ঈদ নেই নিহত হাদিসুরের পরিবারে, এখনো শোকে স্তব্ধ গোটা বাড়ি

:
: ২ years ago

প্রতিবছরের মতো আনন্দ উচ্ছ্বাস নিয়ে এসেছে ঈদুল ফিতর। কিন্তু ঈদের আনন্দ নেই ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’তে রকেট হামলায় নিহত নৌ প্রকৌশলী হাদিসুর রহমানের পরিবারে।

 

ঈদের আনন্দে সবাই যখন মাতোয়ারা, তখন হাদিসুরের গ্রামের বাড়ি বরগুনার বেতাগীতে চলছে মাতম। স্বজনদের আহাজারিতে এখনো শোকে স্তব্ধ গোটা বাড়ি।

হাদিসুর নেই। সুনসান নীরব গোটা বাড়ি। থেমে থেমে ভেসে আসে আদরের ছেলেহারা মায়ের আহাজারি। কিছুতেই থামছে না তাঁর কান্না। দুই মাস আগে মারা যান হাদিস। তবু মাতম কমেনি। বরং ঈদের আগমন যেন বেদনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।

 

হাদিসকে ছাড়া যেন কোনো কিছু কল্পনা করা যেত না। আনন্দ-উৎসবে সবকিছুতেই ছিল তাঁর ছোঁয়া। এখন সেই পরিবারে ঈদুল ফিতরে নেই কোনো আনন্দের ছোঁয়া।

নৌ প্রকৌশলী হাদিসুর রহমানের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে। তিনি ওই এলাকার নাদেরিয়া মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।

 

গত ২ মার্চ ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ রকেট হামলার শিকার হলে গোলার আঘাতে নিহত হন হাদিসুর রহমান। গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, বড় এক বোন ও ছোট দুই ভাইসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন রয়েছে হাদিসুরের। প্রিয় স্বজনকে হারিয়ে এবার বিবর্ণ আর আনন্দবিহীন ঈদ পালন করবেন তাঁরা।

 

হাদিসুরের ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স জানান, প্রতি বছর ঈদ আসলে পরিবারের সবাইকে পছন্দের অনুযায়ী পোশাক কিনে দিতেন হাদিসুর। এবার ঈদে বাড়িতে এসে বিয়ে করার কথা ছিল তাঁর। এবার ঈদে সবাই আছে কিন্তু নেই শুধু তাঁর ভাই। রমজান মাস চলে গিয়ে ঈদ আসছে এখন ভাই না থাকায় আনন্দ সব যেন মাটি হয়ে গেছে তাঁদের।

 

শুক্রবার সকালে ঈদের প্রস্তুতি জানতে কদমতলায় হাদিসুরের গ্রামের বাড়িতে যায় এই প্রতিবেদক। বাড়িতে গিয়ে হাদিসুরের কথা মনে করিয়ে দিতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন হাদিসের মা রাশিদা বেগম। শোকার্ত মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা।

 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘হাদিস ঈদে বাড়িতে আসলে আমাদের সবার জন্য কেনাকাটা করত। সবার সঙ্গে একসঙ্গে ঈদ করত। এবার ঈদে আমাকে আর কেউ কাপড় কিনে দেবে না। কেউ আর দোয়া চাইবে না। আমাদের ঈদ আনন্দ হাদিসের সঙ্গেই শেষ হয়ে গেছে।’

 

হাদিসের মা আরও বলেন, ‘হাদিসুরের কুলখানির আগে সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ১ লাখ টাকা, সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন এবং বরগুনার পুলিশ সুপার ১৫ হাজার টাকা করে দিয়েছিলেন। তবে ঈদ উপলক্ষে এখনো কেউ কোন সহযোগিতা করেননি। তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে কীভাবে আমাদের ঈদ হবে সেই চিন্তাই করি এখন।

 

পুরো পরিবারের কারও চেয়ে কারও কষ্ট-বেদনা কম নেই। বাবাও যেন মেনে নিতে পারছেন না ছেলে হারানোর শোক। ছেলের কথা মনে করিয়ে দিতে কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যান বাবা আব্দুর রাজ্জাক।

 

ঈদ উল ফিতরের এমন আনন্দঘন মুহূর্তে হাদিস নেই, ভাবতেই পারছেন না তিনি। বাবা-ছেলের নানা সুখস্মৃতি জড়িয়ে আছে বিগত বছরের ঈদগুলোতে। হাদিস নেই তো ঈদও নেই। বরং আছে বুকজুড়ে একরাশ কষ্টের আর্তনাদ। অন্য স্বজনদের অবস্থাও কম নয়। সবার আনন্দই ফিকে হয়ে গেছে একমাত্র হাদিসের অবর্তমানে।

 

হাদিসুরের বাল্যবন্ধু ফিরোজ আলম বলেন, ‘হাদিসুর পুরো গ্রামের মানুষকে শোকাহত করে গেছে। তার ক্ষতিপূরণ হওয়ার