেনি। তাই এই বছর ঈদের কাপড় কিনিনি।
সুনামগঞ্জে বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে ঈদ বাজারেও। সারাদিন দোকানে বসে কাটালেও আশানুরূপ ক্রেতার দেখা মেলেনি এবার।
ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার কারণে গত দুই বছর ঈদে তেমন বিক্রি করতে পারিনি। এ বছর ভেবেছিলাম ঈদ বাজার জমে যাবে। কারণ গ্রামগঞ্জ থেকে মানুষ আসতে কোনো বাধা বিপত্তি নেই। কিন্তু হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ায় ঈদ বাজার তেমন একটা জমেনি।
এদিকে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, হাওরে ফসল তলিয়ে প্রায় ২০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ঈদ সামনে রেখে হাওরে কৃষকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সাহায্য পাঠানো হয়েছে।